Read Time:8 Minute, 36 Second
এসসি-এসটি আইন পরিবর্তন করার প্রতিবাদে কলকাতার রাজপথে মহামিছিলের ডাক দিল বিভিন্ন দলিত-আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সংগঠন
নিজস্ব সংবাদদাতা, শিয়ালদহ: দেশজুড়ে সংখ্যালঘু মুসলিম ও দলিতদের উপর খুন, ধর্ষন ও বিভাজনের রাজনীতি ফলে অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এসসি-এসটি আইন পরিবর্তন করার প্রতিবাদে কলকাতার রাজপথে মহামিছিল করার ডাক দিল বিভিন্ন দলিত-আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সংগঠন। বুধবার শিয়ালদহ স্টেশনের কাছেই ড. বিধান চন্দ্র রায় অডিটোরিয়ামে এসসি-এসটি, ওবিসি ও সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা বিশেষ সেমিনার করেন।
দলিত নেতা সমীর কুমার দাসের নেতৃত্বে এদিন পশ্চিমবঙ্গের ২৩ টি জেলার এসসি-এসটি, ওবিসি ও সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা বৈঠক করলেন। সর্বভারতীয় রেলওয়েজ এসসি-এসটি এ্যাসোসিয়েশনের বেশ কিছু সদস্য উপস্থিত ছিলেন এই আলোচনা ও সেমিনারে।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার স্থায়ী বাসিন্দা তথা সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহঃ কামরুজ্জামান উপস্থিত হয়ে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। মহঃ কামরুজ্জামান দলিত ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঐক্যের পক্ষে বিশেষ বার্তা দেন। ইতিপূর্বে মহঃ কামরুজ্জামান ও মতুয়াদের নেতৃত্বে সম্প্রীতি উত্তর ২৪ পরগনার শিয়ালদহ হাসনাবাদ শাখার হাড়োয়া রোডে রেল রোকো
কর্মসূচি পালন করা হয়। রেল রোকো কর্মসূচি চলাকালীন মহঃ কামরুজ্জামান বলেছিলেন, “দেশের বিজেপি সরকারের এসসি-এসটি আইন পরিবর্তন করার বিরুদ্ধে সারা দেশে যে গনআন্দোলন তৈরি হচ্ছে রেল রোকো কর্মসূচি তারই অংশ ছিল।” আগামী ২৮ এপ্রিল মহামিছিলে তিনি তাঁর সংগঠনের পক্ষ থেকে কয়েক হাজার সদস্যকে সঙ্গে নিয়েই পথ হাঁটবেন এবং প্রতিবাদে সোচ্চার হবেন।
এদিন ২৩ টি জেলার দলিত ও সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে বক্তব্য রাখার সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দলিত-সংখ্যালঘু মানুষের উপর পরিকল্পিত যে হামলা হচ্ছে তার তীব্র প্রতিবাদ জানান সবাই। কলকাতারর রাজপথে মহামিছিলে হাজার হাজার মানুষ কি ভাবে কোথা থেকে আসবেন সেই বিষয় নিয়েও আলোচনা হল এদিন। সংবিধান বাঁচাও সমিতির পক্ষে এদিন ২১ জনের কোর কমিটি গঠন করা হয়। দেশ জুড়ে দলিত ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরা যারা অন্যায় করেছে সর্বত্র সেই সব দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুললেন আলোচকবৃন্দ।
দলিত নেতা সমীর কুমার দাস বললেন, “এসসি-এসটি আইন পরিবর্তন বিল রুখে দিক কেন্দ্র সরকার। এ ব্যাপারে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে কেন্দ্র সরকারকে। আর তা না করলে সারা দেশে দলিত সংখ্যালঘু ঐক্যের বৃহৎ আন্দোলনের সম্মুখীন হতে হবে কেন্দ্র সরকারকে। বাস্তবিক মোদী সরকার একটা জনবিরোধী সরকারে পরিনত হয়েছে এই সরকারের পতন ঘটাতে আমারা বদ্ধপরিকর। পাশাপাশি আমাদের পশ্চিমবঙ্গ সরকার সুপরিকল্পিত ভাবে অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ করে এসসি-এসটি-ওবিসি ও রিলিজিয়াস মাইনোরিটিদের বঞ্চিত করছে। আমরা তারও প্রতিকার চাই। আমরা এই অন্যায় কাজেরও তীব্র প্রতিবাদ জানাব ২৮ এপ্রিল।”
