দরদী মানবতা আর নীরব কর্মবীরের গুণাবলীর মেলবন্ধন আইপিএস নিজাম শামিম – সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে গরিবের আলাদিনের প্রদীপ

0
1133
IPS Nizam Shamim
IPS Nizam Shamim
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:8 Minute, 42 Second

অবসরের পর অভাবী–মেধাবীদের কোচিং দিয়ে মানুষ গড়ছেন আইপিএস নিজাম শামিম
ফারুক আহমেদ 

কর্মজীবনে দক্ষতার সঙ্গে  সামলেছেন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। অবসরের পরও চালিয়ে যাচ্ছেন সমাজ গড়ার কাজ। তবে এখন ক্ষেত্রটা পাল্টেছে। এখন তিনি ব্যস্ত প্রান্তিকদের আলোর পথে পৌঁছে দিতে। এই লড়াইয়ে তাঁর আয়ুধ শিক্ষা। এ কাজ করতে গিয়ে অনেকের সাহায্য পেয়েছেন তিনি। আর তাই তো যাত্রাপথ হয়ে উঠেছে আরও মসৃণ। প্রাক্তন আইপিএস অফিসার মোহাম্মদ নিজাম শামিম এন্টালি বাজারের কাছে এক ফালি জায়গায় কোচিং ক্লাস চালাচ্ছেন। যেখানে অভাবী–মেধাবীদের ঘষেমেজে তৈরি করা হয় সরকারি পরীক্ষায় সফল হওয়ার জন্য। নামমাত্র টিউশন ফি নিয়ে।

১৯৯৫ সালে কাজ শুরু করেছিল এডুকেশনাল কোঅর্ডিনেশন কমিটি। প্রান্তিক শ্রেণীর পড়ুয়াদের লেখাপড়া শেখানোর উদ্দেশ্যে পথ চলা। কী করলে শিক্ষার মান আরও বাড়ানো যায়, তা জানতে এবং জানাতে বিভিন্ন স্কুলে ঘুরত ওই সংগঠন। সেইসঙ্গে যোগ হল অভাবী–মেধাবীদের বৃত্তি, সরকারি চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতি। যাতে অর্থের অভাবে মেধাবী পড়ুয়াদের লেখাপড়া ছেড়ে না–দিতে হয়। এবং তাঁরা জীবনে সাফল্য পায়। প্রথম দিক থেকেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মোহাম্মদ নিজাম শামিম। তবে তখন তিনি সরকারি চাকরি করছেন। ২০০২ সালে অবসর নেন। আগে ছিলেন সংগঠনের সভাপতি। এবার হলে সাধারণ সম্পাদক।

অবসরের পর নতুন কাজে লেগে পড়লেন।কী কাজ করে ওই সংগঠন?‌ মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের অভাবী–মেধাবীদের মেধাবৃত্তি দেয়। স্নাতক স্তরের বিজ্ঞান, ইংরেজি, অর্থনীতি, বাণিজ্য শাখার পড়ুয়ারাও মেধাবৃত্তি পান। চেষ্টা করা হচ্ছে আগামী বছর থেকে অন্য বিষয়গুলিও এই তালিকায় যোগ করার। বিজ্ঞানকে বেশি জোর কারণ সেখানে পড়ার খরচ তুলনামূলকভাবে অনেকটা বেশি। প্র‌্যাকটিক্যাল রয়েছে। এ জন্য অনেক টাকা লাগে। বিজ্ঞান পড়ুয়াদের জন্য বছরে ১০ হাজার টাকা করে মেধাবৃত্তি দেওয়া হয়। আর রয়েছে কোচিং। সরকারি অফিসার তৈরির আঁতুড়ঘর। এখানে যেভাবে ছেলেমেয়েদের প্রস্তুত করা হয়, তাঁরা যে কোনও সরকারি চাকরিতে সফল হতে পারেন। এমনই জানাচ্ছেন মোহাম্মদ নিজাম শামিম।

সাচার কমিটির রিপোর্টে সংখ্যালখু সম্প্রদায়ের শিক্ষার অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজনের বড়সড় ভাগ লেখাপড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। সেই থেকে তাঁরা ঠিক করেন, নতুন প্রজন্মকে আরও বেশি করে শিক্ষার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। একমাত্র লেখাপড়াই কোনও মানুষকে আরও সুন্দর জীবন উপহার দিতে পারে। সেই থেকে লড়াইয়ে ধার আরও বেড়ে গেল। এ যেন নতুন চ্যালেঞ্জ। সেখানে সরাকারি চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ৬ মাসের এক–একটি ব্যাচ। প্রতি সপ্তাহে ৪ দিন করে ক্লাস হয়। সব মিলিয়ে সপ্তাহে ১১টি করে ক্লাস। রয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষকেরা। খরচ ৬ হাজার টাকা। তবে সেই অর্থ একসঙ্গে না দিতে পারলেও কোনও সমস্যা নেই। ৩০ জুন থেকে নতুন ব্যাচ চালু হবে। চলবে ডিসেম্বর পর্যন্ত।

