বাঘের বাচ্চা ও শুওরের বাচ্চা
আজ্ঞে মাফ করবেন কাউকে গালা গালি করবো বলে এই লেখা নয় । এ লেখা নিছকই অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা । না না দিদি বা দাদা দের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়নি । এক ৫ বছরের ছেলে প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে আমার নিজের মনে জাগা একটা প্রশ্ন করলো আজ আমাকে, “কাকু শুওরের বাচ্চা বললে রেগে যায় কেন ?”
বেজায় মুশকিলে পড়লাম , কি উত্তর দেব ? সঠিক উত্তর অভিধানে দেখলে কি বলবে ” অশালীন আচরণ বা কথা” । তাই ঠিক করলাম এই বিষয়ে লোকডাউন পন্ডিতদের কিছু উপদেশ এক জায়গায় করে একটা লেখা লিখি ।
ছোট বেলায় এক বন্ধু বলেছিলো বাঘিনী তার বাঘ ছাড়া কাউকে ঘেঁষতে দেয় না, অর্থাৎ, বাঘের বাচ্চা এক বাপের সন্তান এবং ওই রকম বীরত্বের অধিকারী হবে ধরেই নেয়া যায় । অপর দিকে শুয়োরই বোধ হয় এক মাত্র জানোয়ার যে বহু গামী না হলে গর্ভবতী হয়না, অর্থাৎ, বাপের নাম জানা সম্ভব নয় । বর্তমানে বাপের নাম না জানা কোনো অপরাধ নয় কিন্তু ৪০ বছর আগে বেশ লজ্জার কারণ হতো । তা সেই বন্ধু কে আবার ফোন করে জানতে চাইলাম “কিরে শুওরের বাচ্চা আর বাঘের বাচ্চা বলতে কি বলবি ?”
কয়েক সেকেন্ড চুপ ভাবলাম টাওয়ার পাচ্ছে না, এবার বললো শোন বাইরে আয় সেই মতিঝিলের বড় পুকুর ঘটে, যেখানে ৪০ বছর আগে একই প্রশ্নের জবাব দিয়ে ছিলাম । অতএব করোনার বর্ম মাস্ক ও গ্লাভস পরে মিনিট ১৫ পর পুকুর ঘটে হাজির।
একটা খাতা হাতে সুভাষ বোস দাঁড়িয়ে , না নেতাজী নয় আমার বন্ধু সুভাষ । খাতা দিয়ে, একটা বিড়ি ধারালো , বললো পড়ে দেখ মনে ধরলে লিখে ফেল ।
খাতা অদ্ভুত ভাবে লেখা , ছোট বেলার পার্থক্য লেখো ৫ নম্বর এমন একটা প্রশ্নোর উত্তরে কেউ ১০০ নম্বরের উত্তর লিখলে যা হয়, তেমন বড় সরো উত্তর ।
১.যারা আদর্শের জন্য জীবন দেয় তারা বাঘের বাচ্চা আর যারা আদর্শ বেচে খায় তারা শুওরের বাচ্চা । যেমন আমাদের সৎ সেনাবাহিনীর বীর দামাল ছেলে মেয়েরা বাঘের বাচ্চা আর যারা তাদের নিম্ন মানের অস্ত্র ও সরন্জাম কিনে দেয় তারা শুওরের বাচ্চা ।
২. যারা নিষ্ঠা ভরে ছাত্রদের পড়ান, শুধু মাত্র চাকরি করেন না, তারা বাঘের বাচ্চা আর যারা যোগ্যতা না থাকলেও, খুঁটি আর ঘুষের জোরে মাস্টার হয়ে, চলো পড়াই কিছু করে খাই, এই মানসিকতা নিয়ে যারা বছরের পর বছর সার্টিফিকেট ধারী অযোগ্য চাকরী প্রার্থী তৈরী করে, তারা পাক্কা শুওরের বাচ্চা । ভরসার কথা এখনো কিছু বাঘের বাচ্চা শিক্ষা ক্ষেত্রে রয়ে গেছেন, কিন্তু সংখ্যা এতো কম যে সংরক্ষণ প্রয়োজন ।
৩. যারা নেতা বা নেত্রী হয়ে পরের প্রজন্মের যোগ্য মানুষ কে নেতার আসনে বসায় নিজের ঘরের লোকের বদলে ,তারা হলো বাঘের বাচ্চা । অপর দিকে বাপ্ মা , মাসি পিসির আদরের দুলাল দের বিনা যোগ্যতায়, শুধু নামের পোঁদে চেনা পদবি আছে বলে , নেতার আসনে বসিয়ে “হামারে নেতা হামারে নেতা বলে চিৎকার” করে,তারা হলো পাক্কা শুওরের বাচ্চা । হামারে নেতা যে, আসলে হারামী নেতা তা দ্রুত দেশ দেখতে পেয়ে যায় ।
এই বলে থামলো আর বেশ একটা গভীর সুখটান দিলো । চোখদুটো সুভাষের যেন নেতাজির মতো জ্বলছে ।
