“তুমি কেমন কোরে গান করো হে গুনী আমি অবাক হয়ে শুনি”…আজ সকালের আলাপচারিতায় সুমন দা যখন এই মহান লাইনটা আওরালো একটা দমকা বাতাসের স্পার্ক খেলে গেলো অলিন্দে… মূর্খতার ন্যাকামি আমার.. জাজমেন্টের ধারণায় বকলমে নিজেকেই এসিস্ট করি… কথায় কথা বাড়লো অভ্যেস মতো আমার শোনার কান আরও চওড়া হলো.. কিন্তু একটা প্রসঙ্গ কোনো ভাবেই এড়িয়ে যেতে পারলাম না…
একটা নাম কিছুতেই ভোলা সম্ভব নয় সেটা হলো “উত্তমকুমার “
অনেকের কাছে তিনি জেঠু, কাকু, বাবা, বড়দা, বা অন্য কিছু.. কিন্তু আমার কাছে তিনি শুধুই উত্তমকুমার…
আসলে এমন হয় যখন কালেভদ্রে দু একটা ধূমকেতু পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে আর সব ওলোটপালোট হয়ে যায়..
নইলে রোগা একটা ঢেঙ্গা ছেলে কি কোরে এই মননশীল জাতির হার্টথব হয়ে উঠবে ! কি কোরে সেই কাল থেকে এই কাল অবধি ধুতি আর পাঞ্জাবি পরিহিত একজন সুদর্শন নির্মল হাসি মাখা মুখ ব্র্যান্ড হয়ে থাকবে.. অদ্ভূত ভাবে সাদাকালো ঝির ঝির অর্ধেক কথা বুঝতে না পারা অসংরক্ষিত প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়া রিলের সিনেমা যখন আজও কোনো চ্যানেলে দেয়… তার টিআরপি যেকোনো আজও সর্বোচ্চ তালিকায় যায়… তাহলে কিসের জোর ছিলো এই লোকটার? কিসের মোহে সে বেঁধে রেখেছে তার সাম্রাজ্য?
“মেজাজ টাই তো আসল রাজা আমি রাজা নই “… সে সন্ন্যাসী হয়েও রাজা, নায়ক হয়েও রাজা, এন্টোনি’র ফিরিঙ্গি হয়েও… সে এক এবং অদ্বিতীয়…
কি মনে হয় সৃজিৎ যদি এই মানুষ টাকে পেতেন তাহলে জাতিস্মরের গল্পটা অন্য রকম হতো না?
বাইশে শ্রাবন কি শুধুই একটা থ্রিলার হয়েই থেকে যেতো?
গৌতম ঘোষ এর “মনের মানুষ” কোথায় গিয়ে থামতো যদি আজকের দিনে উত্তমকুমার বেঁচে থাকতেন… এবং এই সব ছবি গুলিতে অভিনয় করতেন…
তামাম ফিল্মিষ্টার, সুপারস্টার থেকে এঞ্জিলোনাজলি থেকে টেলর সুইফ্ট, কি এই মানুষ টার সাথে স্ক্রিন শেয়ারের জন্য অপেক্ষায় থাকতো না !
থাকতো… যদি উনি এই সময়ে বেঁচে থাকতেন তাহলে আজকের দিনে বাংলা সিনেমার পরিভাষা উনি পাল্টে দিতেন বলেই আমার বিশ্বাস… এই যে এক একটা সিনের জন্যই তিন মিনিট, পাঁচ মিনিটের ট্রাইবেকারে মিনিংলেস ফ্রেম.. উনি ছুড়ে ফেলে দিতেন .. সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা একজন শিল্পীকে বোঝা সময়ের পক্ষেও বোঝা সম্ভব নয়..
উত্তমকুমার একজন ইনবোর্ন ক্রিয়েটের.. একজন জাত শিল্পী..
উনিই জানতেন বা জানতেন না কোন মোশন কিভাবে উনি ধরবেন স্ক্রিনে…
ওনার প্রয়োজনই পড়তো না একটা গানের জন্য দশটা দেশ ঘুরে বেড়ানোর…
উনি এলে এমনিতেই হাত তালির ঝড় উঠে যেতো..
নইলে নায়কের সেই দৃশ্য যেখানে শর্মিলা কে সাইন করার জন্য পেনে কালি পড়ছে না.. হঠাৎ সামনে রাখা জলের গ্লাসে পেন ডুবিয়ে সাইন কোরে দেন… সত্যজিৎ রায় পড়ে বহুবার এই দৃশ্যের কথা আলাদা কোরে বলেওছেন…. উত্তমকুমার “নায়ক ” নন একজন মহানায়ক.. আগামী হাজার বছরের ইতিহাসে এমন শিল্পীর আবির্ভাব হয়তো আর সম্ভব নয়…
ভক্ত তো হাজারো হয়.
কিন্তু ঈশ্বর তো একজনই….
@অভিজিৎ পাল