একরাশ দুর্নীতি হতাশা আর বৈষম্যকে সঙ্গী করে ৭৪ তম স্বতন্ত্রতা দিবসের দিকে এগোচ্ছে ভারত
এম রাজশেখর , কলকাতা ,১৪ অগস্ট ২০২০ :– একরাশ দুর্নীতি, হতাশা আর বৈষম্যকে সঙ্গী করে ৭৪ তম স্বতন্ত্রতা দিবসের দিকে এগোচ্ছে ভারত।
প্রধানমন্ত্রী বা বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা সর্বজনসমক্ষে স্বীকার করুন বা অস্বীকার করুন, একথা আজ সর্বজনবিদিত যে দেশের মানুষ মোটেও সুখে নেই।
স্বতন্ত্রতা লাভের এত বছর পরেও দেশটার মূল নামটা কি ভারত, ভারতবর্ষ, হিন্দুস্তান না ইণ্ডিয়া সেটাই ঠিক করতে পারেনি দেশের অতিদিগ্গজ মাতব্বরকুল।
আর সেই ধারাকে সাথী করে দেশে এক নিশান বলবৎ করলেও আজ পর্যন্ত এক বিধান চালু করতে চূড়ান্ত ব্যর্থ কেন্দ্রীয় সরকার।
এই পর্যন্ত পড়েই যাঁরা হাহুতাশ করছেন, তাঁরা একটু ভাবলেই বুঝতে পারবেন দেশের অর্থনৈতিক বিষয় হোক বা অন্য কিছু সবকিছুতেই বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন আমজনতা।
একই শিক্ষাগত যোগ্যতা (যদি স্নাতক-কে উদাহরণ রূপে নেওয়া হয়) নিয়ে একজন সর্বভারতীয় প্রশাসনিক কৃত্বক (আইএএস)-এর রাজ কর্মচারী যে বেতন বা সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন তার থেকে অনেক কম বেতন ও সুযোগ সুবিধা পান রাজ্য প্রশাসনিক কৃত্বক (ডব্লিউবিএসসি)-এর কর্মীবর্গ। তবে এই দুই সম্প্রদায়ের বেতন বৈষম্য যদিওবা সহ্যসীমায় থাকে কিন্তু এর বিপ্রতীপে যে সকল পুরুষ ও মহিলারা একই শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বিভিন্ন আধাসরকারী বা বেসরকারী সংস্থায় দিবারাত্র মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করছেন তাঁদের বেতন ও সুযোগ সুবিধার কথা যত কম বলা যায় ততই মঙ্গল।
স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির কথা যত না বলা যায় ততই মঙ্গল। এই পোড়া দেশে নেতার জন্য রাজনৈতিক দল থাকে আর রাজনৈতিক দলের জন্য নেতা থাকেন কিন্তু সাধারণ জনগণের জন্য কখনোই কেউ থাকেনা।
এই অভাগা দেশে আজ মন্দির মসজিদ গীর্জাতেও পোশাক ও প্রণামীর ওজন দেখে ভোজন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সাধারণ কর্মচারী হোক চাই বিধায়ক বা সাংসদ বেশিরভাগই এখন মানবপ্রেমীর বদলে উৎকোচপ্রেমী হয়ে উঠেছেন। অবশ্য বিচারালযের সাথে যুক্ত রাজকর্মচারীবৃন্দও এই পরিষেবা ক্ষেত্রের বাইরে নয়।
লোকমুখে যতদূর শোনা যায়, বিভিন্ন যোগ্যতার নিরিখে সমস্ত রাজকর্মচারীদের শিক্ষাগুরু হতে পারেন আরক্ষাবাহিনীর কর্মচারীরা। এঁনারা খুল্লামখুল্লা ভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তার মোড়ে মোড়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যেভাবে চালান না দিয়ে টাকা আদায় করেন তা সত্যিই শিক্ষনীয়।
স্বতন্ত্রতা লাভের এত বছর পরেও আজকে দেশের শতকরা ৮৮ ভাগ মানুষ দুবেলা দুমুঠো আহার জোগাড় করতে গলদঘর্ম হন, অথচ একশ্রেণীর মানুষ দেশের টাকা বেনামে বিদেশের ব্যাঙ্কে দিনের পর দিন ফেলে রাখছেন।
একশ্রেণীর ব্যবসায়ী ব্যাঙ্ক আর রাজনৈতিক দলকে হাত করে ব্যাঙ্কের টাকা তুলে নিয়ে চম্পট দিচ্ছেন, অন্যদিকে আর এক শ্রেণীর প্রকৃত ব্যবসায়ী ব্যাঙ্কের কাছে টাকা চেয়েও পাননা।
দেশের প্রশাসন ও আইন উচ্চবিত্ত মানুষদের জন্য যতটা খেলার সামগ্রী ঠিক ততটাই ভারী গরীব মানুষের জন্য।
শুধুমাত্র প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার জন্যই আজও দেশের প্রতিটা বিচারালয়ে ন্যায় বিচার চাইতে গেলেও সে বিচার যে কবে কীরূপে আসবে তা ভগবানও জানেননা।
