ঢালাইশিল্পে রাজ্যের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল
২৬ সেপ্টেম্বর, কলকাতা: জাতীয় শিল্প সংস্থার পুরোধা দ্য ইনস্টিটিউট অভ ইন্ডিয়ান ফাউন্ড্রিমেন (আইআইএফ)। বিভিন্ন ফাউন্ড্রি, ফাউন্ড্রি যন্ত্রপাতি, উপাদান এবং পরিষেবা প্রদানকারীদের পাশাপাশি প্রথম সারির শিক্ষাবিদ ও শিক্ষাসংস্থার তিন হাজার সদস্য নিয়ে গঠিত এই সংগঠন ফাউন্ড্রি শিল্পের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। আইআইএফ সক্রিয়ভাবে যুক্ত ওয়ার্ল্ড ফাউন্ড্রি অর্গানাইজেশনের সঙ্গে। ভারতে ঢালাইশিল্পে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং প্রতিযোগিতা গড়ে তোলার পাশাপাশি ব্যবসায়িক কাজকর্ম বাড়িয়ে তুলতে ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই সংগঠনের।
দ্য ইনস্টিটিউট অভ ইন্ডিয়ান ফাউন্ড্রিমেনের ২০১৯–২০ সালের ৬৯তম বার্ষিক সাধারণসভা অনুষ্ঠিত আজ, শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর। সভায় পেশ ৩১ মার্চ ২০২০ আর্থ বর্ষে শেষ হওয়া বার্ষিক রিপোর্ট ও হিসাবনিকাশ। সভায় জাতীয় সভাপতি হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন মিঃ বিজয় বেরিওয়াল। তিনি ২০২০–২১–এর সংগঠনের জাতীয় স্তরের কার্যনির্বাহীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন।
১৫ শতাংশ অংশীদারিত্ব নিয়ে ঢালাইশিল্পে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে। প্রথম স্থানে রয়েছে চীন। তাদের অংশীদারিত্ব ৩৫ শতাংশ।
এই অতিমারীর সময় ঢালাইশিল্পও চরম সঙ্কটের মুখে। কারণ সেগুলোর বেশিরভাগই অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এমএসএমই) শিল্পোদ্যোগ। যে সব জায়গায় এই সব কারখানা অবস্থিত যেহেতু লোকাল ট্রেন চলছে না এবং সীমিত বাস পরিষেবা চালু ফ্যাক্টরি–ফাউন্ড্রিতে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কাজও হচ্ছে না। দক্ষিণ ও পশ্চিমে যে সব ঢালাই কারখানা রয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের কারণে সেগুলো এখনও সমস্যায়। খুব কম পরিযায়ী শ্রমিকই ফিরে এসেছেন।
অটোমোটিভ ক্ষেত্রে মন্দার কারণে কোলাপুর, বেলগাঁওয়ের মতো অনুসারী শিল্পাঞ্চলও ক্ষতিগ্রস্ত। যে সব ঢালাই কারখানা রেলের পোলিং স্টক ঢালাইয়ের কাজে যুক্ত তারা বেশি রকম ক্ষতিগ্রস্ত, কারণ ভারতীয় রেলের কাছ থেকে রোলিং স্টক কাস্টিংয়ের বরাত আসছে না।
এসব সত্ত্বেও আইআইএফ প্রবল সম্ভাবনাময় পশ্চিমবঙ্গের ঢালাইশিল্প সম্বন্ধে খুবই ইতিবাচক। রাজ্যে মূলত হাওড়া, দুর্গাপুর ও আসানসোলে রয়েছে ৩৫০–এর বেশি ঢালাই কারখানা, যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক লাখের বেশি লোকের কর্মসংস্থান করে। আর সুখের কথা, বাংলার ঢালাইশিল্পে তেমন কোনো প্রভাব পড়ছে না, কারণ তা স্থানীয় শ্রমিক–নির্ভর।
