দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতাগ্রহণের পর প্রথম ৫০ দিনে সাফল্যর খতিয়ান
আরো এগিয়ে যাওয়ার লক্ষে সরকার দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ
প্রকাশ জাভড়েকর
By PIB Kolkata
মোদী সরকার দ্বিতীয়বার ক্ষমতাগ্রহণের পর প্রথম ৫০ দিনে যেসব কর্মসূচী ও উদ্যোগ নিয়েছে তাতে ভারতকে এক নতুন উচ্চতায় পৌছে দেওয়া সম্ভব হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এই সময়ের মধ্যে প্রচুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এর থেকে এটা স্পষ্ট যে সরকারী কাজে কোন শৈথিল্য নয়, দক্ষতার সঙ্গে দ্রুত সব কাজ প্রশাসন করবে। নির্দিষ্ট লক্ষে পৌছাতে সরকার ২টি লক্ষমাত্রা নিয়েছে। প্রথমটি ২০২২ সালের মধ্যে অর্থাৎ দেশ স্বাধীন হবার ৭৫ বছরে আর ২০২৪ সাল, মানে যে বছরে এই সরকারের ৫ বছর হবে। বিজেপি যে সংকল্পপ্ত্র প্রকাশ করেছিল, এর মাধ্যমে তাও রূপায়িত হবে। আর সরকারের নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ উপকৃত হবেন।
প্রথম ৫০ দিনে দেখা যাচ্ছে সরকারের মূল লক্ষ হল দরিদ্র, কৃষক, শ্রমিকদের আরো ক্ষমতায়ন , সামাজিক সুরক্ষা এবং যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে আরো কাজের সুযোগ সৃষ্টি। আইন শৃঙ্খলার উন্নয়ন, ব্যবসায়ী, মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য জীবনযাত্রা সহজতর করা, বিনিয়োগের উপর গুরুত্ব আরোপ , ভারতীয় অর্থনীতিকে ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের সমতুল অর্থনীতিতে নিয়ে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন আজ এই সরকারের অন্যতম লক্ষ।
এখন ১৪কোটি কৃষকের সকলে পি এম কিষাণ সম্মান নিধি যোজনার আওতাভুক্ত হবেন। এর ফলে প্রতি বছর সব কৃষক ৬হাজার টাকা করে অর্থ সাহায্য পাবেন। সব কৃষক এখন থেকে পেনশন প্রকল্পের সুযোগও পাবেন। বিগত ৪০ বছর ধরে কৃষকদের মূল দাবী ছিল, তাঁরা যেন তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পান। এম এস স্বামীনাথন কমিটি এই মর্মে কৃষকদের ফসলের দাম নির্ধারণ করেছিলেন শস্য উৎপাদনের খরচ ও তার সঙ্গে আরো ৫০ শতাংশ বিক্রির সময় কৃষকদের পেতে হবে। মোদী সরকার বিগত ২ বছর ধরে এই বিষয়টি নিশ্চিত করছে। বর্তমানে ২৪টি ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়া হয় শস্য উৎপাদনের খরচ ছাড়াও তার সঙ্গে ৫০ শতাংশর বেশি অর্থ। আগামী ৫ বছরে কৃষকদের আর্থিক উন্নতির লক্ষে ১০ হাজার নতুন কৃষক সংগঠন গড়ে তোলা হবে, যারা ফসল উৎপাদনে নানা সাহায্য করবে। এছাড়া মৎস্য চাষেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যার ফলে ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হবে।
আগামী ৫ বছরে ঘরে ঘরে জল সরবরাহ পৌছে দেবার লক্ষে “জলশক্তি” র উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর জন্য প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন। সরকার এই কারণে পৃথক একটি জলশক্তি মন্ত্রক গঠন করেছে। সরকার বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে জল সংক্রান্ত বিবাদ মেটানোর লক্ষে নতুন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী চান, “জলশক্তি” একটি গণ সামাজিক আন্দোলন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করুক ।
অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত ৪০ কোটি শ্রমিকের জন্য নানা শ্রম আইনের পরিবর্তে চারটি শ্রম নীতি তৈরি করা হয়েছে। এইসংস্কারের ফলে বেতন ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের সব শ্রমিকরা যেন নিয়োগ পত্র ও সময়মতবেতন পান সেদিকে জোর দেওয়া হয়েছে। ইএসআই প্রকল্পে কর্মচারী এবং মালিক পক্ষের প্রদেয় অর্থের পরিমাণ হ্রাস করায়তাঁদের সুবিধের দিকটিতে নজর দেওয়া হয়েছে। এই প্রথমবার ছোট দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের জন্য পেনশন প্রকল্প চালুকরল মোদী সরকার। মধ্যবিত্তদের উপর করের বোঝা কমাতে, যাঁদের আয় ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত, অন্তর্বর্তী বাজেটে তাঁদেরকরের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। গৃহ নির্মাণের জন্য পণ্য পরিষেবা করের হার কমানো হয়েছে। যারা বাড়ি কিনছেন, তাঁদের লোন পরিশোধের হার হ্রাস ও সুদ ছাড়ের কথা বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছে।
