রাজ্যসরকার মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলক স্বতন্ত্র জায়গায় এই আওয়াজ তুললেন নবচেতনার সদস্যরা
বিশেষ প্রতিবেদক
রাজ্যসরকার মুর্শিদাবাদে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলক স্বতন্ত্র জায়গায় মুর্শিদাবাদ জেলাবাসী এই আওয়াজ তুললেন “নবচেতনা”র আহ্বানে প্রথম জেলা মিটিং-এ। নবচেতনার সকল সদ্যদের একান্ত দাবী ‘কে এন কলেজ’ নয় মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে হবে লালবাগ বা রেজিনগরে। “নবচেতনা”র সদস্যরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছেন জেলাবাসীর আবেগকে মর্যাদা দিয়ে জেলার স্বতন্ত্র জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে আপনি এগিয়ে আসুন।
নবচেতনার সেন্ট্রাল কমিটির প্রেসিডেন্ট ও মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাক্তন পুলিশসুপার বর্তমানে রাজ্য পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ডিআইজি ড. হুমায়ুন কবীরও তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরললেন “জেলার কল্যাণে ও আধুনিক শিক্ষা প্রসারে মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা উচিত লালবাগে। মুর্শিদাবাদ জেলার সেন্ট্রাল জায়গা হল লালবাগ।”
“নবচেতনা” মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির গঠনের আগে সেন্ট্রাল কমিটির প্রেসিডেন্ট ড. হুমায়ুন কবীর সবিস্তার বললেন, “নবচেতনা” একটি প্লাটফর্ম যা সৃষ্টির উদ্দেশ্যগুলি হল।
১. মুসলিম যুব সম্প্রদায় ও সার্বিকভাবে মুসলিম সমাজের মধ্যে শিক্ষার উন্নয়ন ঘটানো। আমরা ধর্মীয় শিক্ষার বিরুদ্ধে নই, বরং যুব সমাজের মধ্যে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এর অপরিহার্যতা আমরা স্বীকার করি। কিন্তু মুসলিমদের সামাজিক ক্ষেত্রে ও ব্যক্তিজীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা। আমাদের এই প্লাটফর্মের উদ্দেশ্য হল মুসলিম ছাত্র/যুব সম্প্রদায়কে সেই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা ও উদ্বুদ্ধ করা।
২. লক্ষ্য করা গেছে যে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজের একাংশ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক অপরাধ, বিভিন্ন বে-আইনি কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের এই সব মন্দ ক্ষেত্র থেকে বিরত রাখার আপ্রাণ প্রচেষ্টা করা।
৩. আরো দেখা যাচ্ছে যে, মুসলিমরা ভবিষ্যত বিষময় ফলাফলের কথা চিন্তা না করেই ব্যাপকভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ, রাজনৈতিক হানাহানি এবং অন্য অনেক অবৈধ কাজে নিজেদের জড়িয়ে ফেলছে। মুসলিম সমাজে এর ফল হচ্ছে মারাত্মক। অনেক মুসলিম এতে প্রাণ হারাচ্ছে, অনেকে আহত হচ্ছে, আবার অনেকেই মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে যাচ্ছে, যার প্রত্যক্ষ কুফল সেই মুসলিম পরিবারগুলিকে এবং সার্বিকভাবে মুসলিম সমাজকে ভুগতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করবো তাদের এই খারাপ পথ ও পন্থাগুলির কুফল সম্পর্কে বুঝিয়ে সুপথে ফিরিয়ে আনতে।
৪. আমরা আন্তরিকভাবে মুসলিম যুবসমাজের জীবনের মানোন্নয়নের প্রচেষ্টা চালাবো।
৫.আমরা কঠোরভাবে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখে এবং অন্য সমস্ত জাতি,ধর্ম, বর্ণের সব মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখে সহনশীলতার মহান আদর্শ বজায় রাখবো।
৬. আমরা কখনো কারো প্রতি ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক একদেশদর্শীতা দেখাবো না।
৭. এককথায়, আমরা কখনোই সমাজের কারো প্রতি খারাপ মনোভাব পোষণ করবো না।
