চোখের জলের হয় না কোনো রং – একটি সাফল্যের পিছনে শত লড়াই আর ব্যর্থতার কান্না
ড: পলাশ বন্দোপাধ্যায় , কলকাতা,২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
খ্যাতি নামক বস্তুটি অতি বিচিত্র।যে ব্যক্তির খ্যাতি সৎ পথে মেলে,তাঁর অতীতের দিকে তাকালে,যিনি তাকান তাঁর যদি সাধারণ অনুভবও থাকে,তাহলে,অধুনা খ্যাতিমান মানুষটির দাঁতে দাঁত চেপে নিরন্তর লড়াই চোখে পড়েই,যার সিংহভাগই তাঁরএকার লড়াই।সঙ্গে অসাধারণ মেধার ব্যাপারটা তো বটেই, ভাগ্যের আনুকূল্যও কিছুটা কাজ করে।সে লড়াইয়ে কিছু মানুষ জিতে সাফল্যের শিখর ছুঁয়ে ফেলেন,কিছু মানুষ থেকে যান মধ্য মানের।কিছু লড়াই নিজের ও নিজের পরিবারের ভাত কাপড়ের সংস্থানের পরেই শেষ হয়।কিছু মানুষ ব্যর্থ হন।ব্যর্থতা,এক্ষেত্রে দুঃখজনক হলেও বাস্তব সত্য।অন্য মানুষের তাঁদের ব্যর্থতায় মনে মনে দুঃখপ্রকাশ করা ছাড়া কিছু করার থাকে না।
ভিন্ন এক ধরণের ছদ্ম খ্যাতি আছে যা পিছনের দরজা দিয়ে অর্জন করা।মানুষটির সম্বন্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সফল প্রচার,তাঁর বাবা মায়ের পরিচিতি এবং পারিবারিক স্বচ্ছলতা এই তিনটি ফ্যাক্টর এদের খ্যাতি দিলেও এর পিছনে মেধা বা পরিশ্রম এর কোনোটিই থাকেনা।এদেরকেও মানুষ চেনেন ।হেয় করেন এবং এরা সমাজে প্রতিপত্তিশালী হলে, এড়িয়ে চলেন।
আমরা সাধারণ সফল মানুষ যাঁরা, তাঁরা তৃতীয় ধরণের সৎ লড়াইয়ের ফলশ্রুতি।অর্থাৎ খ্যাতিমানদেরই পিছনের সারির প্রতিনিধি।অথচ আফসোস, লড়াই ব্যাপারটার প্ৰতি আমাদের বেশির ভাগই শ্রদ্ধাশীল নই।উল্টে খ্যাতিতে প্রতিষ্ঠিতদের প্ৰতি ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে তাঁদের চরিত্রের ফাঁকফোকর গুলো খুঁজে বেড়াই এবং টেনে নীচে নামানোর চেষ্টা করি।প্ৰতি মুহূর্তে প্রমাণের চেষ্টা করি,তাঁদের অর্জন সঠিক উপায়ে এবং সঠিক পথে হয়নি।যাঁরা এর থেকে বিরত থাকি তাঁরা সংখ্যায় কম এবং মনের দিক থেকে শিক্ষিত, উদার।
এই পরিপ্রেক্ষিতে একটা জিনিস কেবল মনে রাখা দরকার। এই পুরোনো নীতিকথাটি চিরকালই প্রাসঙ্গিক যে,কারো দিকে অভিযোগের বা চক্রান্তের একটি আঙুল তুললে বাকি আঙুল কিন্তু নিজের দিকেই থাকে নিজের অজ্ঞাতে।এতে করে অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করার থেকে নিজেকেই হীন প্রমাণিত করাটাই বেশি হয়।
কোনো খ্যাতিমান মানুষের কম যোগ্য উত্তরসূরির জন্য অথবা মানুষ সৃষ্ট তথাকথিত নিচু জাত হওয়ার কারণে তাঁর লড়াই অর্জন ও স্বীকৃতি যে মিথ্যে হয়ে যায়না,যাঁরা সঠিক অর্জনের অর্থ বোঝেন তাঁরা মানেন।
আসুন,আমরা মানুষের সৎ এবং সত্যি লড়াইকে শ্রদ্ধা করি। কুর্নিশ জানাই।অশ্রদ্ধার দ্বারা নিজেদের মহান প্রতিপন্ন করা যায় না।অমিতাভ বচ্চন থেকে শুরু করে মনোরঞ্জন ব্যাপারী (Manoranjan Byapari) সবার লড়াইয়ের ক্ষেত্রেই এই সার সত্য প্রযোজ্য।
●●●●●●●●●●●
#পলাশ_বন্দ্যোপাধ্যায়,২৩.০৯.২০২০