ভোকাল ফর লোকাল – লাইফ লাইন লোকাল না করোনা স্পেশাল
ড: পলাশ বন্দোপাধ্যায় ,কলকাতা , ১০ নভেম্বর ২০২০
এবার রাজ্য জুড়ে লোকাল ট্রেন চলাচলের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল।পর্যায়ক্রমে তা স্বাভাবিক করা হবে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের এতে প্রভূত সুবিধা হবে মনে করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন অনেক তত না ভাবা মানুষ।পাবলিক ট্রেন, পাবলিক বাস এগুলো না চলার কারণে সাধারণ কর্মী মানুষ যদি তাদের কর্মস্থলে পৌঁছতে না পারেন তাহলে সরকারি বেসরকারি কর্মস্থলগুলি চলবে কি করে,এই তাদের অকাট্য যুক্তি।
অন্য,তুলনায় চিন্তাশীল ব্যক্তিদের উল্টো যুক্তি হলো এতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠবে।শীতে এমনিতেই রোগের প্রকোপ বাড়বে।তার উপর সামাজিক দূরত্ব শিকেয় ওঠার ফলে কি যে হবে তা আর বলে লাভ নেই।সে যাই হোক এই ইস্যুতে বাজার এখন সরগরম। আমরা সর্বদা একটা লড়াই চাই।লড়াই আমাদের রক্তে।অস্থি মজ্জায়।শেষমেশ ট্রেন চলাচল নিয়ে প্রশাসন যথারীতি সামান্য তামঝাম করে শেষমেশ গভীরে না ঢুকে মানুষের কাছে অপ্রিয় না হয়ে উপর উপর আলগা কিছু কথা না বলে সযত্নে হাত ধুয়ে ফেলেছেন।তাঁরা বলে দিয়েছেন ট্রেনে উঠতে গেলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
প্রবল ভিড় করা যাবেনা।যে সংখ্যায় ট্রেন চলে তার থেকে কম সংখ্যায় চালানো হবে যাতে তুলনায় কম সংখ্যক নাগরিক রাস্তায় বেরোতে পারেন ইত্যাদি প্রভৃতি।বাকিটুকু লেখার আগে সবিনয়ে জানাই আমি কোনো গোষ্ঠী বা রঙের ধামাধরা নই।একজন সাধারণ মানুষ।মূলত সে কারণেই আমার কিছু খটকা।মূল যে খটকা তা হলো,এই যে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া,শারীরিক দূরত্ব বজায়ের লক্ষ্মণরেখা,রোগ প্রতিরোধে এই তিন সহজ পথের দিশা যারা বিশ্বের মানুষকে দিয়েছেন তাঁরা চিকিৎসা শাস্ত্রে পড়াশোনা ও গবেষণা করা আন্তর্জাতিক স্তরের মানুষ।কোনো দেশের কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা এলেবেলে মানুষ নন।
আমরা ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি,কোনো তাত্ত্বিক বা টেকনিক্যাল বা বিজ্ঞান বিষয়ক ব্যাপারে কোনো সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞ ডেকে তাঁর কাছ থেকে সে সমস্যা সমাধানের পথ জেনে নিয়ে সেভাবে চলতে হয়।ইচ্ছে খুশি মতো চলা যায়না।আমাদের প্রশাসন অথবা তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবশ্য সেসবের কোনো বালাই নেই।
অথচ সমস্যা নিয়ে দু একবার মাইক ফুঁকে বলে দিলে বা দু চার জায়গায় পোস্টার দিলেই যে সাধারণকে তা মানানো যায়না,তার জন্য রীতিমতো কড়া আইন প্রণয়ন করতে হয় তা তাঁরা বিলক্ষণ জানেন।বিষয় হলো বাস চলাচলের ক্ষেত্রে যেমন সরকারি ও প্রশাসনিক নির্দেশিকা মানা হয়নি,উপুরচুপুর ভিড় হয়েছে , ট্রেনের ক্ষেত্রে সে সমস্যা আরো ভয়ানক ভাবে হবে।অফিস টাইমে লোকের গায়ে লোক এসে পড়বে।বিপদ হবে আরো অনেক বেশি।
এ রোগ যতই মারাত্মক বা দীর্ঘস্থায়ী হোক,চিরকালীন নয়।কালের নিয়মে একদিন বিদায়ও নেবে।ততদিনের জন্য সাধারণ মানুষের অন্ন সংস্থানের জন্য যদি সেই মানুষকেই বেরোতে হয় ,তাহলে ভোটে নির্বাচিত সরকারের কাজটা কি? শুধু আস্ফালন ও মাতব্বরি করা? বগল বাজানো?আর ধন্য বিপ্লবী ও অতি বিপ্লবী চেতনার সাধারণ অগভীর এসকেপিস্ট মানুষ!কোথায় তাঁরা এ বিপন্নতার সময় সাধারণ মানুষের খাওয়া পরার ব্যবস্থা করার দাবি নিয়ে আন্দোলনকে সরকার মুখী করবেন,তা নয়,সাধারণ মানুষকে আত্মঘাতী হতে বিভ্রান্ত করছেন!দেশের যোগ্য উচ্চবিত্তের মানুষ নাহয় নিজেরটা চালিয়ে নিলো,কিন্তু দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলোর রেশন যে তাঁদেরই জোগাড় করতে হবে,এ ব্যাপার না বোঝার ভান করে প্রশাসন ঘুমালে তাদের ঘুম ভাঙানোর দায়িত্ব যে আমাদেরই, তা আর আমরা কবে বুঝবো?
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
১০.১১.২০২০