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন বিল ছাত্রদের জন্য একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত, এর ফলে ভর্তির জন্য যেমন একটি অভিন্নপরীক্ষা ‘নিট’ চালু হয়েছে সেই ভাবে পাঠক্রমের শেষেও একটি অভিন্নপরীক্ষার সংস্থান থাকছে। এছাড়াও বেসরকারীকলেজগুলির মাইনে নেবার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম চালু করা হয়েছে।
দেশের অর্থনীতিকে ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের সমতুল অর্থনীতিতে উন্নীত করার ক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রয়োজন। বিদেশীএবং অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়াতে প্রথম ৫০ দিনে সরকার নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। অক্ষমতা ও ঋণখেলাপী নীতি ౼ ইন্সল্ভেন্সি এন্ড ব্যাঙ্করাপ্সি কোড জোরদার করা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে ৭০হাজার কোটি টাকা দেওয়া হবে। রুগ্ণ সংস্থাগুলিকে বিলগ্নীকরণ বা বন্ধ করে দেওয়া হবে। উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থার লক্ষে সড়ক, রেল, বন্দর, বিমানবন্দর, শিলপ করিডর, পণ্য পরিবহণ করিডর, জল মার্গ বিকাশ, উড়ান, প্রধান মন্ত্রী সড়ক যোজনার তৃতীয় পর্যায়ের মাধ্যমে সব পরিকাঠামো উন্নয়ণে মোদী সরকার আগামী ৫ বছরে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জম্মু কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অর্থসাহায্য বন্ধের দিকটি সফল ভাবে রূপায়িত করা হয়েছে। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জেলে পাঠান হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জম্মুকাশ্মীরের মানুষের আস্থা অর্জনের লক্ষে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই প্রথম বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৪০ হাজার স্থানীয় প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। দুর্নীতি দমনের উদ্দেশ্যে ২৭ জন উচ্চপদস্থ দুরনীতিগ্রস্থ আধিকারিককে চাকরি থেকে অপসারিত করা হয়েছে। বেনামী সম্পত্তিগুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিদেশে যে সব আর্থিক অপরাধীরা পালিয়ে গিয়েছিল, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অনেকের প্রত্যারপন প্রক্রিয়া চলছে। কারো কারো বিদেশের জেলে বন্দি থাকা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
মধ্যবিত্তদের জন্য এলপিজি গ্যাসের দাম সিলিন্ডার পিছু ১০০ টাকা কমানো হয়েছে। শীঘ্রই উপভোক্তা অধিকার বিল সংসদে আনা হবে। আন্তর্জাতিক সৌর জোট নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। পৃথিবী জুড়ে পঞ্চম বার আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদযাপন করা হল। ৫৮টি অচল আইন বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে বাতিল আইনের মোট সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। জাতীয় প্রতিরক্ষা তহবিল থেকে প্রধানমন্ত্রী স্কলারশিপ প্রকল্পের সুবিধে এখন থেকে জঙ্গি হানা বা নকশাল হামলায় নিহত রাজ্য পুলিশের শহিদ কর্মীদের ছেলেমেয়েরাও পাবে। এছাড়াও সশস্ত্র বাহিনীর আধিকারিকরা এধরণের অভিযানে শারীরিক ভাবে অক্ষম হয়ে পড়লে তাঁদের আর্থিক সাহায্যও এখান থেকে পাওয়া যাবে।
তাই প্রথম ৫০ দিনের কাজকর্মে বোঝা যাচ্ছে , সরকার আগামী ৫ বছরে দেশকে এক নতুন উচ্চতায় পৌছে দিতে বদ্ধপরিকর।
(লেখক তথ্য সম্প্রচার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন দপ্তরের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী)