মানবতার এক ভিন্ন মুখ – আমাদের রাজ্যের সম্পদ সাদিকুল ইসলাম

0
1781
মানবতার এক ভিন্ন মুখ -আমাদের রাজ্যের সম্পদ সাদিকুল ইসলাম
মানবতার এক ভিন্ন মুখ -আমাদের রাজ্যের সম্পদ সাদিকুল ইসলাম
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:9 Minute, 52 Second

আমাদের রাজ্যের সম্পদ সাদিকুল ইসলাম

ফারুক আহমেদ

সাদিকুল ইসলাম নামে বীরভূমের একটা কাজের ছেলে আমাদের বিদেশ থেকে ডেড বডি ছাড়িয়ে আনতে পারে। ১ লক্ষ পরিযায়ী কে খাবার ও ৭৫০০ পরিযায়ী কে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে পারে বিনামূল্যে।

আধার কার্ড কেন্দ্র সরকার কে জোর করে করাতে পারে।

শতাব্দী রায় যেখানে পরিযায়ী দের জামাই আদর দিতে পারছেন না, সেখানে একটা ছেলে একা হাতে ৭৫০০ পরিযায়ী কে ফিরিয়ে আনতে পারে।

যে ছেলে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি ভবন, ক্যাবিনেট সেক্রেটরিয়েটের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারে, আমার মনে সে আমাদের রাজ্যের একটা সম্পদ।

সাদিকুল ইসলাম, বীরভূমের ভূমিপুত্র লিখেছেন তাঁর সংগ্রামের কথা ফেসবুকে হুবুহু কপি তুলে ধরা হয়েছে এই বিশেষ আলোকপাতে।

“মৃত্যু, মৃত ও সরকার।।

২৫ জুন। সন্ধ্যা ৬.১৬ ।

২৪ তারিখ রাত্রে মৃত্যু হয় কোচবিহার এর একজন পরিযায়ী শ্রমিক ভুটানের রাজধানী থিম্পু তে। সঙ্গে ছিলেন খেটে খাওয়া কিছু মানুষজন। যারা না সরকার বোঝেন না বোঝেন ভারতের মানচিত্রের কারিকুরি।।

মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়ীর মানুষ সঙ্গে সঙ্গে ছোটেন পুন্ডি বাড়ি ব্লক অফিসে। বিডিও ‘ বাবু সাহেব’ মিটিং এ ছিলেন, তিনি আবার কান্নাকাটি ঠিক শুনতে পছন্দ করেন না। দীর্ঘক্ষণ মিটিং সেরে পরিবার কে জানান উনার কিছু করার নেই।। কুল হারানো স্বজন এর যাওয়ার কোনো জায়গা ছিলো না। অনেক কে ফোন অনুরোধ সহকারে সমস্যা জানান। সমাধান কারোর জানা নেই। যাঁরা জানেন, তাদের কাছে পৌঁছানোর সাহস বা উপায় উনাদের ছিলোনা, যেটা আমার আপনার কারোরই থাকে না। বিডিও বা থানার ওসি কে আমি আপনি সবাই ভয় করি।। জেলায় কোথাও সাহায্য না পেয়ে, আমার কিছু বন্ধু খবরটা জানতে পেরে আমার ফোন নম্বর দেয়। আমাকে উনারা কল করেন। আমি আশ্বস্ত করি সমস্ত রকম সাহায্য করার।

আমি প্রথম ফোন করি কোচবিহার এর জেলাশাসক মহাশয়ের ব্যক্তিগত ফোন নম্বর এ। উনি বুঝিয়ে বলেন উনার কিছুই করার নেই।। আলিপুরদুয়ার এর জেলাশাসক হয়তো কিছু করলেও করতে পারেন যেহেতু ভুটান বর্ডার চেকপোস্ট ওনার এক্তিয়ারে পড়ে।

এবার ফোন করলাম আলিপরদুয়ারের জেলাশাসক কে। উনি আমাকে বলেন, আমি দেখছি এবং কিছু সামান্য চেষ্টা করে আমাকে উনি একটা ফোন নম্বর যোগাড় করে দিলেন। বর্ণনা তো অনেক গুরুগম্ভীর শুনলাম কিন্তুু, কিন্তুু ফোন পৌঁছালো এক অজানা মহিলার কাছে যিনি বাংলা হিন্দি ইংরেজি কিছুই বোঝেন না। আমার ফোন পেয়ে উনি খেই হারিয়েছেন।। জেলাশাসক কে ঘুরিয়ে কল করি। রিসিভ করলেন না। WhatsApp এ নম্বর পাঠিয়েছেন, পাঠানোর পরেই ব্লক করেছেন।
হয়তো ডিস্টার্ব হতে চান না সেই কারণে।

সমস্যার সমাধান পাওয়া সমস্যার। বড্ড সমস্যার। অন্তত সেই পরিবারের কাছে।

ফোন করলাম, আমাদের নবান্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এর অতিরিক্ত স্বরাষ্ট্র সচিব কে। ফোন ধরলেন না। মেসেজ এর রিপ্লাই নেই।

ফোন করলাম জলপাইগুড়ি রেঞ্জ এর ডিআইজি কল্যাণ মুখার্জি কে। যথেষ্ট হেল্প করার চেষ্টা করলেন। উনি এস পি কে কল করলেন। আমি এস পি কে যোগাযোগ করলাম। এস পি সাহেব যোগাযোগ করলেন অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার কে। আমিও উনাকে কল করলাম। উনি প্রায় সমস্যার সমাধান করে দিলেন বলে মনে হলো। বললেন যা করার করে দেবেন।

