সব হারিয়ে সম্পর্কের এই একলা ঘর আমার অচেনা দেশ

0
933
Happy Family
Happy Family
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:6 Minute, 49 Second

সব হারিয়ে সম্পর্কের এই একলা ঘর আমার অচেনা দেশ
ড: পলাশ বন্দোপাধ্যায় , কলকাতা ,০১ অগাস্ট ২০২০

“এই একলা ঘর আমার দেশ,আমার একলা থাকার অভ্যেস,ভাবি কিছুতেই ভাববো না তোমার কথা,বোবা টেলিফোনের পাশে বসে
তবু গভীর রাতের অগভীর সিনেমায়, যদি প্রেম চায় নাটুকে বিদায়,আমি আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছি আবার,দেখি চোখ ভিজে যায় কান্নায় ~ রূপম ইসলাম,ফসিল”

আজকের দিনে,বিশেষ করে নগর কেন্দ্রিক সভ্যতার সমাজে যৌথ পরিবারের কনসেপ্ট উঠে গিয়ে অণু পরিবারের চল হয়েছে।ছোট ফ্ল্যাট,কম মানুষ।কম সমস্যা।দেদার স্বাধীনতা।যৌথ পরিবারে অনেক সমস্যার মধ্যে কিছু সুবিধাও ছিলো।ইচ্ছে করলে বাড়ির ছাদেই চা চপ মুড়ি সহযোগে সবার আড্ডায় রেস্তোরাঁর হুল্লোড়ের আমেজ পাওয়া যেত।বাড়ির নতুন জন্মানো বাচ্চারা কখন বড় বাবা,ছোট মায়ের কোলে পিঠে করে বড় হয়ে যেত,অনেক সময় টেরই পেত না জন্ম দেওয়া বাবা মা।দাম্পত্য কলহে স্বামী স্ত্রী পরস্পরকে এড়িয়ে অন্যদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে সমস্যা লঘু করে ফেলতো।যৌথ পরিবারের মধ্যেও নিজেদের ঘরের দরজাটি বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা হয়ে উঠতো এক একটা ঘরের মধ্যে ঘর বা অণু পরিবার।সেই অন্দরমহলে বাবা মা মনের মতো সংস্কার দিতো তাদের সন্তানদের।ব্যক্তিগত খেয়াল রাখতো নিজ নিজ স্বামী,স্ত্রী,সন্তানের শরীর স্বাস্থ্য ইত্যাদি।

যৌথ পরিবারের মূল সমস্যা ছিলো ব্যক্তি স্বাধীনতার অভাব।ইচ্ছে মতো হঠাৎ দুদিনের জন্য বেরিয়ে পড়া, টুক করে রাতের খাবারটা বন্ধ করে বাইরে থেকে কিছু আনিয়ে খেয়ে নেওয়া,এসব স্বপ্ন হয়েই থাকতো চিরকাল।প্রত্যাশা পূরণের গল্প লেখা হতো না।

ইদানিং বড় বিপন্নতা শহুরে পরিবেশের অণুপরিবারের আবহে বেঁচে থাকা মানুষ গুলোর।এই করোনা, এই লক ডাউন তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে হয় নিঃস্ব বা পঙ্গু করে দিচ্ছে যত দিন যাচ্ছে। নিয়মিত রুটিন নেই,কাজ নেই,রোজগারপাতি নেই,বাইরে বেরোনো নেই,আনন্দ নেই।কেবল, স্টে হোম।স্টে সেফ।এ পরিস্থিতি যে কতদিন চলবে তা কেউই বলতে পারে না।

মন এমনই এক বিচিত্র বস্তু যে সে আসল ঘটনার থেকে, কি ঘটতে পারে তা কল্পনা করে অনুভূতিপ্রবন হয় অনেক বেশি।স্বাধীনতা থাকার যে আনন্দ, ‘আমি স্বাধীন।যখন যা ইচ্ছে করতে পারি’ এই অনুভবে থাকার আনন্দ তার থেকে ,সুতরাং অনেক বেশি। আবার ঘুরিয়ে দেখলে,পরাধীন থাকার যা যন্ত্রণা, তার থেকে ঢের বেশি যন্ত্রণা এটা ভাবতে যে,’আমি এখন ডানা কাটা পাখি।ইচ্ছে হলেই আকাশে উড়তে পারি না’। এ যেন সেই বনের পাখি আর খাঁচার পাখির কবিতা।

