বই পাড়ার ঐতিহ্য কি সঙ্কটের মুখোমুখি ?
শাক্য ঘোষ , কলকাতা :
বর্তমান যুগে নব মাধ্যমের আবির্ভাবে ইন্টারনেট মারফত বই সহজলভ্য হওয়ায় নতুন প্রজন্মের অনেক বইপ্রেমীই আর বইয়ের দোকান মুখো হয় না।পুরনো প্রজন্মের অনেকে আবার বই হাতে নিয়ে পড়াতেই বেশি উৎসাহী।এই নিয়েই সদ্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলায় স্নাতকোত্তর পাশ করা এক কৃতী ছাত্র উৎসব চৌধুরীর বক্তব্য –“এখন বিনা খরচে পি.ডি.এফ থেকে ডাউনলোড করে পড়া যায়।সব বই তো আর কিনে পড়া সম্ভব নয় অর্থের কারণে।’’পি.ডি.এফ থেকে ডাউনলোড করে বই পড়াতেই তিনি অধিক স্বচ্ছন্দ বলে জানিয়েছেন।আর এখানেই কি সিঁদুরে মেঘ দেখছে কলেজস্ট্রিট পাড়া সহ বই বিক্রির সাথে যুক্ত থাকা পেশার সমস্ত মানুষেরা?
এ প্রসঙ্গে অন্য এক পাঠকের মতে অ্যামাজন থেকে অনেক সস্তায় বই কেনা যায়।সেই সঙ্গে যাতায়াতের খরচ এবং বই বয়ে আনবার পরিশ্রমও এড়িয়ে যাওয়া যায়।
সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের সংবাদ বিদ্যার অধ্যাপক উৎসব চক্রবর্তী ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড অপেক্ষা হাতে বই পড়াতে বেশি স্বচ্ছন্দ হলেও তিনি নতুন প্রজন্মের ইন্টারনেট মারফত বই পড়ার প্রবনতাকে স্বাগত জানিয়েছেন।তাঁর মতে বাংলা বই এখনও নেট মারফত সহজলভ্য না হওয়ায় বাংলা বই বা বাংলা গল্পের বই বিক্রেতাদের ক্ষেত্রে এক্ষুনি চিন্তার কোনও কারন নেই।তবে ইংরেজী সাহিত্যের ক্ষেত্রে বই বিক্রির হার বোধহয় নিম্নমুখী হতে পারে।
এ বিষয়ে বই পাড়ার অস্তিত্বের সংকটের সমস্ত ধারণাকে নস্যাৎ করে দিয়ে দেজ পাবলিশার্সের মতে এখনই সঙ্কটে মুখোমুখি হওয়ার মতো কিছুই হয়নি।আগামী ৪০-৫০ বছরেও কলেজ স্ট্রীট অঞ্চল সঙ্কটে পড়ার মতো কোনও অবস্থায় পৌঁছাবে বলে মনে করেন না দেজ পাবলিশার্সের মালিক।তিনি বলেন “বিষয় ভিত্তিক বইয়ের সংখ্যা বাংলায় আগের থেকে বেশি এবং বিক্রির হারও যথাযথ।ইংরেজী সাহিত্যের ক্ষেত্রে কিন্ডেল যন্ত্রটি পাঠকের বই পড়ার ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্য দিলেও বই হাতে নিয়ে পড়ার প্রবণতা বিশেষ কমেনি।”
আর এক বই বিক্রেতার মতে প্রত্যেক পাঠকেরই বই ক্রয় করার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে।মানুষ নির্দিষ্ট পরিমান বই কেনার পরও অতিরিক্ত কিছু বই পড়তে চাইলে তখন তা ইন্টারনেট মারফত ডাউনলোড করে পড়ে,যে সুবিধা আগে ছিল না।তাই বই বিক্রির হার ইন্টারনেট বা কিন্ডেল যন্ত্রটির কারণে মোটেই কমেনি আর কমবেও না।
তাই বলা যেতে পারে যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের অভ্যাস বদলালেও বই পাড়া আছে পুরনো ছন্দে এবং আগামী দিনেও বই পাড়ার ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ থাকবে বলেই বিশ্বাস করেন অধিকাংশ বই বিক্রেতা ও বই পেশার সাথে যুক্ত থাকা মানুষেরা।