হীরক মুখোপাধ্যায় (১২ এপ্রিল ‘২০):- জনসচেতনতার প্রয়োজনে ‘নভেল কোরোনা ভাইরাস’ সৃষ্ট রোগ ‘কোভিড ১৯’ সম্পর্কে গান বেঁধে গায়ক সাজতে গিয়ে নিজেদের মূল কাজ ভুলে বসেছে রাজ্য পুলিশ ও রাজ্যের বিভিন্ন পুলিশ কমিশনারেট-এর আধিকারিক ও পুলিশ কর্মচারীগণ।
যদিও ঠিক কার নির্দেশে পুলিশ বল থানায় বসে জিডিআর, এফআইআর না লিখে বা তদন্ত ও অন্যান্য কাজ শিকেয় তুলে রাস্তায় রাস্তায় বা জনগণের দোরে দোরে হেঁড়ে গলায় গান গেয়ে মানুষের বিরক্তি উৎপাদন করছে তা জানা যায় নি।
যে প্রসঙ্গে পুলিশের নামে এরকম প্রতিবেদন লিখতে বাধ্য হতে হচ্ছে তা পড়লে বা শুনলে ভবানীভবন, নবান্ন বা বিভিন্ন পুলিশ কমিশনারেট-এর শীর্ষ কর্তাগণ শিউরে উঠবেন, লজ্জায় মুখ ঢাকতে বাধ্য হবেন।
উদাহরণ ১ :
এই মাসের ৬ তারিখ বারাসাত পৌরসভার ঘোলা কাছারী রোড-এর বাসিন্দা শুভ্র মজুমদার বারাসাত থানায় গিয়েছিলেন জনৈকা লিজা গাঙ্গুলী-র নামে একটা এফআইআর লেখাতে।
শুভ্রবাবু প্রমাণ সহ থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন, “লিজা গাঙ্গুলী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ছবি বিকৃত করে ও কিছু অশ্লীল উক্তি-র সহায়তায় তাঁর নিজস্ব ফেসবুক আইডি-তে পোস্ট করেছেন।”
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অন্তর্গত বারাসাত থানা শুভ্র মজুমদার-এর সেই আবেদনপত্রটা নাম-কা-ওয়াস্তে গ্রহণ করলেও আজ পর্যন্ত সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো জিডিআর বা এফআইআর নথিবদ্ধ করার সময় পাননি।
উদাহরণ ২:
বীজপুর থানার কাপা ডাকঘরের অধীন ধানকল-এর এক যুবতী তিথি গুপ্ত (নাম পরিবর্তিত) গত ১ সপ্তাহ ধরে বীজপুর থানায় চক্কর মারছেন একটা এফআইআর দায়ের করাবার জন্য, অথচ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত বীজপুর থানা শুধুমাত্র অভিযোগ নিয়েই ক্ষান্ত হয়েছে অথচ কোনো জিডিআর বা এফআইআর নথিবদ্ধ করেনি।
তিথি গুপ্ত (নাম পরিবর্তিত) থানায় অভিযোগ করেছেন, “ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট-এর অন্তর্গত কাঁচড়াপাড়া অঞ্চলের জনৈক যুবক ভিকি শর্মা তাঁকে দূরভাষের মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছেন তাঁর ইচ্ছামত না চললে, তিথি-র পোশাক পাল্টাবার ছবি সোশ্যাল মিডিয়া-য় ছড়িয়ে দেওয়া হবে।”
অথচ এর পরেও বীজপুর থানার পুলিশ কোনো জিডিআর বা এফআইআর না নিয়ে কোনো এক অদৃশ্য শক্তির অনুপ্রেরণায় এখনো হাত গুটিয়ে বসে আছে।
তিথি জানিয়েছেন “গত প্রায় ১ বছর ধরে তিনি কাপা, বিশ্বাস পাড়া অঞ্চলের ‘ফেয়ারি বিউটি পার্লার’-এ কাজ করছেন। কাজের প্রয়োজনে তাঁকে ও অন্যান্য মহিলা কর্মচারীদের মাঝেমাঝেই পোশাক পাল্টাতে হয়।
সম্প্রতি ভিকি তাঁকে ভিডিও কল করে ভয় দেখিয়ে বলে তাঁর হাতে তিথির পোশাক পরিবর্তনের খোলামেলা ছবি আছে। তিথি যদি ভিকি-র ইচ্ছা মতো না চলে সেক্ষেত্রে ফল হবে ভয়াবহ।”
সমাজে ইজ্জতহানীর ভয়ে তিথি প্রথমে আত্মহননের কথা ভেবেছিলেন, পরে ওঁর পরিবার ও বন্ধুদের কথায় সাহস পেয়ে থানায় যায় ভিকি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে।
কিন্তু তিথি-র দুর্ভাগ্য, লকডাউন চলাকালীন ‘কোভিড ১৯’-এ আক্রান্ত হওয়ার ভয়কে উপেক্ষা করে বারবার থানায় গেলেও থানা কর্তৃপক্ষ তিথি-কে ঘোরাতে থাকে।
শেষে গতকাল বীজপুর থানা তিথি-র কাছ থেকে অভিযোগ পত্রটা হাত পেতে গ্রহণ করলেও এখনো পর্যন্ত অভিযোগ জমা নেওয়ার কোনো স্বীকৃতি দেয়নি।
গতকাল রাতে তিথি-কে বলা হয়েছিল, আজ সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ থানায় যোগাযোগ করতে। পুলিশের কথামতো আজ সকালে সময়মতো থানায় গেলে তিথি-কে আবার রাত আটটা-নটা নাগাদ থানায় যাওয়ার কথা বলা হয়।
এখন প্রশ্ন, মারণব্যাধির প্রাদুর্ভাবের সময় শুভ্র, তিথি বা ওদের মতো ব্যক্তিদের রোগ হলে এর দায় কে নেবে ?
সব থেকে বড়ো কথা, যে কাজের জন্য পুলিশকে কাজে নিয়োগ করা হয়, সেই কাজ ভুলে পুলিশ রাস্তায় রাস্তায় বালখিল্য আচরণ করে গানই বা গাইবে কেনো ?
নির্বোধেরা কী একটুও বোঝেনা, যে বাঙালী তাঁদের মুখ্যমন্ত্রীর কথা শোনে না, তাঁরা তাঁদের গান শুনলেও ঘরে বসে থাকবেনা।
এই পরিস্থিতিতে পুলিশ বিভাগের কাছে একটাই আবেদন, দয়া করে এবং ভুল করেও পুলিশদের রাস্তার গায়ক বানাতে যাবেননা। এমনিতেই তো ওঁনারা সময় মতো কাজ করেন না বা করতে পারেন না, এর পর আছিলা পেলে তো কথাই নেই।