তাঁর কথায়, ‘‌ঠিকঠাক পড়লে, সময়কে ব্যবহার করলে যে কোনও প্রার্থী একবারের চেষ্টাতেই সফল হতে পারেন।’‌ এখন চেষ্টা চলছে আবাসিক–কোচিংয়ের। যাতায়াতের জন্য যাতে কোনও পড়ুয়াকে আর সময় খরচ না করতে হয়। সেইসঙ্গে পড়তে গিয়ে কোথাও কোনও অসুবিধে হলে সহজে তা মিটিয়ে নেওয়া যায়। তিনি জানান, আবাসিক–কোচিং খুব দরকার। পড়ুয়াদের অনেক সুবিধে হবে। তা তৈরির চেষ্টা চলছে। তবে তার জন্য জমির দরকার। চাকরি প্রার্থীদের আরও ভাল প্রস্তুতির জন্য নিয়মিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। থাকে আলোচনার বিশেষ ব্যবস্থা। উল্লেখ্য, এই প্রতিষ্ঠানে শুধু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য লেখাপড়ার সুযোগ করে দিয়েছে, এমনটা কিন্তু মোটেই নয়। এখানে সব স্তরের পড়ুয়াই রয়েছেন। তিনি নিজে ছিলেন ইতিহাস এবং ইসলামিক ইতিহাসের ছাত্র। মৌলানা আজাদ কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তা নিয়ে লেখাপড়া করেছেন। ইচ্ছে ছিল শিক্ষকতা করার। হয়ে গেলেন আইনরক্ষক। তবে শিক্ষা বিস্তার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারলেন কই!‌ একটা সময় নিজের কলেজেই নিখরচায় ইতিহাস পড়াতেন।

এখন নতুন প্রজন্মের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে দিনরাত কাজ করে চলেছেন। আপনি পড়ান না কেন?‌ তাঁর জবাব, ‘‌সংগঠনের প্রশাসনিক কাজে সময় বেশি দিতে হয়। তাই সে সুযোগ নেই।’‌ তা ঠিক, এটাও তো সমান গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অর্থের জোগাড় না হলে তো কোনও কাজই এগোয় না। তাঁর মতে, ‘‌নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া যদি ঠিকঠাক পরামর্শ পায়, তাঁরা অনেক দূর এগোবেন। আমি চাই তাঁরা উচ্চপদের অফিসার হোন। তা হলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে পারবেন। সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা পাবে। তাঁরা নিজেরা তো ভালভাবে থাকতে পারবেনই, অন্য মানুষকেও সেই পথে নিয়ে যেতে পারবেন।’‌অনেক শিক্ষানুরাগী এই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কোনও প্রচার ছাড়াই। তাঁরা নিয়মিত সেখানে অর্থ দেন। আরও একটা উজ্জ্বল দিক হল এখান থেকে লেখাপড়া শিখে প্রতিষ্ঠিত হওয়া অনেকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছেন।

মোহাম্মদ নিজাম শামিমের ছেলে জাভেদ শামিম। তিনিও একজন আইপিএস অফিসার। মেয়ে সাবানা শামিম। তিনি মাদ্রাসা বোর্ডের সহ সেক্রেটারি। অবসরের পর টেনিস আর লেখাপড়া নিয়ে দিব্যি আছেন প্রাক্তন পুলিশকর্তা। ইতিমধ্যে নিজাম শামিম সাহেবের হাত দিয়ে বহু মানুষ জীবন চলার পথে নতুন বাঁচার মতো বাঁচার নতুন আকাশ পেয়েছেন। অনেকেই নিজাম শামিম সাহেবের কোচিং থেকে কোচিং নিয়ে  চাকরি পেয়ে সফল আধিকারিক হয়ে সমাজের কল্যাণে তারাও কাজ করছেন।

এডুকেশনাল কোঅর্ডিনেশন কমিটির ঠিকানা:‌ ২৪/‌১এ গিরিশচন্দ্র বসু রোড, কলকাতা–১৪।‌‌

About Post Author

Editor Desk

Antara Tripathy M.Sc., B.Ed. by qualification and bring 15 years of media reporting experience.. Coverred many illustarted events like, G20, ICC,MCCI,British High Commission, Bangladesh etc. She took over from the founder Editor of IBG NEWS Suman Munshi (15/Mar/2012- 09/Aug/2018 and October 2020 to 13 June 2023).
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD





LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here