কোভিড বিষয় হু(WHO) গুরুত্বপূর্ণ কিছু নির্দেশ দিলেন – আপনার শিশু কিশোর কিশোরীএবং পরিবারের জন্য
ড:পলাশ বন্দোপাধ্যায় ,কলকাতা , ৫ অক্টোবর ২০২০
এ যাবৎ কাল পর্যন্ত প্রাপ্ত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক তথ্যের ভিত্তিতে এটা এখন আমরা জেনে গেছি যে জীবনের প্রথম ভাগে,অর্থাৎ শিশু ও কিশোর বয়সে করোনা আক্রান্ত হয় যারা তাদের রোগ জনিত ঝুঁকির সম্ভাবনা বড়দের তুলনায় অনেক কম এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের কোনো উপসর্গ থাকে না অথবা সাধারণ সর্দিকাশির মতো উপসর্গ থাকে।তাতে কিন্তু যে পরিণত বয়স্ক মানুষদের সঙ্গে তারা থাকে,তাদের ঝুঁকি কমে না,বরং বাড়ে।কারণ,উপসর্গহীন বা সাধারণ সর্দিজ্বরের উপসর্গের করোনা আক্রান্ত কম বয়সীরা গেরিলা যোদ্ধা বা গুপ্ত শত্রুর মতো, যারা অতর্কিতে অতি সহজে বড়দের সংক্রমণের মাধ্যম হয় । সুতরাং তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তা নয় আবার ঢিলেঢালা মানসিকতাও নয়।চলুন নিজেদের মতো করে বুঝে নি এই পরিস্থিতিতে তাদের প্রতি আমাদের কি দায়িত্ব ও কর্তব্য।
■অপরিণতদের অভিভাবক, অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচারক পরিচারিকাদের দায়িত্ব নিয়ে তাদের শেখাতে হবে,কি ভাবে নিজের হাত পরিষ্কার রাখতে হয়।কেন মুখে হাত দিতে নেই।যাদের এখোনো বোধ হয়নি,তাদের ব্যাপারটা নিজেদের খেয়াল রাখতে হবে।এক্ষেত্রে নিজেদের ভালো রোল মডেল হতে হবে।কারণ ছোটরা দেখে শেখে।হাত ধোয়াটাকে পারিবারিক অভ্যাস করুন।সাবান দিয়ে দু মিনিট কনুই পর্যন্ত।
■এই #কোভিড_19 এর দিনগুলিতেও বাচ্চাদের অন্য শারীরিক বা মানসিক সমস্যাগুলি যে হবে না এমন তো নয়! সেক্ষেত্রে আপনার যদি মনে হয় যে তার সুরাহা ডাক্তারবাবুর সঙ্গে ফোনে কথা বলে সম্ভব ,সেক্ষেত্রে তাই ই করুন।অনাবশ্যক তাকে বাইরে বের করবেন না।ঝুঁকি বাড়বে।তবে এটা স্মরণে রাখতে হবে প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে অথবা ভিডিও কলিং এর মাধ্যমে চিকিৎসা সামনাসামনি বসে চিকিৎসার মতো অত ফলদায়ী বা ফলপ্রসূ নাও হতে পারে।সেক্ষেত্রে পারস্পরিক দোষারোপ অথবা অভিযোগের আঙুল তোলা থেকে বিরত থেকে সহনশীল হতে হবে।ডাক্তারবাবু বললে দরকারে হাসপাতালে ভর্তিও করতে হবে।ডাক্তারবাবুর পরিষেবা এবং তাঁকে দেয় আপনার পারিশ্রমিক ও শ্রদ্ধার মধ্যে সুন্দর সামঞ্জস্য থাকা কাম্য।
■একটা বিষয়ে অবশ্য একটু ঝুঁকি নিয়েই এগোতে হবে অভিভাবকদের।তা হলো বাচ্চাদের টিকাকরণ।টিকাকরণ কিন্তু বেশিদিন ফেলে রাখা যায় না।স্থিরীকৃত তারিখের মাস তিনেকের মধ্যে তা করে ফেলাটা বাঞ্ছনীয়।নয়তো অন্য রোগগুলির ঝুঁকি বেড়ে সমস্যা আরো জটিল হবে।সেক্ষেত্রে আপনার বাচ্চার দায়িত্বে থাকা ডাক্তারবাবু অসুস্থ বাচ্চা না দেখে যেদিন শুধুমাত্র টিকা করছেন ,আগে কথাবার্তার ভিত্তিতে এবং বাইরে বেরোনোর সবরকম সাবধানতা অবলম্বন করে তাঁর কাছ থেকে তা নিয়ে নেবেন অথবা প্রয়োজনে নিরাপদ কোনো ক্লিনিক থেকে,আপনার ডাক্তারবাবুর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তা করবেন।
■যে সব মানুষেরা সর্দিজ্বর বা হাঁচি কাশিতে ভুগছেন তাঁদের থেকে আপনার বাচ্চাকে দূরে রাখতে হবে।খুব জরুরি।
■কোনো কারণে বাচ্চা নিয়ে বাইরে বেরোতে হলে খুব বিশ্বস্ত ভাবে অন্যদের সঙ্গে ন্যূনতম ছ ফুট দূরত্ব বজায় রাখবেন।ভিড় জায়গায়,তা সে শপিং মল,রেস্তোরাঁ,নিমন্ত্রণ বাড়ি,ধর্মস্থান, সিনেমা হল যেখানেই হোক না কেন,যাবেন না।
