কিশোরী মেয়েদের শিক্ষায় কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রভাব
ফারুক আহমেদ
কিশোরী মেয়েদের শিক্ষায় কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রভাব কেমন তা দেখার জন্য পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার ওপর এম. ফিল কোর্সের গবেষণার কাজ পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন গবেষক : দেবদীপ ভট্টাচার্য (২০১৭),মোসিরা পারভিন (২০১৯), ও ঋততপা চক্রবর্তী (২০২০) ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন বিভাগের প্রফেসর ড. দেবযানী গুহ’র তত্বাবধানে। উপরোক্ত গবেষকেরা যথাক্রমে পূর্ব বর্ধমান, নদীয়া ও হুগলী জেলার বেশ কিছু বিদ্যালয়ের ছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের পর যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন সেগুলি হল :
১. কন্যাশ্রী প্রকল্প মেয়েদের কমবয়সে বিয়ে বন্ধ করবার ও বয়ঃসন্ধির মেয়েদের ক্ষমতায়নের জন্য একটি বিশেষ প্রকল্প।
২. এই প্রকল্পের স্কলারশিপ (কে-১) স্কুলে পড়া মেয়েদের আর্থিক সহায়তা দান করে।
৩. এই স্কিম বালিকা-শিক্ষার উন্নতি ত্বরান্বিত করেছে, বিদ্যালয়ে মেয়েদের উপস্থিতির হার বাড়িয়েছে।
৪. এর ফলে মেয়েদের বিদ্যালয় ছুটের হার কমছে।
৫. এই প্রকল্প ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা জোগাচ্ছে।
৬. এখন আর মেয়েরা কম বয়সে বিয়েতে রাজি হয় না।
৭. এই প্রকল্প বাল্য বিবাহ রোধে সাহায্য করছে।
৮. অপরিণত মায়েদের মৃত্যু হার কমেছে এই প্রকল্পের ফলে।
৯. এই প্রকল্প সমাজিক সচেতনতা তৈরি করেছে মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে, মেয়েদের স্বাধীন করেছে, তাদের দক্ষতা দিয়েছে; ফলে তাদের অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে। কুশলতা বেড়েছে।
১০. কন্যাশ্রী প্রাপকরা ‘কন্যাশ্রী ক্লাব” এর মাধ্যমে অন্য মেয়েদের যেমন এই প্রকল্পের সুবিধাগুলো বোঝাতে পারছে তেমনি নারী পাচার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছে।
১১. এই প্রকল্পের ফলে মেয়েদের সামাজিক শক্তি ও আত্মমর্যাদা বেড়েছে।
১২. নারীর ক্ষমতায়নের এ হলো প্রথম ও অত্যন্ত উপযোগী একটি ধাপ।
তবে এই প্রকল্পের কার্যকারিতা সমগ্র উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে কিরকম সে সম্পর্কে বর্তমানে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ড. দেবযানী গুহ র তত্বাবধানে পূর্ণাঙ্গ একটি গবেষণার কাজ (পিএইচডি) করছেন আসানুল করিম
[জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাঃ শি.), আলিপুরদুয়ার] যেখানে মূল দেখার বিষয়গুলো হল: মেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, সমাজ সচেতনতা ও ক্ষমতায়ন।
এই গবেষণা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রফেসর গুহ খুব স্পষ্ট ভাবেই এই প্রকল্পের কার্যকারীতা সম্পর্কে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেন। তাঁর মতে রাজ্য সরকারের এই প্রকল্প আমাদের রাজ্যের মেয়েদের অনেক দূর এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। এটি অত্যন্ত সময় উপযোগী একটি স্কিম। শুধুমাত্র মেয়েদের শিক্ষাই নয়… সার্বিক ভাবে গোটা সমাজের ওপরই এর ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সমাজের সব স্তরের মানুষ মেয়েদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠছে। খুব শীঘ্রই এর আরো অনেক সুফল লক্ষ্য করা যাবে বলে তিনি মনে করেন। যদিও বর্তমানে সমগ্র উত্তরবঙ্গের সব জেলা গুলোর ওপর এই প্রকল্পের প্রভাব কেমন তা নিয়ে তাঁর এক স্কলার কেস স্টাডি গবেষণা করছে, তবে অদূর ভবিষ্যতে দক্ষিণবঙ্গের জেলা গুলোর উপরও আরো একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণার ইচ্ছা তাঁর রয়েছে।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের গবেষক ফারুক আহমেদ জানালেন, প্রফেসর ড. দেবযানী গুহ’র তত্বাবধানে কন্যাশ্রী প্রকল্প নিয়ে ঐতিহাসিক গবেষণা সমগ্র বিশ্বকে আলোকিত করবে।