স্বতন্ত্রতা লাভের এত বছর পর দেশে ‘মন কী বাত’ নামে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে একজন প্রায় বৃদ্ধ ব্যক্তি মাঝেমধ্যে নিজের মনের কথা বলে হালকা হওয়ার চেষ্টা করছেন। অনুষ্ঠানে বয়স্ক ব্যক্তি যত কম শোনেন, বলেন তার চেয়ে ঢের বেশি। ফলতঃ জনগণের চাহিদা সম্পর্কে আলোচনার জায়গায় একজন বৃদ্ধর মনের কথা কানে শুনেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে বাধ্য হচ্ছেন জনগণ। অবশ্য একথাও অস্বীকার করার নয় বলার মতো যুক্তিবাদী শিক্ষিত জনতা কজন আছেন ? বেশির ভাগের জীবন রেশন কার্ড আর স্বাস্থ্য বীমার বাইরে দেশের কোনো উন্নতি হয় কিনা তাই বোঝেনা । হারামে দিলে বিষ দুবার খেতে প্রস্তুত অনেকেই।
স্বতন্ত্রতার এতবছর পরেও দেশের সমস্ত আবাসিকদের নিজস্ব বাড়ি নেই, খাদ্য বস্ত্র-র যথেষ্ট পরিমাণে ঘাটতি রয়েছে। এমনকি শিক্ষা বা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও আশানুরূপ নয়। দেশের মোট জনসংখ্যা যখন প্রায় ১৩৮ কোটি তখন এর ১ শতাংশ জনগণও যদি কোনো একদিন আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে সরকারী বা বেসরকারী হাসপাতালের সকল শয্যা মেলালেও তা অপ্রতুল হয়ে পড়বে। কাটো মানি আর কমিশন দেবতাদের রাজ্যতে জাঁতাকলে মরার জোগাড় হবে ।
স্বতন্ত্রতার এত বছর পরেও আজ দেশের শতকরা ৭৫ শতাংশ জনগণের ক্রয়ক্ষমতা সেভাবে বাড়েনি বললেই চলে।
দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু দেশে সোস্যালিজম কায়েম করতে চাইলেও তাঁর সরকারের বিত্তবান রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দর বাঁধাদানে যেদিন তিনি পিছুপা হন, সেদিন থেকেই ভারতের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধির ভার চলে যায় এক বিশেষ শ্রেণীর মানুষের হাতে। আজ সেই সমাজই দেশের মোট অর্থের ৮৫ ভাগের মালিক। স্বাধীনতার পর থেকেই দেশের থেকে দল বড় ,দলের থেকে পরিবার আর তার থেকেও ব্যক্তি বড় হয়ে আছেন ।
স্বতন্ত্রতার এত বছর পরেও সমাজের প্রত্যেক স্তরে এখনো সেভাবে মিলছেনা দরিদ্রদের মেধার স্বীকৃতি।
মূলতঃ যে শিক্ষা ভারতের নিজস্ব, তাকে দূরে সরিয়ে রেখে অন্য শিক্ষায় দেশবাসীকে শিক্ষিত করার অপচেষ্টার ফলে দেশ নিজেই আজ দিশাহারা। যাকে বলে পাষন্ড পন্ডিতের দল ।
দেশে চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ, খুন আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেলেও আমাজন অববাহিকার নদী, প্রেইরি অঞ্চলের বাণিজ্যিক ফসল, নেদারল্যান্ডস এর প্রধানমন্ত্রীর নাম বা ক্যাটরিনা কাইফের প্রথম ফ্লপ সিনেমার নাম জানা ইণ্ডিয়ান পুলিস সার্ভিস-এর দুঁদে আধিকারিকরা এইসব অপরাধীদের ধরতে পুরো ব্যর্থ। না , ভুল হলো বোধহয় অপরাধ ঘটার আগেই তাঁরা জানেন কোথায় অপরাধ হবে , এটাই জনপ্রিয় কৌতুক ।
বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পররাষ্ট্রগত সমস্যা উত্তরোত্তর বেড়ে চললেও তাতে লাগাম আঁটতে ব্যর্থ দেশের বিদেশমন্ত্রক। ৭০ বছরের ভ্রান্ত বিদেশ নীতির ফসল না সুষমা স্বরাজের অনুপস্থিতি বোঝা দায় ।
কৃষিমন্ত্রকের ব্যর্থতার ফসল দেশের হাজারো কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা। অথচ ডাইরেক্ট জনধন খাতায় টাকা যাচ্ছে ।
বেড়ে চলা উপযুক্ত শিক্ষাহীন ডিগ্রীধারী শিক্ষিত বেকারকুল দেশের দিশাহারা অর্থব্যবস্থার এক খণ্ডচিত্র মাত্র। দেশ কে উন্নত করতে হলে সবার আগে মেধাকে যোগ্যতার মাপকাঠি করতে হবে ছাত্র শিক্ষক সকল কে নিয়োগের ক্ষেত্রে । সর্বশিক্ষা আর সর্বজনের উচ্চশিক্ষা এক নয় ।
চারদিকে নৈরাজ্যময় পরিস্থিতিকে সাথে নিয়ে দেশ এগিয়ে চলেছে ভবিষ্যতের পথে।
‘অসতোমা সদগময়ঃ’-র অমোঘ বাণীকে ধারণ করে আজ মাঝরাতে আমাদের দেশ পালন করতে চলেছে তার ৭৪ তম স্বতন্ত্রতা দিবস।
এই শুভ মুহুর্তে চোখের জল নীরবে মুছে, একবার সবাই মিলে মুক্ত কণ্ঠে বলা যেতেই পারে ‘মেরা ভারত মহান’ |
শৌ মে সে নিন্নায় বেঈমান কি ?