বাজেটে শিক্ষা ক্ষেত্রে সংস্থানের বিষয় কার্যকর করার ওপর ওয়েবিনারে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
By PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ০৩ মার্চ, ২০২১
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী বাজেটে শিক্ষা ক্ষেত্রে সংস্থানের বিষয় কার্যকর করার ওপর একটি ওয়েবিনারে ভাষণ দিয়েছেন।
ওয়েবিনারে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জানান, স্বনির্ভর ভারত গড়ে তোলার জন্য দেশের তরুণদের আত্মবিশ্বাস থাকা প্রয়োজন।তিনি বলেন আত্মবিশ্বাস তখনই আসবে, যখন যুবরা তাঁদের পড়াশুনা ও জ্ঞানের ওপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস অর্জন করতে পারবেন। তিনি জানান,যুবদের আত্মবিশ্বাস তখনই আসবে, যখন তাঁরা বুঝতে পারবেন যে, তাঁদের শিক্ষা কাজের সুযোগ এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা প্রদান করছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, এ ধরনের চিন্তাভাবনা নিয়েই নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি তৈরি করা হয়েছে। তিনি প্রাক্-প্রাথমিক থেকে পিএইচডি পর্যন্ত জাতীয় শিক্ষা নীতি সংক্রান্ত সকল বিধি দ্রুত বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং বলেন, এবারের বাজেটে এক্ষেত্রে ব্যাপক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের পরে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে শিক্ষা, দক্ষতা, গবেষণা ও উদ্ভাবনের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। তিনি দেশের সমস্ত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে আরও ভালো সমন্বয়সাধনের জন্য আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষতা উন্নয়ন, মানোন্নয়ন ও শিক্ষানবিশ হিসাবে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে এবারের বাজেটের ওপর জোর দেওয়া নজিরবিহীন ঘটনা । এবারের বাজেটে বছরের পর বছর ধরে চলে আসা শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা ক্ষেত্রে সক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত করার প্রচেষ্টা আরও প্রসারিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ আজ বিজ্ঞান সংক্রান্ত প্রকাশনা এবং স্টার্ট আপ ইকো-ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের প্রথম তিনটি দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। শ্রী মোদী জানান, গ্লোবাল ইনোভেশন সূচকে ভারত প্রথম ৫০টি দেশের ক্রমতালিকায় যুক্ত হয়েছে এবং এক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উন্নতিলাভ করেছে। তিনি বলেন, উচ্চতর শিক্ষা, গবেষণা এবং উদ্ভাবন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও তরুণ বিজ্ঞানীদের জন্য নতুন সুযোগ-সুবিধা ক্রমশ বাড়ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রথমবার বিদ্যালয়ের অটল টিঙ্কারিং ল্যাব থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অটল ইনকিউবেশন সেন্টার সম্পর্কিত বিষয়গুলির ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। দেশে স্টার্টআপ-গুলির জন্য হ্যাকাথনের একটি নতুন পরম্পরা তৈরি করা হয়েছে। এতে দেশের যুবসমাজ ও শিল্প ক্ষেত্র উভয়ই লাভবান হয়েছে। তিনি আরও জানান, ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভ ফর ডেভেলপিং অ্যান্ড হার্নেসিং ইনোভেশনের মাধ্যমে ৩৫০০ বেশি স্টার্টআপ পরিচালিত হচ্ছে। একইভাবে, জাতীয় সুপার কম্প্যুটিং মিশনের আওতায় আইআইটি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইটি খড়্গপুর ও পুণের আইআইএসইআর – এ তিনটি সুপার কম্প্যুটার – পরম শৈব, পরম শক্তি এবং পরম ব্রহ্ম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তিনি জানান, দেশে ১২টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের সুপার কম্প্যুটার পাওয়ার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। শ্রী মোদী বলেন, আইআইটি খড়্গপুর, আইআইটি দিল্লি এবং বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি পরিশীলিত, বিশ্লেষণাত্মক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রতিষ্ঠান (এসএটিএইচআই) – এর পরিষেবা চালু করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, জ্ঞান ও গবেষণাকে সীমাবদ্ধ করে রাখা দেশের অগ্রগতির সম্ভাবনার পথে বড় অন্তরায়। মহাকাশ, আণবিক শক্তি, ডিআরডিও’র মতো একাধিক ক্ষেত্র মেধাবী তরুণদের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই প্রথমবার ভারত মেট্রোলজি বা পরিমাপ বিদ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে আন্তর্জাতিক মান পূরণ করেছে, যা গবেষণা ও উন্নয়ন এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা ক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। সম্প্রতি ভূ-স্থানীয় তথ্য সম্পর্কিত ব্যবস্থাপনা উন্মুক্ত করা হয়েছে। এটি মহাকাশ ক্ষেত্র এবং দেশের যুবদের জন্য অপরিমেয় সুযোগ-সুবিধা তৈরি করবে। তিনি বলেন, দেশে এই প্রথমবার জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে। এর জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর ফলে, গবেষণা সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলির প্রশাসনিক পরিকাঠামো শক্তিশালী হবে এবং গবেষণা ও উন্নয়ন, শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও শিল্প ক্ষেত্রের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি পাবে। প্রধানমন্ত্রী জানান, জৈব প্রযুক্তি গবেষনার সুযোগ বৃদ্ধিতে সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। তিনি খাদ্য সুরক্ষা, পুষ্টি ও কৃষি ক্ষেত্রে জৈব প্রযুক্তি গবেষণার পরিধি বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
বিশ্বে ভারতীয় প্রতিভার চাহিদা কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী দক্ষতা নির্ধারণের মানচিত্র তৈরি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা অবলম্বন করে শিল্প ক্ষেত্রে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে যুবদের ভবিষ্যৎ’এর জন্য প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানগুলিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেটে শিক্ষানবিশদের কর্মসূচির বিষয় সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেশের যুবরা উপকৃত হবেন বলেও তিনি জানান।
শ্রী মোদী বলেন, শক্তি ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার জন্য সবুজ শক্তির ওপর গুরুত্ব অপরিহার্য। এই কারণে বাজেট ঘোষণায় হাইড্রোজেন মিশনের গুরুত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে। তিনি জানান, ভারতে হাইড্রোজেন পরিচালিত যানবাহন পরিবহণ পরীক্ষাস্তরে রয়েছে। হাইড্রোজেনকে পরিবহণ ক্ষেত্রে জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করার জন্য এবং এক্ষেত্রে দেশের শিল্প সংস্থাকে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে প্রয়াস চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতিতে আরও বেশি করে স্থানীয় ভাষা ব্যবহারের বিষয়ে উৎসাহ যোগানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, এখন সমস্ত ভাষাবিদ ও প্রতিটি ভাষার বিশেষজ্ঞদের দায়িত্ব কিভাবে দেশ ও বিশ্বের সেরা বিষয়বস্তুগুলিকে ভারতীয় ভাষায় প্রস্তুত করা যায় তা খতিয়ে দেখা । প্রযুক্তির এই যুগে এটি অবশ্যই সম্ভব। এক্ষেত্রে বাজেটে প্রস্তাবিত “জাতীয় ভাষা অনুবাদ মিশন”কে আরও প্রসারিত করা হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।