এই উপলক্ষে ভাবী জাতীয় সভাপতি (২০–২১) বিজয়শঙ্কর বেরিওয়াল বললেন, ‘রাজ্য সরকার ‘শিল্পশ্রী’ নামে নতুন যে জাতীয় শিল্পনীতি এনেছে আইআইএফ তার উচ্চ প্রশংসা করছে। এই শিল্পনীতির কারণে রাজ্যে রানীহাটি, হাওড়ার আমতা রোড, হাওড়ার উলুবেড়িয়া ও রানীগঞ্জ–আসানসোল এলাকার ফাউন্ড্রি পার্কে নতুন ১২৫টির কাছাকাছি কারখানা গড়ে উঠতে চলেছে। প্রস্তাবিত এই ঢালাইশিল্পে আনুমানিক বিনিয়োগ হবে ২৫০০ কোটি টাকা এবং আগামী দু–তিন বছরের মধ্যেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২০ হাজারের বেশি লোকের কর্মসংস্থান হবে। এখানে আমরা আবার আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাই রাজ্য সরকার, এমএসএমই বিভাগ ও হাওড়া জেলা প্রশাসনকে।’
ফাউন্ড্রি পার্কে ফাউন্ড্রি ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে দক্ষতা বিকাশের এক অভিনব উদ্যোগও শুরু হয়েছে, যা বাংলার যুবকদের আরও দক্ষ করে তুলবে। হাওড়ায় অবস্থিত ঢালাই কারখানাগুলো বেশিরভাগই যে সব জিনিস উৎপাদন করে তা চটকল, চা–বাগান, তেলকল ও ইস্পাত কারখানায় ব্যবহৃত হয়, সঙ্গে বিশ্বের বাজারের জন্য স্যানিটারি সামগ্রীও।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলার ঢালাইশিল্পের পক্ষ থেকে আইআইএফ রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করবে ঢালাইশিল্পে একটু কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করে দিতে, যাতে তারা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে পারে। কারণ বিশ্ববাজার বর্তমানে চীনের থেকে ভারতের জিনিস কেনায় বেশি আগ্রহী।’
প্রাক্তন সভাপতি রবি সেহগল জানালেন, চীনের সঙ্গে সম্পর্কে অনিশ্চয়তার কারণে আমেরিকা ও ইউরোপের ক্রেতারা ভারত থেকে জিনিস কেনায় বেশি আগ্রহী। ফলে ফাউন্ড্রিশিল্প লাভবান হবেই। তিনি বললেন, ‘বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে। যদিও ভারতীয় ঢালাইশিল্পে আর একটু উন্নতি দরকার এবং দরকার যান্ত্রিক সুবিধা গড়ে তোলার। ঢালাই সামগ্রী আগস্ট–সেপ্টেম্বর ২০২০ সালেই যে পরিমাণ রপ্তানি হয়েছে তা ২০১৯ সালের একই সময়কালের মাত্রা ছুঁয়ে ফেলেছে এবং দ্রুত বেড়ে চলেছে।’
আগামী ইন্ডিয়ান ফাউন্ড্রি কংগ্রেস ও ফাউন্ড্রি এগজিবিশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ২০২১–এর ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু অতিমারীর কারণে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় সরকার এখনও প্রদর্শনী উদ্বোধনের দিন ঘোষণা করে নি এবং তা নিয়ে একটি এসওপি গঠন করেছে। কলকাতায় অনুষ্ঠিতব্য ৬৯তম আইএফসি–র পরিচালন কমিটির চেয়ারম্যান অনিল ভাসওয়ানি জানালেন, পূর্ব ভারতের সমস্ত শিল্পদ্যোগী ওই মহা–অনুষ্ঠানের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে, যা ভারতের ঢালাইশিল্পের বৃদ্ধি ও আধুনিকতাকে তুলে ধরবে। যদিও ইউরোপ ও চীন প্রদর্শনী চালু করে দিয়েছে। ভারতে তা হতে পারে ২০২১–এর গোড়ায়।
সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত বক্তারা:
মিঃ বিজয়শঙ্কর বেরিওয়াল— ভাবী জাতীয় সভাপতি ২০২০–২১
মিঃ রবি সেহগল— বিদায়ী সভাপতি
মিঃ অনিল ভাসওয়ানি— ৬৯তম আইএফইএক্স/আইএফসি পরিচালন কমিটির চেয়ারম্যান
মিঃ প্রদীপ মাধোগারিয়া— জাতীয় কোষাধ্যক্ষ (২০–২১)
মিঃ নবনীত অগ্রবাল— সাম্মানিক সম্পাদক (২০–২১)