■অনেক সময় দু বছর বা তার বেশি বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বেশ কঠিন হয়।সেক্ষেত্রে পুরু ও মোটা কাপড়ের তৈরি মাস্ক দিয়ে বাচ্চার নাক এবং মুখ ভালো করে ঢেকে দিতে হবে।নিয়মিত সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে সেই মাস্ক পরিষ্কার করতে হবে।হাত মাঝে মাঝেই ষাট থেকে আশি শতাংশ আইসো প্রোপাইল এলকোহল থাকা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
■যেসব জায়গাগুলিতে বাচ্চারা ভীষণ হাত দেয় ,যেমন টেবিল,চেয়ার,দরজার হাতল,সুইচ,রিমোট,ডেস্ক,বেসিন এবং সিঙ্ক; এসব জায়গাগুলো মাঝে মাঝে জীবাণুমুক্ত করুন।
■জামা কাপড় ও খেলনা নিয়মিত সাবান দিয়ে অথবা নির্দেশ অনুসারে পরিষ্কার করুন।শুকিয়ে নিন।
■স্কুল যাওয়া, স্বাস্থ্যের ও রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি না কমা পর্যন্ত কোনো মতেই কাম্য নয়।বাচ্চাদের এমন আত্মনিয়ন্ত্রণ নেই যে তারা নিজেদের ঝুঁকি কমাতে ভিড় এড়িয়ে চলবে।এখন তো বেশির ভাগ স্কুলে অন লাইন পড়াশোনা হচ্ছে।
■যদি কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা আগে থেকে করে রাখা থাকে, এবং তা যদি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় না হয়,তাহলে বাতিল করুন।আর্থিক ক্ষতির থেকে নিরাপত্তা বেশি জরুরি।
■আপনার পরিবারের কোনো সদস্য যদি এমন পেশায় যুক্ত থাকেন যাঁর সমাজ থেকে বা কর্মক্ষেত্র থেকে রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সেক্ষেত্রে দায়িত্ব নিয়ে বাচ্চাদের তাঁর থেকে দূরত্বে রাখুন।আবেগের থেকে নিরাপত্তাকে গুরুত্ব বেশি দিন।
■বাড়ির অন্যান্য বয়স্ক গুরুজন যাঁরা আপনার সঙ্গে থাকেন না,বাচ্চাদের নিয়ে বা নিজেরা আপাতত তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে যাওয়াটা বাতিল করুন।নতুবা দুই তরফেরই ঝুঁকি বাড়বে।কথাবার্তা ফোনে বা ভিডিও কলের মাধ্যমে হোক।বড়রা কার্যকারণ ভালো বোঝেন।যুক্তি ভালো বোঝেন।
■নিজেদের কমপ্লেক্সের বাচ্চারা নিজেদের মধ্যে খেলাধুলা দৌড়দৌড়ি করুক ক্ষতি নেই।কিন্তু বাইরে যাওয়া নয়।তারা এইসময় ছবি আঁকা,গান গাওয়া,সিনেমা দেখা,ফোনে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা,বাবা মা’র সঙ্গে গল্প এ ব্যাপারে নিজেদের নিয়োজিত রাখুক,তাদের মন ভালো থাকবে।অভিভাবকেরা একটু বেশি মাত্রায় সহনশীল হবেন অনুগ্রহ করে,যদিও ব্যাপারটা কঠিন।বাচ্চাদের, বাড়িতে লাগাতার থাকার জন্য অবসাদ হওয়া বিচিত্র নয়।আপনাদের আরো বেশি সেনসিটিভ হয়ে তা সামলাতে হবে।আপনারা ছাড়া ওদের তো কেউ নেই।এই বোধ থাকলে নিশ্চয় ই আপনারা তা পারবেন।
■ভ্যাক্সিন তৈরি কবে হবে এবং কবে সর্ব সাধারণের কাছে পৌঁছবে তার ঠিক নেই।তাই আবার বলছি,রক্ষা পাওয়ার সবথেকে কার্যকরী উপায় হলো হাত ধোয়া,শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সঠিক মাস্ক পরা।
বাড়ির সবাই সুস্থ থাকুন।সামনের দিন তো ?আছেই সব কিছু পুষিয়ে নেওয়ার জন্য তাইনা? পরবর্তীতে আবার অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে আসবো।ধন্যবাদ।
***WHO ০১ অক্টোবর ২০২০ বিশেষ সংবাদ মাধ্যম আলোচনা চক্রে ড:পলাশ বন্দোপাধ্যায় IBG NEWS এর প্রতিনিধি হিসাবে ইউরোপের এই প্রেস মিটে অংশ নিয়েছিলেন । সেই বিশেষ সভা ও তার দীর্ঘ অভিজ্ঞাতার নির্যাস এখানে তুলে দেয়া হলো । ড: বন্দোপাধ্যায়ের ব্যাস্ততার মধ্যে এই সময় দেয়ার জন্য আমরা সকলে আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ ।***