পশ্চিমবঙ্গে ৮২ টির মতো স্বশাসিত সংস্থার কমান্ডিং পোস্টে কোনও মুসলিম নেই মমতা সরকারের আমলে চরম বঞ্চনার ছবি উঠে এলো
বিশেষ প্রতিবেদক
পশ্চিমবঙ্গে ৮২ টির মতো স্বশাসিত সংস্থার কমান্ডিং পোস্টে কোনও মুসলিম নেই মমতা সরকারের আমলে চরম বঞ্চনার ছবি উঠে এলো।
দলিত ও অনগ্রসর শ্রেণির এসটি, এসসি এবং ওবিসি-এ এবং বিশেষ করে ওবিসি-বি মুসলিমদের চরম বঞ্চনা করে চাকরি ক্ষেত্রে এবং সর্বত্র সংরক্ষণনীতি না মেনে চাকরি দেওয়া হচ্ছে। ওবিসি-এ এবং ওবিসি-বি মুসলিমরাই সব থেকে বেশি বঞ্চিত হচ্ছে। এর প্রতিকার চাইতে দলিত ও এসটি, এসসি ও মুসলিমরা এবার পথে নামছেন ৬ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার দুপুরবেলাতে। “সংবিধান বাঁচাও সমিতি”র ডাকে সমীর কুমার দাস ও ফারুক আহমেদ জানালেন ৬ ডিসেম্বর হাজার হাজার মানুষ পথে নামবেন সংহতি দিবস পালন করবেন এবং নিজেদের প্রাপ্য অধিকার বুঝে নেওয়ার জন্য আওয়াজ তুলবেন।
ইতিপূর্বে কলকাতার রাজপথে মুসলিমদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিশাল সমাবেশ হয়ে গেল। তিন অক্টোবর ও ২৮ এপ্রিল বিশাল সমাবেশ দেখেও সরকার এই বঞ্চনার প্রতিকার করতে এক চুলও সচেতন হয়নি। তৃণমূল নেতৃবৃন্দকে ভাবতে হবে এবং মূল সমস্যার প্রতিকার করতে এগিয়ে আসতে হবে। কলকাতার রাজপথে মুসলিমদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিশাল সমাবেশ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে অবশ্য মুখ খুললেন রাজ্যসরকারের অন্যতম মুসলিম মুখ তথা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
তিনি বুঝতেই চাইছেন না মুসলিমরা তৃণমূল কংগ্রেসের উদাসীন কার্যকালাপে দিন দিন হতাশ হয়েছেন। বিশাল সমাবেশে মূল দাবি গুলোকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে এবং বিজেপির ভয় দেখানো হচ্ছে। চারিদিকে মিথ্যা প্রচার হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। কেউই বিভেদকামী শক্তির হাত শক্ত করছে না। মূল দাবি পূরণ ও সমস্যার সমাধান করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসুক।
আন্দোলনকারিরা কেউ বিজেপি করেন না তাঁরা রাজ্যসরকারকেই ভোট দিয়ে দুই দুবার মমতা সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে। এই সত্য ভুললে পাপ হবে। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেশিদিন মানুষের মন জয় করা যাবে না। এটা মনে রাখতে হবে। মুসলিমরা মমতা সরকার থেকে মুখ ফেরালে নতুন সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় আসবে।
বিশাল সমাবেশ শুধু ইমাম ভাতা নয় পুরোহিতদের ভাতা দেওয়ারও দাবি জানিয়েছিলেন ওই সমাবেশ থেকে, সমাজকর্মী ও উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ।
চলতি বছরের ৩ অক্টোবর ভারতের কলকাতার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে বিশাল সমাবেশের ডাক দিয়েছিল বিভিন্ন ইমাম ও মুসলিম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এই সমাবেশ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরর সরকারের কাছে একগুচ্ছ দাবি জানানো ছিল মূল উদ্দেশ্য।
‘ইমাম-মোয়াজ্জেমনদের ভাতা যথাক্রমে আড়াই হাজার এবং দেড় হাজার টাকা। এই ভাতা বাড়ানোর দরকার আছে। ইমাম-মোয়াজ্জেমনদের বাসস্থান তৈরী করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি’, বলেছিলেন, ফারুক আহমেদ “সর্বভারতীয় নবচেতনা”র আহ্বায়ক। তিনি ওই সমাবেশের একজন অন্যতম আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
হায়দরাবাদে ইমাম সাহেবদের মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি। ইদের আগে ৫০ হাজার করে বোনাসও দেওয়া হয়।
