সমাজ কি তার মত প্রকাশের অধিকার হারাচ্ছে – গণমাধ্যম ,যা শক্তি হতে পারতো তা আজ কঠিন ব্যাধি হয়ে উঠছে ?
ড: পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায় ,কলকাতা,১৩ অগাস্ট ২০২০:
কোনো গুরুত্বপূর্ন বস্তু বা বিষয়ের অপব্যবহার চিরকালই তাকে হাস্যকর, গুরুত্বহীন,লঘু করে তোলে।তার বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে এসে ঠেকে।ফেসবুক ব্যবহারকারীদের দ্বারা ফেসবুকের অপব্যবহার এর একটি সাম্প্রতিকতম উদাহরণ।
যে বস্তু রাস্তার তা রাস্তার, যা আড্ডাখানার তা আড্ডাখানার,যা বৈঠকখানার তা বৈঠকখানার এবং যা অন্দরমহলের তা অন্দরমহলের,এই নীতি শুনতে যতই ফিউডাল হোক না কেন তার মধ্যে একটা নিরাপত্তার যুক্তি ছিলো।এখন সব কিছুর সঙ্গে সব কিছু মিলিয়ে দেবার ফিউশন সংস্কৃতির আগমনের ফলে শাক চচ্চড়ি আর বিরিয়ানি মিশে এমন জঘন্য খিচুড়ি হয়ে গেছে যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা পাতে দেওয়া যায় না।
বলা হয় সাধারণের মেধাকে মানুষের নজরে আনার জন্য বিশ্বাসযোগ্য এবং শক্তিশালী গণমাধ্যমের দরকার হয়।একজন প্রত্যন্ত গ্রামের প্রান্তিক মানুষের হয়তো মেধা আছে। হয়তো বা সে ভালো গান গায়,যন্ত্রসঙ্গীতে পারদর্শী, আবৃত্তি করে,নাচে,অভিনয় করে,আঁকে বা মূর্তি গড়ে।অথচ তার উপর মহলে কোনো জানাশোনা নেই,প্রভাব প্রতিপত্তি নেই,লোকবল নেই,অর্থবল নেই বলে মানুষের সামনে,সমঝদারের সামনে তার প্রতিভাকে তুলে ধরতে পারছে না সংবাদপত্র,বিখ্যাত পত্রিকার কাছে পৌঁছনোর বিষয়ে সে বামন। এ ছাড়াও বিভিন্ন বিপন্নতায় বিপদে মানুষকে প্রয়োজনীয় মানুষের কাছাকাছি নিয়ে আসার কত সহজ সমাধান ফেসবুক। মানুষের এরকম এবং আরো অনেকরকম বিপন্নতায় অসহায় অথচ যোগ্য মানুষগুলোর সমস্যার অতি সহজেই যোগ্য সমাধান হতে পারতো ফেসবুক।অথচ তা হলো না।দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবহারে আমরা বুদ্ধিমান মানুষ তার বিশ্বাসযোগ্যতা,তার গুরুত্বকে একদম চিবিয়ে গিলে খেয়ে ফেললাম।
এখন যোগ্য,সৃষ্টিশীল এবং আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন অনেক মানুষই ফেসবুক এড়িয়ে চলেন বা খুলতে ভয় পান।কার বাড়িতে কি রান্না হলো, কার সর্দি, কার পেট খারাপ, কে কার পেছনে লাগছে,কাকে দেখে নিতে হবে,কোন সেলিব্রিটির প্রশংসাতে কার জ্বলন হচ্ছে,কাকে কে হুমকি দিলো,কেন মুড়ি মিছড়ি এক দর হচ্ছে না,এইসব ভেজাল এবং গোঁজাতে ফেসবুক এখন ভর্তি।সৃষ্টি বা ইতিবাচক বস্তু খুঁজে তার রস নেওয়ার মতো ধৈর্য্য বা সময় এখন আর সংস্কৃতিমনস্ক সিরিয়াস মানুষের কোথায়?
আশ্চর্যের ব্যাপার যেটা,তা হলো যারা এসব করছে,তাদের সবার মধ্যেই কিন্তু কোনো না কোনো সৃষ্টিশীলতা বা ইতিবাচক দিক আছে।কিন্তু তা শেয়ার করতে তাদের না আছে মাথাব্যথা,না আছে আগ্রহ।
নিজের পায়ে কুড়ুল মেরে শুধু নিজের ক্ষতি করলে সে যুক্তি হয়তো মেনে নেওয়া যেত।কিন্তু নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার মানসিকতা সত্যিই অসহায় অর্থহীন মেধাবীদের পক্ষে ক্ষতিকর।দোষ আমাদেরই।জুকু দাদার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে কোনো লাভ নেই।
●●●●●●●●●●●
পলাশ_বন্দ্যোপাধ্যায়
১৩.০৮.২০২০