ড: পলাশ বন্দোপাধ্যায়,কলকাতা ,১৫ জুলাই ২০২০
সমাজের প্রতি আমাদের কোনো দায়িত্ব নেই কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্র আমাদের সব দায়িত্ব নিয়ে দায়মুক্ত করবে;কোনো সমাজের অবক্ষয় এবং সভ্যতার সংকটের মূল কারণ বোধহয় এটিই।এই গড়পড়তা মানসিকতাই মানুষের বিনাশের ইতিহাস লিখেছে চিরকাল;এবার এই করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রেও বোধহয় তাই’ই লিখতে চলেছে।
করোনা আমাদের দেশে হঠাৎ ধূমকেতুর মতো আসেনি।বহুদিন থেকে জানা ছিলো তা আসবে।যখন দেশে প্রথম এর যাত্রা শুরু হয় সেদিন থেকেই সরকার সমাজের প্রতিটি কোনে ,প্রতিটি নাগরিকের কানে এই সরকারি নির্দেশনামা নামক মন্ত্র পৌঁছে দিতে চেষ্টা করেছিলেন, এই পরিস্থিতিতে আগামীদিনে আমাদের কি করতে হবে আর কি করা বারণ।হাতে মোবাইল ফোন নেই এরকম মানুষ এখন দেশে বিরল।তার থেকে ফোন করতে গেলে এখনো প্রথমেই সকলকে এ প্রসঙ্গে রেকর্ড করা মেসেজ শুনতে হয়,সে তার ইচ্ছে অনিচ্ছে যাই থাক না কেন।কিন্তু মেসেজ দিলে কি হয়! আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ,কান থাকতে বধির।আমরা কিছু দেখি না।কিছু শুনি না।সরকার,বিশেষজ্ঞ সবার সাবধানবাণীকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে আমরা যা ইচ্ছে তাই করি।বিপদকে বলি,’এসো এসো আমার ঘরে এসো’।
আমাদের আড্ডা,আমাদের বাজার,আমাদের বাইরে খাওয়া,আমাদের সামাজিকতা আমাদের অবাধ্যতা ও বোধহীনতা সুতরাং কোরোনা সংক্রমণের তৃতীয় পর্যায়ে আমাদের পৌঁছে দিয়েছে যেখানে গোষ্ঠী সংক্রমন হচ্ছে,হবে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন দুর্গতির সবে শুরু।এবং তাতেও আমাদের কোনো হুঁশ নেই।
রাতারাতি হুঁশ যে এসে যাবে এ ভাবনাও অবশ্য বাতুলতা।যে দেশে মানুষ ভালো মন্দ বিচার না করে দোকান থেকে ওষুধ কিনে খায়, পেটখারাপে বিরিয়ানি বন্ধ করে না,সর্দিকাশি হলে ধুলো,ধোঁয়া, আইসক্রিম, কোল্ডড্রিঙ্কস থেকে দূরে থাকতে হয় এ সহজ সত্য মানে না,পালস পোলিও দিতে গেলেও তাতে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নিয়ে হাজারটা প্রশ্ন করে, বিজ্ঞানের থেকে দৈবে বেশি গুরুত্ব দেয়, সে দেশের মানুষ হাত পরিষ্কার রাখা,মাস্ক পরা ও মানুষে মানুষে সমাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো অনুশাসন মানবে না,এর মধ্যে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
আমারা অপেক্ষা করে আছি কবে ভ্যাক্সিন বেরোবে এবং তা নিয়ে আমরা আরো বেশি যথেচ্চাচার শুরু করবো,অকুতোভয় হবো।কথায় বলে রোগের চিকিৎসায় থেকে তার প্রতিরোধ শ্রেয়।প্রথম থেকে সরকারের যাবতীয় প্রচেষ্টা কিন্তু সেদিকে নজর রেখেই ছিলো।কিন্তু আমরা কথা শুনিনি।এখন যদি আমরা তর্কের খাতিরে ধরেও নি যে ভ্যাক্সিন বাজারে আসবে(সেটা স্টেজ থ্রী ট্রায়ালের আগে কোনোমতে সম্ভব না।স্টেজ থ্রী ট্রায়াল শেষ হতে ছমাস সময় লাগাটা দস্তুর,এবং আমরা এখন স্টেজ টু শেষ করেছি।)এবং তা নিয়ে আমরা রোগমুক্ত হয়ে যাবো,তাহলে জানাই, এও কিন্তু এক রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাই, যার মূল্যমান আগের সরকার নির্দেশিত মানের থেকে অনেক গুন বেশি।ভ্যাক্সিন কিনতে বেশি খরচ হবে।
স্বাস্থ্য সম্পর্কে পৃথিবীর সবথেকে সচেতন দেশগুলির একটি,নিউজিল্যান্ডই যদি করোনা সংক্রমন মোকাবিলায় হিমশিম খেয়ে যায় সেখানে আমাদের মতো গড়পড়তা বোধের নাগরিকত্বের দেশে কোনো জাদুবলে মানুষের অংশগ্রহণের অনীহা নিয়েই এই কাণ্ডটি ঘটে যাবে তা হয়না।এসব জেনেও আমরা বিন্দাস আছি।সব চুলোয় যাক।
●●●●●●●●●●●●●●●
#পলাশ_বন্দ্যোপাধ্যায়
১৫.০৭.২০২০