৪. নিজের অধস্তন কর্মীদের নিজের ছেলে মেয়ে ভাই বোনের মতো ভালোবেসে যারা কাজ সেখান , ভুল হলে স্ন্হের ধমক দিয়ে হাতে করে শিখিয়ে নিতে পিচ পা হননা , জুনিয়রের করে দেয়া কাজের প্রশংসা অধস্তন কেই আনন্দের সাথে দিয়ে দেন , নিজের বসের গালি হজম করে নিচুতলার কর্মী দেড় উৎসাহিত করেন তারাই আজকের বাঘের বাচ্চা । তবে এদের খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন । আর যারা জুনিয়রদের মাড়িয়ে তাদের করা কাজের ক্রেডিট নিয়ে নেয় , যারা নতুন মেয়ে কর্মী দেখলেই অফিসিয়াল ট্যুরের বাহানায় বিছানায় তোলার ফন্দি করে , যারা ভালো মানুষ বসের মানবিকতার সুযোগ নিয়ে তাকেই লেঙ্গি মেরে ওপরে ওঠে , এরাই হলো আধুনিক শুওরের বাচ্চা ।
৫. পরকীয়া এখন আইন সিদ্ধ , বেশ লাগে অন্যের বৌকে নিয়ে সুযোগের সদ্ ব্যবহার করে নিতে বা লালসার টোপ দিয়ে কোনো সাধারণ মেয়ের সুখের সংসারে আগুন ধরাতে । আইন স্বীকৃতি দিলেও সমাজের নজরে আজ ও এরা শুওরের বাচ্চা আর যারা সুযোগ পেলেও সম্মানের সীমা কখনও লঙ্গন করে না তারাই বাঘের বাচ্চা ।
৬. নেতাজী সুভাষ বোসের নাম যারা যুদ্ধ অপরাধীর তালিকায় রেখে দেয়, তারা পাক্কা শুওরের বাচ্চা । যারা মিথ্যার ইতিহাস পরিয়ে দেশের মানুষ কে বোকা বানায় তারা পাক্কা শুওরের বাচ্চা । নেতাজী সুভাষ , ভাগৎসিংহ , মাস্টারদা সূর্য সেন , ক্ষুদিরাম বোস আর এনাদের মতো অগণিত স্বাধীনতা প্রেমীরা হলেন বাঘের বাচ্চা । আর যারা ধান্দা বাজি করে মন্ত্রিত্বের লোভে দেশ কে টুকরো করে রাজা হলো এবং আজাদ হিন্দ বাহিনীর সম্পদ লুঠ করলো তারা হলো শুওরের বাচ্চা ।
জিজ্ঞাসা করলাম তবে কি নেহেরু গান্ধী এদের শুওরের বাচ্চা বলতে চাইছিস ? সেটা কিন্তু ঠিক নয় ,সকলের দৃষ্টি ভঙ্গি সমান নয় । আমার সাথে মতের মিল নেই বলে সে শুওরের বাচ্চা এমন বলা ঠিক নয় । আলোচনা সমালোচনা হতেই পারে । ঐতিহাসিক ভুল করেই থাকতে পারে কেউ, কিন্তু তাই বলে প্রাক্তন নেতা নেত্রী কে গলা গালি সভ্যতার পরিচয় নয় ।
চোখ দুটো ধকধক করে উঠলো সুভাষের , দুবার বিড়ি টান দিয়ে বললো । তোর বাড়ির মেয়ে দের অসম্মান করতে এলে তত্ত্ব কথা বলবি , না টুটি চিরে নিবি । মাথা গরম হয়ে গেলো বললাম পুঁতে দেব মাটিতে । সুভাষ হেসে বললো দ্যাটস ইট । সম্মানের সাথে আপস সব সময় করা অনুচিত ।
দেশের সম্পদ লুঠ করে যারা বিদেশে জমায় আর দেশের কৃষক আত্মহত্যা করে তাদের বিনা বিচারে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট অর্থাৎ ফাঁসি দরকার।
৭. যারা আজকের দিনে কবিড হবে জেনেও মানুষের সেবায় চিকিৎসা পরিষেবায় যুক্ত , জরুরি পরিষেবা দিচ্ছে তারা হল প্রকৃত রয়েল বেঙ্গল টাইগার আর যারা চাল চুরি করে পেট ভরাচ্ছে, হাসপাতাল সাপ্লাইয়ে কাট মানি খাচ্ছে, তারা পাকা শুওরের বাচ্চা । এই শুওরের বাচ্চা দের মেরে ঝুলিয়ে দেয়া কি অসাংবিধানিক হবে । বলনা ভাই চারটা হাসপাতাল ঘুরে বাবা কে ভর্তি করতে পারিনি , ঘুষ দিতে পারিনি বলে ,বাবা মরেই গেলো , এর বিচার কে করবে ? আমি নিরুত্তর কি বলবো, এক মাস হয়নি বাবা মারা গেছেন সুভাষের ।
৮. যারা সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ঘুষ না খেয়ে রাস্তা বানান , ইন্সপেকশন করে সঠিক নির্মাণ করেন তারা বাঘের বাচ্চা । আর যারা রাস্তা না বানিয়েই কাজ সম্পূর্ণ নোটিশ দেন তারা পাক্কা শুওরের বাচ্চা ।
৯. যারা বৃদ্ধ বাবা মা কে বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে দেন , যারা বাবা কেন চাকর ছবির বাস্তবিক হিরো , সেই পিতা ও মাতা অভাগা যে একটি শুওরের বাচ্চার জন্ম দিয়ে ফেলেছেন ।
১০. যেসব বাপ্ মা ফুর্তির ঝোকে জন্ম দিয়ে বাচ্চা দের ফেলে ফুর্তির জীবন বেছে নেয় তারা পাক্কা শুওরের বাচ্চা ।
১১. যারা অসৎ জেনেও নেতা নেত্রীদের প্রতিবাদ করেন না , তারও কি শুওরের বাচ্চা নয়? এমন বাঘের বাচ্চা কি আসবে না,যে বলতে পারবে রাজা তুমি উলঙ্গ ?