ওই দিন মাদ্রাসাগুলোতে সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করা, আরো সাহায্য প্রদান করা এবং আন এডেড মাদ্রাসা গুলোর অনুমোদন দেওয়ার আবেদনসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে একটি স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য তারা তৈরী ছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সমাবেশের রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ ভারতের লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে আসছে। মমতা ব্যানার্জির কাছে মুসলমান ভোট খুব জরুরী। কারণ পশ্চিমবঙ্গের ৩০ শতাংশেরর বেশি ভোটার মুসলমান। বিজেপি বিরোধিতা করার কারণে মমতা মুসলিম সম্প্রদায়ের বিশ্বাস অর্জন করেছেন এবং ২০১১ সালের পর থেকে একের পর এক নির্বাচনে তার সাফল্যের বড় কারণ মুসলমান ভোট।
‘গ্রামের দিকে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের কথার অনেক গুরুত্ব। মমতা নিশ্চয়ই এই সমাবেশ থেকে ওঠা দাবিগুলো পূরণের চেষ্টা করবেন’ বলে জানান ফারুক আহমেদ।
এক রাজনৈতিক পর্যবক্ষেক তিনি আরো বলেন, যেহেতু মুসলমান ভোটের গুরুত্ব অপরিসীম, তাই হয়ত নির্বাচনের আগে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এই সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে।
ফারুক আহমেদ তাঁর মূল্যবান বক্তব্যে আরও বললেন, সামনে ২০১৯ লোকসভা ভোট বাংলা থেকে যোগ্য ১৪ জন মুসলিমকে লোকসভার প্রার্থী করতে হবে। তাঁদের জিতিয়ে সাংসদ করার দায়িত্ব নিতে হবে মমতা সরকারকে। বাংলার নাগরিক সমাজ এতে দারুণ খুশি হবেন।
আর ২০২১ বিধানসভাতেও যোগ্য ৯৫ জন মুসলিমকে প্রার্থী করতে হবে। যোগ্য মুসলিম বিধায়কদেরকে জিতিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দফতরে মন্ত্রীও করতে হবে।
রাজ্যসভায় ৫ জন মুসলিমকে পাঠাতে হবে। শতাংশের হিসেবে এই দবী ফারুক আহমেদ রাখলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।
এছাড়াও মহা সমাবেশে ফারুক আহমেদ ইমামদের সঙ্গে রাজ্যের পুরোহিতদেরও ভাতা দেওয়ার দাবী জানালেন।
বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও “নবচেতনা”র আহ্বায়ক ফারুক আহমেদ আরও বললেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার সহ সমস্ত রাজনৈতিক দল অনগ্রসর মানুষের কল্যাণে এগিয়ে এসে সঠিক পদক্ষেপ নিক।
বাংলার জনপ্রতিনিধি হিসেবে মুসলিমদের সর্বক্ষেত্রে সম পলিসির বাস্তব রূপ দিয়ে সম সুযোগ দিক। রাজ্যের সরকার পরিচালিত মন্ত্রীসভায়, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত দফতরেই মুসলিম প্রতিনিধিদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদে না দিয়ে চরম বঞ্চিত করছে মমতা সরকার। এর অবসান চাইছে বাংলার মুসলমান ও অগ্রসর সমাজ।
আজ পর্যন্ত কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম
অধ্যাপককে কেন উপাচার্য করা হল না? ব্যতিক্রম আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া।
ডিজি বা পুলিশ কমিশনারও করা হয়নি। এবার ডিজি ও পুলিশ কমিশনার করা হোক মুসলিমদের মধ্য থেকে যোগ্য পুলিশ আধিকারিকদেরকে। গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে বা অন্য রাজ্যে যদি হতে পারে তবে বাংলাতে নয় কেন? এই সাম্প্রদায়িক মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে।
মমতা সরকারের রাজত্বকালে রাজ্যের ২৩ জেলাতে কোনও মুসলিম আধিকারিক এসপি বা ডিএম নেই। শুধমাত্র ঝাড়গ্রামের ডিএম আয়শা রানি। রাজ্যের প্রশাসনে এবং সরকারের কমান্ডিং পোস্টে কোনও মুসলিম আধিকারিক নেই। এই বৈশম্য দূর করতে মমতা সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
মমতা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে মুসলিমদের অবদান সব থেকে বেশি তবু তাদের কেন গুরুত্ব নেই। এই চরম বঞ্চনার অবসান চাইছেন বাংলার মানুষ।
কলকাতা শহরে আরও ১৯ টি মুসলিম গার্লস ও বয়েজ হোস্টেল গড়ে তুলতে মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্যোগ নিতে হবে। সংখ্যালঘু দফতর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের হাতে রেখেছেন।
