মুক্তি পেল কলকাতার এই মুহূর্তের অন্যতম হেভি মেটাল এবং প্রগ্রেসিভ ব্যান্ড হাফ মেজর এর পঞ্চম নিজস্ব গান ” মাইল ফলক “। এই গানটি সম্পূর্ণ ভাবে ব্যান্ড হাফ মেজর এর নিজস্ব প্রোডাকশন এ মুক্তি পাচ্ছে।
সমস্ত বিশ্ব জুড়ে যে মহামারি কভিড এর দাপট চলছে সেই অসহায় অবস্থাতে এই কাজ সম্পূর্ণ করাই ছিল হাফ মেজর এর কাছে একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। বিশেষ উল্লেখ্য গানটির মিক্সিং ছাড়া প্রায় সমস্ত কাজ প্রত্যেকে নিজের বাড়ি বসে করেছেন এবং সমস্ত কাজটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনে করা একটি কাজ।
মাইল ফলক গানটি লিখেছেন,এবং সুর করেছেন ব্যান্ডের গীটারিস্ট এবং গীতিকার পুষ্পেন্দু চট্টোপাধ্যায় এবং গানটি অ্যারেঞ্জ করেছেন এবং মিক্স মাস্টার করেছেন ব্যান্ডের কি-বোর্ডিস্ট সৌরভ মাইতি। এছাড়া গানটিতে গীটার বাজিয়েছেন অন্নেশ মৈত্র এবং বেস গীটারে সঙ্গদ করেছেন সুমন্ত শেখর সরখেল।
এসরাজ এবং গীটার বাজিয়েছেন পুষ্পেন্দু চ্যাটার্জি। হাফ মেজর এর ভোকালিস্ট দীপায়ন রিকি ঘোষ প্রধান গায়ক হিসাবে গানটিকে দুর্দান্ত ভাবে উপস্থাপন করেছেন যেটি মূলত কোরেন্টিন প্রজেক্ট হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে এবং সমগ্র কাজটি উৎসর্গ করা হয়েছে।গানটির জন্য যে মিউজিক ভিডিও টি বানানো হয়েছে সেটা অসাধারণ ভাবে সম্পন্ন করেছে পৃথা ব্রহ্ম, ভিডিওটির সম্পূর্ণ এডিটিং করেছেন পৃথা ব্রহ্ম।
ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে ঘরে ফিরতে নাহ পেরে পথে আটকে যাওয়া সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের।
তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো গানটি হাফ মেজরের হলেও তারা এই কাজ সবার সাথে ভাগ করে নেওয়ার মত একটা সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তার ফলস্বরূপ হাফ মেজর এর ভোকালিস্ট রিকি ছাড়াও এই গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন কলকাতার নামজাদা বহু বিখ্যাত গুণী শিল্পীরা।তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন অনুপম রয় ব্যান্ডের কিবোর্ড প্লেযার এবং নানা চলচ্চিত্রে মিউজিক কম্পোজার হিসাবে কাজ করা নবারুণ বোস, তাছাড়া গলা মিলিয়েছেন লক্ষ্মীছাড়া ব্যান্ডের অন্যতম প্রধান মুখ গৌরব চট্টোপাধ্যায় ওরফে গাবু, এ ডট ইন্ দা স্কাই ব্যান্ড এর ফ্রন্ট লেডি অ্যানি আহমেদ, তাছাড়া আছেন ইমন সেন ক্যালকাটা ব্লুজ, ইউটিউবার গৌরব তপাদার,সৌরভ চট্টোপাধ্যায়, সৌমদ্বীপ চক্রবর্তী, দ্বীপ সেন, সমন্তোক সেনগুপ্ত,প্রসন্ন সাহা,কৌস্তভ ব্যানার্জী, দেবাশীষ, আত্রে়ই, মজুমদার এবং গানটির শেষে সুন্দর একটি কবিতা পাঠ করেছেন লেখক অভিজিৎ পাল।