যেহেতু ভারতের মানচিত্রের বাইরের কোনো একটা দেশের ব্যাপার। ভুটানের ভারতীয় দূতাবাস ডেড বডি ছাড়ার জন্য বর্ডার এর এই পারের পারমিশন লাগবে ভারতীয় কনসুলার জেনারেল এর থেকে। যিনি আবার কাকতালীয় ভাবে ছুটিতে আছেন। অতএব ফোন এ পাওয়া যাচ্ছেনা।

জেলার ও রাজ্যের খোরাক শেষ। অন্তহীন অথৈ জলে একটা মৃতের পরিবার।

ফোন করলাম বিদেশ মন্ত্রক এর মন্ত্রী, উনার ব্যক্তিগত সচিব কে। মন্ত্রী ফোন রিসিভ না করলেও মেসেজ এর রিপ্লাই করলেন। সচিব ফোন ধরে বললেন আমাকে উনি অফিস থেকে কাউকে দিয়ে ফোন করিয়ে সমস্যার সমাধান করিয়ে দেবেন।। ফোন আসেনি। কেউ সমাধান করিয়ে দিতে পারলেন না।

শেষমেষ আবার ফোন করলাম ডিসাস্টার ম্যানেজমেন্ট এর সহায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেজর সাইয়্যিদ আতা হাসনাইন কে। উনি সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের বিদেশ সেল এ ফোন করলেন। সৌভাগ্যবশত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আমাকে চিনতেন পরিযায়ী দের নিয়ে কাজ করার সময়।

উনি ৫ মিনিটের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে কনস্যুলেট এ ফোন করিয়ে পারমিশন করিয়ে দেন। ডেড বডি ভুটানের ভারতীয় দূতাবাস থেকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয়। হসপিটাল এর মর্গ থেকে বডি ছেড়ে দেওয়া হবে।

ডিআইজি কল্যাণ মুখার্জি এর সাহায্যে এপারের সমস্ত পুলিশ প্রশাসন কে জানিয়ে দেওয়া হয় কখন কোথায় মৃতদেহ আসবে। সমস্ত ধরনের সাহায্য করে দেওয়া হবে। যদিও আরো সঙ্গে কিছু ডেড বডি আসছে।।

তখন বাজে রাত ৯.৪৯ ।।

নিচু স্তরের পুলিশ কর্মীরাও জানেন না কী ভাবে ভুটান থেকে একটা মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব। একটু তথ্যের অভাবে অনেক সময় বাধাগ্রস্ত হতে হয়।

কাজ হয়ে যাওয়ার পর আমাকে আমাদের অতিরিক্ত স্বরাষ্ট্র সচিব ফোন করে দরকার জানতে চান। দরকার বলি। উনি বলেন আমাকে ইমেইল করতে। তারপর বললেন ইমেল করলে উনারা দেখবেন। আমি বললাম মেসেজ করে ও ফোন করে যে কাজ হচ্ছে না সেই কাজ কি ইমেল করে হবে? বললেন আমি তো সব পারিনা, অন্য কাউকে বলবো।।

আমি বললাম ছেড়ে দিন কাজ হয়ে গেছে। উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন উনার ব্যক্তিগত নাম্বার কোথায় পেলাম। উনাকে বললাম ভারতের কোনো আই এ এস বা আই পি এস এর নম্বর নবান্নে না থাকলে আমাকে জানাবেন। আমি সবাইকে এক ভাবেই সাহায্য করি। আপনাকেও করে দেবো। উনি একটু নরম হাসি হেসে বললেন, যাক আপনার কাজ হয়ে গেছে। ভগবান সব কিছু ঠিক করে দিক। অন্য কোনো দরকারে আবার ফোন করতে বললেন।।

আমার প্রশ্ন :

১. ডব্লিউ বি সি এস – সিভিল সার্ভিস এর অফিসার দের সহানুভূতি সুলভ মানসিকতা কি থাকে না নাকি উনারা ইচ্ছে করেই করেন। এই সব রাজ্য সিভিল সার্ভিস এর পরীক্ষায় কিছু পরিবর্তন করে উনাদের সেন্সিটাইজেসান এর ট্রেনিং দেওয়া কি উচিৎ না?

২. সাধারণ মানুষ কবে উনাদের কষ্টের নিরাময় পাবেন? নেতা বা ক্যাঁথা না ধরে। যদিও এম এল এ বা এম পি রা যথেষ্ট হাতের নাগালের বাইরে বসবাস করেন।

আমার প্রোফাইল এ থাকা মানুষজন একটু এই পোস্ট পড়ে নিজেদের একটু জানিয়ে রাখুন। আপনার পাড়া প্রতিবেশী দের এরকম কোনো সমস্যা হলে এই ধরনের উপায় টা একটু বাতলে দেবেন। না পারলে গুগল করে কিছু নাম্বার যোগাড় করে দেবেন। না পেলে আমাদের জানাবেন।।

অধিকার ছিনিয়ে নিতে শিখুন, ভদ্র ভাবে। মিটিং মিছিল তো অনেক হলো। একটু চেপে ধরতে শিখুন।”

About Post Author

Editor Desk

Antara Tripathy M.Sc., B.Ed. by qualification and bring 15 years of media reporting experience.. Coverred many illustarted events like, G20, ICC,MCCI,British High Commission, Bangladesh etc. She took over from the founder Editor of IBG NEWS Suman Munshi (15/Mar/2012- 09/Aug/2018 and October 2020 to 13 June 2023).
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD





LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here