উদার আকাশ পত্রিকা ও প্রকাশনের সম্পাদক ফারুক আহমেদ দলিত ও সংখ্যালঘুদের সঙ্কট নিয়ে গবেষণা করছেন। সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ফারুক আহমেদ। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত হয়ে ফারুক আহমেদ দলিত ও সংখ্যালঘুদের কাছে আবেদন করেন সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নিন। কেউ কারও অধিকার পাইয়ে দিতে পারে না।
নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার সংগ্রামে সামিল হওয়ার আহ্বান রাখেন ফারুক আহমেদ। তিনি আরও বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষার বেহাল দসার পরিবর্তন করতে অভিলম্বে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। মাদ্রাসায় এখন দলিত ও সংখ্যালঘু মুসলিমরাই বেশি পড়েন বলেই কি সরকারের এতো অবহেলা? শিক্ষক নিয়োগে অনিহা? রাজ্য সরকার অনুমেদিত ৬১৪ টি মাদ্রাসায় ৭০ শতাংশ শিক্ষক নেই। মাদ্রাসা শিক্ষা আজ বিশ বাঁও জলে চলে যাচ্ছে। তবুও সরকারের চোখে অবহেলিত মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা। কোর্টে কেস চলছে এই অজুহাতে হাত গুটিয়ে বসে আছে সরকার পক্ষ। এই অজুহাত আমরা আর শুনতে চাই না।
বিশ্ববিদ্যালয় সহ সমস্ত চাকরিতে রোস্টার মেনেই এসসি-এসটি-ওবিসি-“এ” এবং ওবিসি-“বি” চাকরি প্রার্থীদের চাকরি সুনিশ্চিত করতে হবে।” ফারুক আহমেদ আরও বললেন, “রাজ্যের যোগ্য সংখ্যালঘু ও দলিত আধিকারিকদের সব গেরেজ পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের বর্তমান সময়ে ২৩টি জেলায় চোখ রাখলে দেখতে পাই কোনও ডিএম ও এসপি বা কমান্ডিং পোস্টে তেমন কাউকে বসানো হয়নি? চাকরিরত যেসব যোগ্য সংখ্যালঘু ও দলিত আধিকারিক আছেন, তাঁদেরকে কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে? এই বৈসাম্যও দূর করতে হবে। ২৮ এপ্রিল কলকাতায় দলিত ও সংখ্যালঘুরা প্রতিবাদে মিছিলে সামিল হয়ে বিশেষ বার্তা দিতে হবে।”
রেডরোডের নিকট ড. বি আর অম্বেদকর মূর্তির কাছে মহামিছিল এসে মিশবে এবং ওখানেই মহা সমাবেসে হবে। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের টনক নড়বেই, এই আশা রাখলেন বৈঠকে আগত দলিত ও সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দ।
সমস্ত দলিত ও এসসি-এসটি-ওবিসি নেতৃবৃন্দ মূল্যবান বক্তব্য রাখেন এবং গঠোনমূলক আলোচনাও করলেন এদিন মহামিছিল সফল করতে হাজার হাজার লিফলেট, ফেক্লেস ও পোস্টারে ভরে উঠছে গোটা রাজ্য।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রেলার জোনাল প্রেসিডেন্ট সি কে রাম, কঙ্কন গঁড়ি, অতিরিক্ত সচিব এল কে হেমব্রম, সুচেতা গোলদার, দলিত নেতা সজল কুমার মল্লিক, স্বপন হালদার, বীরেন মাহত, বাসুদেব মন্ডল, পীযুজ কান্তি গায়েন, তপন কুমার মজুমদার, নিখিল বিশ্বাস, গৌতম রায়, ননী গোপাল মন্ডল, লক্ষ্মী রজক, সঞ্জয় রাম সহ কয়েক শতক দলিত ও সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দ।
Advertisements