গানটির মূলত বিষয়বস্তু হলো এই মহামারীর জন্য দেশে যে হটাৎ করে লক ডাউন করা হয়েছিল তার যে চরম একটা নেতিবাচক দিক আমাদের চোখে পড়েছিল সেটাই ব্যান্ড হাফ মেজর তাদের কাজ মাইল ফলকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। হটাৎ লকডাউন এর ফল স্বরূপ আমরা দেখেছিলাম মাইল এর পর মাইল পথ হাঁটতে থাকা লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকেরা, যারা রোদ, জল,ঝড়, আমফুন এর মত ভয়াবয় বিপর্যয় কে মাথায় নিয়েও পথ হেঁটেছিল তাদের ঘরে ফেরার তাগিদে। তাদের এই লড়াই এর একমাত্র সাক্ষী হিসাবে যারা থেকে গেলো তারা হলো ওই পথ , যেই পথ দিয়ে এই মানুষগুলো ঘরে ফেরার চেষ্টা করেছিল,কিছু পথের মোড় বা বাঁক,কিছু পুকুর,পথের পাশে নিস্তব্ধ নদী।এরাই এই সমস্ত মৃতুভয়েভীত, সন্ত্রস্ত, তটস্থ মানুষ গুলোর লড়াই এর দলিল হিসাবে যুগ যুগ থেকে যাবে।
কেউ কেউ জাতীয় সড়ক কে পথ হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন আর কেউ রেলপথে খালি পায়ে ফোস্কা নিয়ে হেঁটে ছিলেন ঘরে ফেরার ডাকে সাড়া দিয়ে। একদিকে ছিল করোনা রোগের মৃত্যু ভয়,অন্যদিকে কর্মহীন হওয়ার ভয়। সেদিন অনাহারী ক্ষুধার্ত পেটের কান্না আর তাদের কানে এসে পৌঁছায়নি কারণ পদে পদে ছিল মৃত্যু ভয়। আর পরিণাম কি হলো আমরা জানি ! মাঝ রাতে ক্লান্ত শ্রমিক যখন রেল লাইনে ঘুমিয়ে পড়েছিল তখন কেটে কুচি কুচি করে চলে গেছিলো সেই রেলগাড়ি যেটা কিনা পারতো এই সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে,কিন্তু দেশ পারেনি,দশ পারেনি,তবে আমাদের মন নাড়িয়ে দিয়ে গেছে এই ঘটনা।যখন দেখেছি ভিনদেশ থেকে অনেক মানুষ বিমানবন্দরে নেমেছে বাড়ি ফিরেছে,আর তখনই দেশের প্রায় সমস্তপ্রান্তে এই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ রেল গাড়ির তলায় কাটা পড়েছে।
একই সাথে চোখে পড়ে মানুষের অমানবিক চেহারা।
যে সমস্ত ডাক্তার, নার্স আমাদের পরিসেবা দিচ্ছিলেন কিম্বা বলা ভালো আজও দিয়ে চলেছেন তাদেরকেই বাড়ি ছাড়া করার চক্রান্ত করেছেন অনেক বাড়ির মালিক,তাদের রাস্তায় বের করে দেওয়ার মত চরম সিদ্ধান্ত নিতে আমার দুই মিনিট ভেবে দেখিনি। মানুষ এক মুহূর্তে আদিমতায় ফিরে গেছে।একটা কোভিড,একটা লকডাউন দেখিয়ে দিয়েছে আমরা কতটা বন্য।
এই অবস্থাকে ভবিষ্যত প্রজন্মের মানুষের কাছে একটা প্রামাণ্য হিসাবে রেখে যাওয়ার প্রচেষ্টা মাইল ফলক। মাইল ফলক সেই দলিল যে শুনেছিল কয়েক লক্ষ খালিপায়ের শব্দ, যে দেখেছিল ভুখা পেটের আর্তনাদ।
যে পথ দিয়ে এই মানুষ গুলো ঘরে ফিরেছিল সেই পথ এবং সেই পথের ধারের ফলকের সংখ্যা তাদের সারা জীবনের ইতিহাস নাকি অঙ্ক ? জানিনা কি বলবো
Link to the Facebook for the band.