আত্মনির্ভরতার পথে জোরালো ভাবে এগোচ্ছে ভারত
লাল পাথর ছায়াছবির সেই বিখ্যাত সংলাপ “তফাৎ যাও , সাব ঝুট হায়” বাংলা তথা সারা ভারত করোনার করুনায় , পাথর হয়ে লাল পাথরের সংলাপ বলবে কি?~সুমন মুন্সী
এম রাজশেখর (২ অগস্ট ‘২০):- কিছুদিন হলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেশকে স্বনির্ভর বানাবার লক্ষ্যে ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর ডাক দিয়েছেন।
স্বাধীনতার ৭৩ বছর পরে হলেও যা নিঃসেন্দহে এক সাধু পদক্ষেপ। অবশ্য যে ব্যক্তি, দ্বিতীয় দফার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে হিমালয়ের কোলে অবস্থিত হাই-ফাই গুহার ভেতরে নিশ্চিন্তে কয়েকদিন সাধুর জীবন কাটিয়ে আসতে পারেন; তিনি এরকম কথা বলবেন না তো আর কে বলবেন!
হিমালয়ের গুহায় একাকী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী-র রাত্রিবাসের কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আর এক নরেন্দ্রনাথ দত্ত (বীরেশ্বর ওরফে বিলে ওরফে স্বামী বিবেকানন্দ)-র কথা মনে পড়ে গেলো। পরাধীন ভারতে সেই কবে তিনি ভারতের একদম শেষ প্রান্তে ভারত মহাসাগরের উপর দণ্ডায়মান বিবেকানন্দ রকে নৈশবাস করে স্বাধীন তেজস্বী ভারতের কথা চিন্তা করেছিলেন।
আজকের নরেন আবার সাবেক নরেনের প্রতিষ্ঠিত বেলুড় মঠে দীক্ষা নেওয়ার জন্য একদিন ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন-এর সদর দপ্তর বলে অঙ্কিত ‘বেলুড় মঠ’ আজকের নরেনকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
সম্প্রতি দেশে সীমাহীন দারিদ্র আর বেকারত্ব-র কাছে কার্যত অসহায় হয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশকে ব্যবসার মাধ্যমে স্বনির্ভর বানাবার লক্ষ্যে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করেন।
নরেন্দ্র় মোদীর আগে এক প্রাক্তন বার ড্যান্সার-ও ভারতবাসীকে অন্তরের আওয়াজও শুনিয়েছিলেন। তাই আম ভারতীয় এসব কথার কথা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয়।
স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর ৭৩ বছর ধরে দেশের রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের দুর্নীতি, ভণ্ডামি, ব্যাভিচার চোখের সামনে দেখতে দেখতে আপামর ভারতবাসীও এতদিনে রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের মতো না হলেও বেশ কিছুটা দুর্নীতি পরায়ন হয়ে উঠেছে।
আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় অনেককাল আগেই ভারতকে ব্যাবসামুখী হওয়ার সুপরামর্শ দিয়েছিলেন, সেই পরামর্শ শুনে দেশের নওজোয়ানরা পড়ালেখা শেষ করেই হাতে ফাইল নিয়ে এতদিন ব্যাঙ্কের দরজায় ঘুরে বুঝেছেন ‘তেলা মাথাতেই তেল ঢালে ব্যাঙ্ক’। মাঝে মাঝে সেই অতিরিক্ত তেল ব্যাঙ্কে আবার সুদে মূলে ফিরে আসার বদলে বিভিন্ন বিদেশী ব্যাঙ্কে অন্য নাম ঠিকানায় গচ্ছিত হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রীর ডাকে উদ্বুদ্ধ হয়ে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্রচারের লক্ষ্যে দেশের হতদরিদ্র জনগণ গাড়ির পরোয়া না করে পরিযায়ী শ্রমিকের ছদ্মনামে সম্প্রতি আসমুদ্র হিমাচল জ্যাঠা বার করেছিলেন।
জ্যাঠা শেষে কোনরূপ লঙ্গরখানার পরোয়া না করে কখনো শ্মশানের এককোণে, কখনো পায়খানার ভেতরে, কখনো জলাজমিতে কদলীকাণ্ড ফেলে, কখনো বা গাছের উপর মাচা বেধে দিনযাপন করে বুঝিয়ে দিলেন ফলের বাক্সে রাত কাটিয়ে একা বিলেই মহান হয়নি, আমরাও কম যাইনা।
একদিকে যখন দেশের আমজনতা আসমুদ্র হিমাচল পদব্রজে পরিভ্রমণ করে নিঃশুল্কে ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর প্রচার পর্ব শেষ করলো, ঠিক তখন উল্টোদিকে দেশের প্রবীণ নবীন ব্যবসায়ীরা একযোগে নিজেদের স্বনির্ভর করার জন্য ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ার কাজে উঠে পড়ে লাগলেন।
এই ব্যবসায়ীরা খাদ্যসামগ্রীর দাম রাতারাতি আকাশচুম্বি করে বুঝিয়ে দিলেন, ‘ইণ্ডিয়া ইজ সাইনিং’, আপন গরিমায় চকচক করে উঠল ভারতের ভাগ্যাকাশ।
এই ব্যবসায়ীদের হাত ধরেই দেশের বাজারে চলে এলো একবার ব্যবহার হয়ে যাওয়া মাক্স, যা জনজীবনকে যেকোনো সময় রোগের আঁতুড়ঘর বানিয়ে তুলতে পারে।
ওষুধের দোকানে আগেই হাজার রকমের ভেজাল দুধ, ওষুধ বিক্রি হতো, এখন কৃত্রিম ভাবে চাহিদা বাড়িয়ে সেই ভেজাল ওষুধের দাম বহুগুণ বৃদ্ধি করা হলো।
অনেক সময় ৪০ হাজার ৫৪১ টাকার একটেমরা ইঞ্জেকশন বাজারে ১ লাখ টাকা দিলেও সব সময় পাওয়া যাচ্ছে না।
ভারত জেগে উঠছে নতুনভাবে। প্রত্যেক অলিতে গলিতে বিক্রি হচ্ছে নকল বিষাক্ত স্যানিটাইজার। যার অত্যধিক ব্যবহারে মানুষ মারাও যেতে পারে।
বেশ কিছু জায়গায় অন্য প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঁড়িয়ে চলছে কোভিড ১৯-এর জাল পরীক্ষা, যার ফলাফলে এদিক ওদিক এখন টপাটপ মানুষ মরছে।
নিশ্চয়যান বা অ্যাম্বুলেন্স নিজের পছন্দ মতো জায়গায় যেতে পছন্দসই দাম হাঁকছে, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে সেই দাম কিলোমিটার প্রতি হাজার টাকার গণ্ডি ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
যে রোগের কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই, সেই রোগ সারাতেও বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল ২৩ লাখ টাকার উপর বিল করছে।
আত্মনির্ভর হয়ে উঠছে দেবভূমি ভারতভূমি। পশ্চিমবঙ্গের বেসরকারী হাসপাতালে রোগীকে কোভিড চিকিৎসায় ২৩ লাখ টাকা খরচ করতে হলেও, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে নির্ভেজাল মিথ্যা তথ্য পেশ করে বিশ্ববাসীর সামনে তা তুলে ধরার আর্জি জানাচ্ছেন।
দেশের সমস্ত লাভকারী সংস্থাকে জলের দরে ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিয়ে প্রকৃত অর্থে আত্মনির্ভর হয়ে উঠছে ভারত।