১২. কালো বাজারি করে কৃত্রিম বাজার দর বাড়িয়ে মানুষের বেঁচে থাকা কে নরক যারা করে ,তারা শুওরের বাচ্চা ।
১৩. যারা দেশের সেনা কে সন্দেহ করে, তাদের হেয় করে ফেসবুক টুইটের ,তারাও কি পাক্কা শুওরের বাচ্চা নয় ?
দেশ ভক্তি কোনো রঙের কাছে একা বাঁধা নেই । কিন্তু দেশের কথা এলে অন্য কিছু ভাবার ও সুযোগ নেই ।
১৪. ধর্মের নামে দেশের সংকৃতি ধ্বংস করা ঠিক নয়, তেমনি কোনো বিশেষ ধর্মের দোহাই দিয়ে বাকিদের বঞ্চিত বা অত্যাচার করাও সঠিক নয় । যারা ধর্ম রাখার নামে অধর্মের কাজ করে, তারাও কি শুওরের বাচ্চা নয় ? আর যারা শত বিপদের মধ্যেও নিজের ধর্ম কে রক্ষে করে, সেও এক বাঘের বাচ্চা , কিন্তু কখনোই অসহায় কে অত্যাচার করেন না, তাই তিনি বাঘের বাচ্চা ।
১৫. ভারতীয় যদি প্রকৃত হতে পারেন, তবে বাঘের বাচ্চা খুঁজতে হবে না, আয়নায় দেখতে পাবেন । আর যদি দেশের আগে, অন্য কোনো বিষয় আসে তবে অভিনন্দন ,প্রকৃত শুওরের বাচ্চা আপনার আয়নায় অপেক্ষা করছে ।
ভারতের সঠিক ইতিহাস , সঠিক সংস্কৃতি জানার অধিকার সকলের আছে, আর তা কোনো এক ধর্মের অনুসারে নয়, ভারতের ঐতিহাসিক ঘটনার ভিত্তিতে । কোনো বড়ো পরিবারে ইচ্ছায়ে নয় , পারিবারিক কলঙ্ক কে সম্মানে পরিণত করে মেকি আভিজাত্য দেখানো বন্ধ হোক।
মানুষ প্রকৃত বাঘের বাচ্চা দেখতে ভালোবাসে , শুওরের বাচ্চা নয়।
গান্ধী ,নেহেরু ,সিংহ বা বোস পদবি হলেই, রাজত্ব করার অধিকার জন্মায় না । বরঞ্চ কোনো প্রকৃত দেশ প্রেমিক কে দেয়া হোক দায়িত্ব ।
আবার আমরা গর্বের সাথে বলি, আমাদের নেতা যেন বাঘের বাচ্চা , ছাতি ছাপান্ন না হলেও চলে, ঈমান আসমান ছোঁয়া হওয়া চাই ।
হঠাৎ চমকে ঘুমের থেকে জেগে দেখি কোলের ওপর “সুভাষ ঘরে ফেরেনি” বই খোলা । বেশ ধন্দে পরে গেলাম, তবে কি এতক্ষন স্বপ্নে ঝগড়া করছিলাম ? আপনাদের কি মনে হয়, শুওরের বাচ্চা আর বাঘের বাচ্চা কি চিনতে পারলাম স্বপ্নের ঘরে, নাকি পাগলের প্রলাপ রয়ে গেলো ?
“চীনের চিনি” ,”বাংলার দুধ” দিয়ে “গুজরাটি চা” খেতে চললাম, চায়ের কাপে তুফান তুলতে হবে যে , দেশ যায় ভারমে হ্যাম রাহে আরাম সে ?
স্যার ঘুমের ঘোরে লোকডাউনের বাজারে কি দেখতে কি দেখেছি, মাইন্ড করবেন না প্লিজ । শুওরের বাচ্চাদের মতো আটক করবেন না যেন , নাহলে জনগণের ধারণাই সঠিক বলে মনে হবে , মানে বুঝতে না পারলে সুভাষ বাবু কে জিজ্ঞাসা করুন , কারণ উনি ই শেষ বাঘের বাচ্চা আমাদের শেষ নেতা ,নেতাজী সুভাষ ।