চারিদিকে আওয়াজ উঠেছে সংখ্যালঘু কল্যাণে বাংলার মমতা সরকার চরম ভাবেই ব্যর্থ হয়েছে। যার প্রভাব পড়বে আগামী লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে। এখনও সময় আছে মমতা সরকার সজাগ না হলে আগামীতে বামাদের মতো হাল হবে এই সরকারের। তাই এখনও সমায় আছে সকলের জন্য সম পলিসি নিয়ে উন্নয়ন করার। সম সুযোগ ও সম পলিসির বস্তব রূপান করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সঠিক পদক্ষেপ নিক।
ফারুক আহমেদ আরও বললেন রাজ্যে ৮২ টির মতো স্বশাসিত সংস্থার কমান্ডিং পোস্টে কোনও মুসলিম নেই এই সরকারের আমলে, আমরা তা ভাবতেও পারি না।
রাজ্যের ৭ টি পুলিশ কমিশনারেট আছে কোথাও মুসলিম পুলিশ আধিকারিককে পুলিশ কমিশনার করা হয়নি। মমতা সরাকারের আমলে সব থেকে মুসলিমরাই বঞ্চিত হচ্ছে সর্বত্র। চাকরি পাওয়া থেকে সরকার পরিচালিত সমস্ত দফতর ও প্রশাসনে এখন দেখছি মুসলিমরা পরিত্যক্ত। কেন এমন চিত্র বারবার উঠে আসছে।
সবাই জানেন এখন বেসরকারি উদ্যোগে কিছু ছাত্র-ছাত্রী ভাল ফল করে এবং সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতায় সফল হয়ে মূল স্রোতে উঠে আসছেন।
মিশন স্কুল গড়ে এই সফলতা অর্জনের মুখ দেখিয়েছেন বাংলার প্রখ্যাত সমাজসেবী মোস্তাক হোসেন। তাঁকে পদ্মশ্রী পুরস্কার দেওয়া উচিত বলে মনে করি। এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকার মোস্তাক হোসেনকে কোনও সম্মাননা দিয়ে সম্মানিত করতে পারে নি এটা আমাদের বড় লজ্জিত করে। বলছিলেন ফারুক আহমেদ।
অবশ্য আমাদের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, মুসলিমদের জন্য তিনি সব কাজ করে দিয়েছেন। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের সবার প্রিয় দিদিকে বলছি, একটু সজাগ হয়ে প্রকৃত কল্যাণকর কাজ করে মানুষের মন জয় করুন। নইলে ভোটব্যাঙ্ক ঘুরে যেতে বেশি সময় লাগবে না।
ওবিসি-এ এবং ওবিসি-বি সকল চাকরি প্রার্থীদের বঞ্চিত না করে প্রকৃত যোগ্যদের চাকরি দিন। ওবিসি-এ এবং ওবিসি-বি সকল চাকরি প্রার্থীদের বঞ্চিত করার চক্রান্ত বন্ধ করতে উদ্যোগ নিন।
বিজেপি জুজু দেখিয়ে সচেতন মুসলমানদের আর বোকা ও লেঠেল বাহিনি বানানো যাবে না এটা মনে রাখতে হবে।
আমরা বাংলাতে শান্তিতে থাকতে চাই তাই কাকে ভোট দেব তা আমরা ঠিক করব।
বিভেদকামী শক্তিকে রুখতে আমরা বদ্ধপরিকর।
ফারুক আহমেদ বললেন, রাজনৈতিক হিংসাতে বহু মুসলিম খুন হচ্ছেন এই রাজনৈতিক খুন বন্ধ করুন। পঞ্চাশেত নির্বচনে জয়ী মুসলিম প্রার্থীদের বোর্ড গঠনে গুরুত্বপূর্ণ পদে দেওয়া হচ্ছে না। সর্বত্র এই অভিযোগ উঠে আসছে। এর প্রতিকার করুন নইলে আগামী দিনে মুসলিম ভোট সরে যাবে আপনার পাশ থেকে। আমরা মালদা, উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলী থেকে বাঁকুড়া সর্বত্র এক চিত্র দেখছি। এটা অশুভ প্রয়াস।
দলিত ও সংখ্যালঘু কল্যাণে তরুণ তুর্কি নেতা ফারুক আহমেদ মহা সমাবেশ ও ধিক্কার মিছিলে জোরাল বক্তব্য রাখেন।
দলিত নেতা সমীর কুমার দাস বললেন, ৬ ডিসেম্বর কলকাতার রাজপথে হাজার হাজার দলিত ও সংখ্যালঘু আবার পথে নামবেন এই চরম বঞ্চনার অবসান ঘটাতে।
ফারুক আহমেদ সংবাদিকদের বলছিলেন, আপনারা জানেন চল্লিশ লক্ষ মানুষ রাতারাতি রাষ্ট্রহীন, নিজের পাড়ায় নিজের বাড়িতে শরণার্থী। তাদের নাম নেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জিতে। তাঁরা কোথায় যাবেন, কোন দেশে যাবেন কেউ জানে না। এই ভয়ঙ্কর অমানবিক ঘটনার জন্য যাঁরা দায়ী তাঁদের জবাব দিতে হবে। এবার সময় হয়েছে পথে নামার। রাস্তাতেই একমাত্র রাস্তা। তাই রাস্তাতে নেমেই প্রতিবাদ জানাতে কলকাতার মেয়ো রোডে হাজার হাজার মুসলিম জোটবদ্ধ হয়ে এর প্রতিকার চেয়ে সোচ্চার হলেন মহা সমাবেশ থেকে।
মহান ভারতকে পবিত্র রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। ওরা কারা মানুষ নয় মানুষের মতো দেখতে অন্য কিছু। বিভেদকামী শক্তিকে রুখতে হবে। আমাদের দেশকে রক্ষা করতে আমরা বদ্ধপরিকর।