যৌথ পরিবারে দায়িত্ব অনেকের মধ্যে ভাগ হয়ে গেলেও অণু পরিবারে শৃঙ্খলা ধরে রাখার জন্য একজনকে তুলনায় শক্ত হতে হয়।বাকিদেরও আপত্তি,প্রতিবাদ ও বিদ্রোহকে আমল না দিয়ে তার কথায় সায় দিতে হয়।এই মডেলকে পাত্তা না দিয়ে ব্যক্তিত্বের সংঘাতে জড়ালে সমস্যা বাড়ে।কমে না।

এখনকার এই করোনা ভাইরাস অতিমারীর জমানায় এ সমস্যা আরো দুরূহ হয়ে দেখা যাচ্ছে।
এতদিনে আমরা সবাই জেনে গেছি কি কি বিধি নিষেধ মানতে হবে এই পরিস্থিতিতে।।বাইরের থেকে ঘরে এসে স্নান করতে হবে।ভিড়ে যাওয়া যাবে না।বাড়িতে অযাচিত জমায়েত বা ভিড় আনা যাবে না।বাইরে বেরোলে নাক ও মুখ ঢেকে মাস্ক পরতে হবে। বাইরে থাকা কালীন মুখে চোখে হাত দেওয়া যাবে না,হাত পরিষ্কার রাখতে হবে।

এ ব্যাপারে, বাড়ির শৃঙ্খলার দিকটা যে বেশি দেখে সে একটু বেশি কড়া হয়,কখনো কখনো হয়তো বা প্রয়োজনের থেকে বেশিই ঘ্যান ঘ্যান করে যৌক্তিক বিধি নিষেধ মানতে বাধ্য করার জন্য।কোনো মানুষেরই এত কিছু মানার অভ্যেস নেই।সব মানুষেরই জীবনের কোনো না কোনো বাঁকে এসে রেবেল হতে,শৃঙ্খলা ভাঙতে সাধ হয়।ফলত এ ক্ষেত্রে যারা কড়া মানুষটির উল্টো দিকে আছে তাদেরও দায়িত্বে নিয়ে এ কথাটা মনে রাখতে হবে,যে,যে কঠিন বিধি নিষেধের শর্তগুলো আরোপ করছে,বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হয়তো তার নিজেরই সেগুলো মেনে চলতে ভালো লাগছে না ,কিন্তু ভবিষ্যতের নিরাপত্তার কথা ভেবে,পরিবারের ভালোর কথা ভেবে তাকে এগুলো করতে হচ্ছে।তার আবেগের প্ৰতি, তার দায়িত্বজ্ঞানের প্ৰতি সন্মান দেখাতে হবে।তাকে মর্যাদা দিতে হবে।

আজকের এই তীব্র সভ্যতার সংকটে প্রাপ্তি ও সাধপূরণের ক্ষুদ্র চাহিদায় পরস্পরের সঙ্গে অহেতুক লড়াই করে নিজেদের মধ্যে আর মানসিক সংকটের মতো ভয়ংকরতর অতিমারীকে ডেকে আনবেন না প্লিজ।যাদের ধৈর্য বেশি তারা বোঝান।যাদের ধৈর্য্য কম তারা বুঝতে শিখুন।সমস্যার শেষ হয় কোনোদিন।এ সমস্যারও শেষ হবার।আবার ভোর হবে। হবেই।
●●●●●●●●●●●●●●

পলাশ_বন্দ্যোপাধ্যায়

০১.০৮.২০২০

About Post Author

Editor Desk

Antara Tripathy M.Sc., B.Ed. by qualification and bring 15 years of media reporting experience.. Coverred many illustarted events like, G20, ICC,MCCI,British High Commission, Bangladesh etc. She took over from the founder Editor of IBG NEWS Suman Munshi (15/Mar/2012- 09/Aug/2018 and October 2020 to 13 June 2023).
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD





LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here