ভালোবাসার বিজ্ঞান – দোহাই তোদের একটুকু চুপ কর, ভালোবাসিবারে দে আমারে অবসর
ড: পলাশ বন্দোপাধ্যায়,কলকাতা, ১৭ জুলাই ২০২০
বিজ্ঞান #গদ্য
#ভালোলাগা আকর্ষণ ভালোবাসা
আজকের বিষয়,নরনারীর পারস্পরিক আকর্ষণ।এর তিনটি স্তর।প্রাথমিক ভালো লাগা,তারপর আকর্ষণ এবং ভালোলাগা।
কিন্তু এরপরেও দুটো স্তর আছে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ; এবং তারা হলো আকর্ষণহীনতা এবং বিচ্ছেদ বা সম্পর্কের ইতি।
ব্যাপারটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। চলুন জেনে নেওয়া যাক আপনার পছন্দের মানুষটি পছন্দেরই যাতে থাকে সে জন্য আপনার কি কি দায়িত্ব কর্তব্য।
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
■আকর্ষণ প্রথম অনুভূত হয় বাহ্যিক কোনো গুণাবলী দেখে।যেমন ,ভালো দেখতে,ভালো কথা বলা,ঝকঝকে বুদ্ধিদীপ্ত,স্মার্টনেস ইত্যাদি।জীবনের চলার পথে এমন অনেকের সাক্ষাৎ মেলে।
ছটফট করবেন না।সময় নিন।আরো একটু দেখে নিন।তারপর বন্ধুত্ব।বন্ধুত্ব শুধু আকর্ষণের নয়।দায়িত্বেরও।দায়িত্বহীন অগভীর সম্পর্ক টেকে না।
■যার প্ৰতি আপনি আকর্ষিত,সেও কি আপনার প্রতি একটু হলেও আকর্ষিত?
তার হাবভাব দেখুন।পরিস্থিতি বিচার করুন।নিজের মনকে এবং শেষে মনে হলে তাকেও প্রশ্ন করুন।সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে কিছু common field of interest থাকতে হয়।নয়তো তা বয়ে বেড়াতে হয়।
■যাকে ভালো লাগছে তাকে নিয়ে আবেগ দেখান।তার প্রতি আকর্ষণ প্রকাশ করুন সংযত এবং মার্জিত রুচিবোধের পরিচয় দিয়ে।Loud হবেন না।ভালোলাগার তীব্রতা গভীরে থাকে।সত্যিই ভালো লাগা থাকলে যার প্ৰতি ভালোলাগা সে তা আপনার মার্জিত পদক্ষেপেই বুঝে নেবে।
বোঝাতে যাবেন না জোর করে।এটা সহমতের ব্যাপার।
■আকর্ষণ যখন ভালোলাগায় পরিবর্তিত হয় তখন আস্তে আস্তে পরস্পরের প্রতি ব্যক্তিগত এবং একান্তই ব্যক্তিগত অধিকারবোধের জন্ম হয়।অধিকারবোধ থাকবেই,কিন্তু তা যেন কেবলমাত্র ব্যক্তিগত না হয়।সে তিনি আপনার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নন।আরেকজন মানুষ।পজেসিভনেস থেকেই অপরজনের চলাফেরা,আরেকজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়ে খবরদারি এবং প্রকারান্তরে তাঁর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।এরকমটি চলতে পারে না।
■আপনি যাকে পছন্দ করছেন, তার উপর আপনার বক্তব্য চাপিয়ে দেবেন না।সবাই নিজের মতন করে জগৎ এবং জীবনকে দেখেন।প্রত্যেকের মানসিক স্থিতি এবং জীবনদর্শন ভিন্ন।আপনি খুব বুদ্ধিমান এবং তিনি বুদ্ধিহীন এমনটি ভাবলে তা আপনার অজ্ঞতাকেই প্রকাশ করে।তাঁর ব্যক্তিসত্তা এবং ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা করতে শিখুন।
■প্রত্যেকেরই কিছু পার্থিব বস্তু এবং কিছু অ-বস্তু অপার্থিব অনুভূতির উপর ভিন্ন ভিন্ন ভালোলাগা থাকে।প্রত্যেকের তার কর্মক্ষেত্রের প্ৰতি ভালোবাসা ও আবেগ থাকে।দায়িত্বশীল হন।সেই বোধে কখনো আঘাত করবেন না।তাঁর ভালোলাগা ও আবেগকে ভুলপ্রমাণের চেষ্টা করবেন না।তাঁর নিজের বিচারধারার প্ৰতি আস্থা রাখুন।তিনি আবেগ অনুভূতিতে ঠিক না ভুল তা তিনিই ঠিক করবেন।আপনি নন।কেবলমাত্র তিনি আপনার মতামত চাইলে তা দিতে পারেন।command নয়।
■প্রতিটি মানুষ নিজের যোগ্যতায় বাঁচেন।আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থেকে ইথিওপিয়ার ভিখারি সবাই।এই বাঁচার মধ্যে একটা আত্মসম্মান বোধ থাকে।তাতে আঘাত দিতে নেই।দিলে আপনার সম্পর্কের কবর আপনি নিজেই খুঁড়ছেন।সিদ্ধান্ত আপনার।শ্রদ্ধা করা শিখুন।আমিত্ব বর্জন করুন।
■সম্পর্ক হলো তন্ত্রীতে তন্ত্রী মেলা গানের সুর,ভালোবাসার দলমন্ডল সহযোগে তৈরি ফুল।যুদ্ধ নয়।এখানে জেতার থেকে হারতে শেখা বেশি জরুরি।বেশি গৌরবের।ভালোবাসার মানুষের কাছে যৌক্তিক, অযৌক্তিক এবং আবেগ মিশ্রিত প্রশ্রয়ের পরাজয় সম্পর্কের ভিতকে মজবুত করে প্ৰতি মুহূর্তে।
■ভালো মন্দ দোষ গুন মিলিয়ে মানুষ।আপনি নিজেও তার ব্যতিক্রম নন।সম্পর্ক যত গভীরে যাবে তত তা পরিস্ফুট হবে।বিষয় হলো সমালোচনা,ঝগড়া বা দোষারোপ নয়- নিজেকে সবসময় অন্যের জায়গায় বসিয়ে দেখবেন কোনো পরিস্থিতিতে আপনি যে আচরণ বা কাজ করছেন,যৌক্তিকভাবে তিনিও তা কর করছেন কিনা।দুজন মানুষের জন্য একই পরিস্থিতিতে ভিন্ন নিয়ম হতে পারে না।উদার হন,সহনশীল হন।ক্ষমাশীল হন।সম্পর্কের সুন্দরতম পর্যায় হলো ভালোবাসা।তা যেন আকর্ষণের কুঁড়িতেই বিনষ্ট না হয়।….পৃথিবী ও জীবন সুন্দর হোক।দোষারোপমুক্ত হোক।
ধন্যবাদ
পলাশ_বন্দ্যোপাধ্যায়
১৭.০৭.২০২০