বর্ষাকালে মশাবাহিত রোগ থেকে সাবধানে থাকুন
হীরক মুখোপাধ্যায় (১৯ অগস্ট ২০):- সেই কোন কালে আদি শঙ্করাচার্য বলে গিয়েছিলেন, “নারী নরকস্য দ্বারঃ”, সেই বক্তব্যের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা হলেও নারী বা স্ত্রী মশা যে মানুষকে ক্ষেত্রবিশেষে নরকের দ্বার পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে তা আজ আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিশ্বাস না হলে যেকোনো চিকিৎসকের কাছে গিয়ে জেনে দেখুন, মানুষের দুই ধরণের ম্যালেরিয়া (ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়া, ফ্যালসিফেরাম ম্যালেরিয়া), দুই ধরণের ডেঙ্গু (কমন ডেঙ্গু, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার), দুই ধরণের ফাইলেরিয়া, চিকুনগুনিয়া এমনকি জাপানি এনসেফ্যালাইটিস রোগের জন্যও মূলতঃ দায়ী স্ত্রী মশা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে, “গতবছর আমাদের দেশে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও চিকুনগুনিয়ার মতো রোগে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৪২২ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন যার মধ্যে মারা গেছেন ১৩২ জন।
এই বছর ইতিমধ্যে ৭০ জন এই ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।”
গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীকে সজাগ করতে গিয়ে এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “আসন্ন বর্ষাকালে দেশবাসীকে মশা ও মশাবাহিত রোগ থেকে সজাগ থাকতে হবে।”
বর্ষাকালে আমাদের দেশে মশাদের বাড়বৃদ্ধি হয়ে থাকে। শুনলে অবাক হবেন, পুরুষ মশারা যেখানে একশো শতাংশ শাকাহারি-র মতো লতাপাতার রস শোষণ করে জীবনধারণ করে, সেখানে স্ত্রী মশারা আপনার আমার মতো মানুষদের, গবাদিপশুদের এমনকি পাখিদের রক্ত শোষণ করে জীবনধারণ করে থাকে।
অবশ্য রক্ত শোষণ করার বিষয়ে স্ত্রী মশাদের খুব একটা দোষ দেওয়াও যায় না। রক্তের মধ্যে আছে প্রোটিন, আর এই প্রোটিন শরীরে না গেলে স্ত্রী মশার নারীত্ব জলে যায়। মানুষ,পশু বা পাখির রক্ত শরীরে না গেলে স্ত্রী মশা ডিম পারতে বা বংশবিস্তার করতে অপারগ হয়ে পড়ে।
জীবনবিজ্ঞানের জ্ঞান বলছে, যেকোনো স্ত্রী মশা একবার রক্ত শোষণ করে উদরপূর্তি করে কাছাকাছি বদ্ধ জলে ডিম পাড়তে যায়, ডিম পাড়া হয়ে গেলে আবার রক্ত শোষণ করতে উড়ে চলে।
মশারা কার্বন ডাই অক্সাইড, অকটেনল ও নন অ্যানাল-এর মতো ২৭ ধরণের রাসায়নিকের গন্ধ সমেত মোট ৭২ ধরণের গন্ধকে শনাক্ত করতে পারে। মানুষের নিঃশ্বাস ও ঘাম থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড, অকটেনল ও নন অ্যানাল-এর মতো রাসায়নিক নিঃসৃত হয় বলেই স্ত্রী মশা আকৃষ্ট হয়ে এসে মানুষকে কামড়ায়।
স্ত্রী মশা বাঁচে কমবেশি ১ মাস, পুরুশ মশা বাঁচে বড়োজোর ৭ থেকে ৮ দিন।
সুনিবিড় যোজনা তৈরী করে দেশের সবকটা রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল যদি একযোগে মশা নির্মূল অভিযানে নামে তাহলে দেশ থেকে মশা দূরীভূত হতেই পারে। কিন্তু সেই সদিচ্ছা এখনো পর্যন্ত কোনো স্তরেই দেখা যাচ্ছে না।
শুনতে খারাপ লাগলেও এটা আজ একশো শতাংশ সত্যি যে, ‘নভেল কোরোনা ভাইরাস’ সম্পর্কিত রোগ ‘কোভিড ১৯’-এর কারণে গুঁতোয় না পড়লে, কোনো সরকারী হাসপাতালেই রোগীদের ছুঁয়েও দেখছেননা রাজ্যের সম্মানীয় চিকিৎসককুল। এমতাবস্থায় মশকবাহিত রোগের শিকার হলে সাধারণ মানুষের সমস্যা যে বহুগুণ বাড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
এইধরণের অনভিপ্রেত সমস্যা থেকে বাঁচতে রাতে শোবার সময় মশারি ব্যবহার করা অনেকাংশেই শ্রেয়।