আয় ঘুম যায় ঘুম
ড: পলাশ বন্দোপাধ্যায় ,কলকাতা, ৩ ডিসেম্বর ২০২০
■বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সাধারণতম সমস্যা হলো ঘুম সংক্রান্ত সমস্যা।হয় বেশি ঘুম বা ঘুম কম হওয়া।
■যেমন মাথার তরঙ্গ প্রবাহ বোঝার জন্য ই.ই.জি, হৃদপিণ্ডের তরঙ্গ প্রবাহ বোঝার জন্য ই.সি.জি, সেরকম ঘুমের তরঙ্গ প্রবাহ
বোঝার জন্য ‘পলিসমনোগ্রাফি’।
■নবজাতক দিনরাত মিলে গড়পড়তা ষোলো ঘন্টা ঘুমোয়।তারপর ঘুম কমতে কমতে পরিণত বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ঘুমের পরিমান গড়পড়তা সাত থেকে আট ঘন্টায় দাঁড়ায়।প্রৌঢ়ত্ব এবং বৃদ্ধত্বে ঘুম আরো কমে।
■কারো শোয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম চলে আসে,কারো অনেক সময় বাদে ঘুম আসে।এটি ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন ভিন্ন।দেরিতে ঘুম আসলে দেরিতে ঘুমও ভাঙে।
■শারীরিক পরিশ্রমের পর ঘুম তাড়াতাড়ি চলে আসে।কায়িক শ্রম কম হলে তার ঠিক উল্টোটা হয়।
■ঘুম দুরকম,অগভীর ঘুম এবং গভীর ঘুম।গোটা রাতের ঘুম এই দুটি ঘুমের মিশ্রণ।ঘুমোতে যাওয়ার প্রথম এক তৃতীয়াংশ ঘুম সাধারণত গভীর হয়,বাকি সময়টা দুটো ঘুমের মিশ্রণ।অগভীর ঘুমে মানুষ বেশি ছটফট করে,তার অক্ষিগোলক দ্রুত ওঠানামা করে।হৃদপিন্ড ও নিঃশ্বাসের গতি বেশি হয়।গভীর ঘুমে তার ঠিক উল্টোটি হয়।
■মোটের উপর ষাট থেকে সত্তর শতাংশ ঘুম গভীর এবং তিরিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ ঘুম অগভীর হলে সেটা শরীরের পক্ষে ঠিকঠাক।
■দুটি প্রধান রাসায়নিক বস্তু যা কিনা জেগে থাকা এবং ঘুমের জন্য দরকার তা হলো যথাক্রমে ‘এসিটাইলকোলিন’,এবং ‘গামা এমিনো বিউটাইরিক এসিড’।প্রথমটি জেগে থাকার সময় এবং দ্বিতীয়টি জেগে থাকার সময় শরীরে বেশি ক্ষরিত হয়।
■ঘুম বেশি হওয়া এবং ঘুম ঘুম ভাব একটি রোগ।এর নাম সমনোলেন্স।হরমোন সংক্রান্ত সমস্যা,অবসাদ, স্নায়বিক সমস্যা, ডায়াবেটিস এবং আরও অনেক কারণে এটি হয়।চিকিৎসকের মতামত ও চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ন।
■কম ঘুম হওয়ার সমস্যা এখন পৃথিবী জুড়ে।এর প্রধানতম কারণগুলি হলো স্ট্রেস,দূষণ(বায়ু,পরিবেশ এবং শব্দ),অবসাদ, যে কোনো ক্রনিক রোগ, দুশ্চিন্তা,উত্তেজনা,অশান্তি।কম ঘুমের কারণে শরীরের সব সিস্টেমের কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়,অর্থ সার্বিক শারীরিক ও মানসিক বিকৃতি হয়।দৈনন্দিন ও বৌদ্ধিক কাজকর্ম বিঘ্নিত হয়।
■মেলাটোনিন আরো একটি রাসায়নিক যা ‘গামা এমিনো বিউটাইরিক এসিড’ এর
কার্যকারিতাকে সহায়তা করে।ইদানীং রাতে তীব্র আলোর কারণে,শব্দ দূষণের কারণেও শরীরে এই হরমোনের ক্ষরণ বিঘ্নিত হচ্ছে যা অতীব দুশ্চিন্তার বিষয়।
■ঘুমের সময় একটা বয়স পর্যন্ত শরীরে গ্রোথ হরমোনের ক্ষরণ বেশি হয়,যা বৃদ্ধি সহায়ক।ঘুমের সময় শরীর তার ছোটখাটো ব্যাথাবেদনা,চোট আঘাত নিজে নিজে সারিয়ে ফেলে।
■ দীর্ঘদিন ধরে কম ঘুমে শরীরে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বেশি হয়,যা থেকে ভবিষ্যতে স্থূলত্ব,টাইপ 2 ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ,এথেরোস্ক্লেরোসিস জাতীয় সমস্যা হতে পারে।এথেরোস্ক্লেরোসিস হলো শরীরের শিরা ধমনীর দেওয়ালে চর্বি জমে তার স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট করা ও তাকে ভঙ্গুর করা,যা হার্ট স্ট্রোক এবং ব্রেন স্ট্রোকের কারণ।
■ঘুমের মধ্যে কথা বলা, চিৎকার করে ওঠা,দৌড়ে বেরিয়ে যাওয়া,দাঁত কিড়মিড় করা,মূত্রত্যাগ বা মলত্যাগ করা, এগুলো সাধারণত বাচ্চাদের হয়।এগুলো অগভীর ঘুমের লক্ষণ।
■পেশার কারণে রাতের বদলে যাঁরা দিনে ঘুমোন,তাদের ক্ষেত্রে ঘুম সংক্রান্ত সমস্যা বেশি।নিদ্রাহীনতায় পাকস্থলী থেকে এসিড ক্ষরণ বেশি হয়,যা পেপটিক আলসারের একটি কারণ।
■ঘুম নিশ্চিত করতে নিয়মিত ঘুমের ওষুধ খাওয়া একটি বিপজ্জনক।প্রবণতা।এতে শেষমেশ স্বাভাবিক নিদ্রাপ্রক্রিয়ার ব্যাঘাতই ঘটে।….
আজ এটুকুই।পরের সোমবার অন্য বিষয়।আজ থেকে সবাই তাড়াতাড়ি করে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন।রাত জেগে টিভি দেখা,ফেসবুক,ওয়াটস আপ করা এসব করবেন না…আমিও এসব একদম করিনা।