৮. আমাদের লক্ষ্য হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় সমাজে টিকে থাকার পথ অনুসন্ধান,অনুসরণ এবং সরকারি ক্ষেত্রে যে সব সুযোগ সুবিধা আছে সেগুলি সম্বন্ধে কওমের সকলকে সচেতন করা।
৯. আমরা চেষ্টা করবো ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা ও সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার।
১০. আমাদের এই প্লাটফর্ম আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষকে সময় সময় দেশের উন্নয়নের ও অগ্রগতির হালহকিকত সম্পর্কে অবগত করে এবং এ বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের এগিয়ে যাবার পন্থা অনুসন্ধান করবে।
১১. সমস্ত ধরণের মুসলিম সংগঠন, সে শিক্ষা, সমাজ, ধর্মীয় বা ধর্মনিরপেক্ষ যে কোনো ধরণের-ই হোক না কেন, তাদের সঙ্গে যোগসুত্র গড়ে তোলা।
আমাদের লক্ষ্য হবে বেশি সংখ্যক মুসলিম সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো।
যদি আমরা সকলে ঐক্যমত হই এবং কাজ করি, তাহলে ভবিষ্যতে সমাজের এই দুর্বল শ্রেণির কাছে পৌঁছে তাদের তুলে আনতে পারবো।
মুসলিমদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে এবং মুসলিম সমাজের উন্নয়নের জন্য আমরা এমন একটি প্লাটফর্মের প্রয়োজনীতা অনুভব করেছি যাতে আমরা এই সমাজের উন্নয়নের জন্য আমাদের দাবী-দাওয়া সমন্বিত জোরালো আওয়াজ তুলতে পারি। কিন্তু আমাদের সদস্যদের সদা সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে যে আমরা অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি যেন কোনোরূপ ঘৃণা বা বিদ্বেষ পোষণ না করে ফেলি। সকলের প্রতি আমাদের বিনম্র ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আর অন্য যে বিষয়টি আমাদের বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে তা হল, আমরা দেশের আইন কে মর্যাদা ও সতর্কতার সঙ্গে মেনে চলবো।
আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে আমরা বিনীত ও বিনম্রভাবে এগিয়ে যাবো। এই বিনীত-বিনম্র কিন্তু দৃঢ় পদক্ষেপই আমাদের সাফল্য লাভের পথ হয়ে উঠবে।
সকলকে ধন্যবাদ সহ ড.হুমায়ুন কবীর। “নবচেতনা” মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির মিটিং সার্থক করতে মূল্যবান বক্তব্য রাখলেন সেন্ট্রাল কমিটির প্রেসিডেন্ট ড. হুমায়ুন কবীর।
“নবচেতনা”র সেন্ট্রাল কমিটির আহ্বায়ক ফারুক আহমেদ সংযোজন করলেন।
এই মুহূর্তে বাংলার ২৩ টি জেলায় “নবচেতনা” মানুষের কল্যাণে যে সব বিষয় নিয়ে কাজ করবে।
১. ল সেল (আইনি সহায়তা দান)।
২. মেডিক্যাল সেল (চিকিৎসা সহায়তা দান)।
৩. শিক্ষা সেল (আধুনিক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে সহায়তা)।
৪. কেরিয়ার কাউনসেলিং সেল (চাকরি পাওয়ার জন্য বা জীবিকায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য সুপরামর্শ দিয়ে সহায়তা)।
৫. সোশাল জাস্টিস সেল (সামাজিক ন্যায়বিচার পেতে সহায়তা)।
৬. প্রোপাগান্ডা সেল (মত ও নীতি প্রচার সেল) ইত্যাদি।
সদস্যদের কাছে আমাদের উদ্দেশ্য চুড়ান্ত করার আগে মতামত আহ্বান করা হচ্ছে।
ফারুক আহমেদ আরও বলেন, আপনারা সকলেই অবগত আছেন ‘নবচেতনা’ একটি অরাজনৈতিক, অসম্প্রদায়িক ও সমাজকল্যাণকারী সংস্থা।
১৯ আগস্ট ২০১৮ মুর্শিদাবাদ জেলায় ‘নবচেতনা’ সদস্যদের নিয়ে প্রথম মিটিং ডেকেছি “বহরমপুর মোহনা বাসস্টান্ডের সেমিনার হলে” দুপুর ২ টোর সময় নবচেতনা মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটি গড়তে।
মুর্শিদাবাদ জেলার সকল ‘নবচেতনা’র সদস্যদের মধ্যে অনেকেই এসেছিলেন এবং সফল ভাবেই মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটি গঠন করা হল।
মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটি এবার ‘নবচেতনা’র ব্লক ও মহাকুমা কমিটি গড়তে মিটিং ডাকবে এবং সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাবে।