সুস্থ হওয়ার দিন থেকে ৬ মাস পর্যন্ত সংক্রমিতদের মধ্যে কোভিড পরবর্তী শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, এরজন্য আতঙ্কিত হবেন না, চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিন: পালমোনোলজিস্ট ডঃ নিখিল বান্টে
By PIB Kolkata
নয়াদিল্লী/মুম্বাই, ১৫ জুন, ২০২১
নেগেটিভ রিপোর্ট আসলেই কি কোভিড-১৯এর বিরুদ্ধে লড়াই শেষ হয়ে যায়? প্রথমেই কি কি সমস্যা নজরে আসে? কোন ধরণের খাবার খেতে হয়? পিআইবি-র একটি ওয়েবিনার আজ এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। কোভিড পরবর্তী বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য কি কি করতে হবে এবং কোন ধরণের খাবার খেলে দ্রুত সুস্থ হওয়া যাবে এ সবকিছু নিয়ে পুষ্টিবিদ ইষি খোসলা এবং পালমোনোলজিস্ট ডঃ নিখিল নারায়ণ বান্টে বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন।
ফুসফুস ও যক্ষ্মা রোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ বান্টে বলেছেন, মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে যাঁরা কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের কোভিড পরবর্তী নানা জটিলতা দেখা যাচ্ছে। ৫০-৭০ শতাংশ রোগী ৩-৬ মাস পর্যন্ত ছোটোখাটো বা বড় ধরণের সমস্যায় ভুগছেন। যে সমস্ত রোগীর কোভিড সংক্রমণ বেশি হয়েছিল তাদের বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দেখা দিয়েছে। ডঃ বান্টে ওয়েবিনারে যে বিষয়গুলি উল্লেখ করেছেন:
কোভিড-১৯ পরবর্তী লক্ষণ কি:
বেশিভাগ কোভিড সংক্রমিতরাই ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান। তবে কোনো কোনো রোগীর ৪ সপ্তাহ পরেও বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা থাকে। একে অ্যাকিউট পোস্ট কোভিড সিনড্রম বলা হয়। যদি এই লক্ষণগুলি এক বছর পরেও দেখা দেয় তাহলে তাকে পোস্ট কোভিড সিনড্রম বলা হয়। এর প্রধান প্রধান লক্ষণগুলি হল- দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, বিরক্তিভাব, অনবরত ঘাম হওয়া, পেশিতে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাথা, স্বাদ ও গন্ধ না পাওয়া, অনিদ্রা। কোভিড পরবর্তী সময়ে বিষণ্ণতা ও উদ্বিগ্ন হয়ে পরার মতো মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা দেখা দেয়।
এই লক্ষণগুলির মূল কারণ হল:
১. ভাইরাস জনিত কারণ :- করোনা ভাইরাস শুধুমাত্র আমাদের ফুসফুসকেই প্রভাবিত করে না যকৃৎ, স্নায়ু এবং কিডনিকেও প্রভাবিত করে। ফলে এই সংক্রমণ থেকে সেরে উঠতে আমাদের শরীরের সময় লাগে।
২. রোগ প্রতিরোধ জনিত কারণ :- এই ভাইরাস শরীরে ঢুকলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয় ওঠে। শরীরে সেইসময় বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ নি:সৃত হয়। এর ফলে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে নানান বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যা দীর্ঘ সময় ধরে থাকে।
কোভিড পরবর্তী কিছু লক্ষণের মধ্যে অন্যতম হল থ্রম্বোএমবলিজম। ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে এর ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হতে পারে। তবে কোভিড থেকে আরোগ্য লাভ করা ৫ শতাংশেরও কম রোগীর মধ্যে এই লক্ষণ দেখা যায়। পালমোনারি এমবলিজম আর একটি লক্ষণ যেটি কোভিড থেকে সেরা ওঠা মানুষদের মধ্যে দেখা যায়। এখানে ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধার ফলে শ্বাসকষ্ট হয় এবং রক্তচাপ কমে যায়। এই ধরণের রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন। আর একটি কোভিড পরবর্তী লক্ষণ হল হাই ডি-ডিমার লেভেল। এক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধায় রোগীকে ২-৪ সপ্তাহ পর্যন্ত হাসপাতালে থাকতে হতে পারে। অনেক সময় সেরে ওঠার পর শুকনো কাশি হয়। যার ফলে ফুসফুসের ওপর চাপ পরে। এক্ষেত্রে জোরে জোরে শ্বাস নেওয়ার মত ব্যায়ামের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। প্রচন্ড কাশি হলে বুকের ওপর চাপ সৃষ্টি হয় এবং বুকের খাঁচায় ব্যাথা করে।
কোভিড মুক্তির পর অনেক সময় পালমোনারি ফাইব্রোসিস হয়। এর জন্য রোগীকে দীর্ঘদিন ধরে অক্সিজেন নিতে হয়। অনেক সংক্রমিতের ৭০ শতাংশ ফুসফুস ক্ষতি হওয়ার কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়। তবে মোট সংক্রমিতের মাত্র ১ শতাংশের ক্ষেত্রেই এই সমস্যা নজরে আসে। যাঁদের সংক্রমণের সময় অক্সিজেন থেরাপি করতে হয়েছে তাঁদের সুস্থ হওয়ার এক মাস পর ফুসফুসের ক্ষমতার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
কোভিড পরবর্তী সময়ে খাদ্যাভ্যাস :-
পুষ্টিবীদ ইষা খোসলা জানিয়েছেন কোভিড সংক্রমণের সময় যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের মধ্যে ৯৪ শতাংশেরই বিভিন্ন জটিল অসুখ ছিল। এক্ষেত্রে সঠিক খাবার খেলে আমাদের শরীরকে সুস্থ রেখে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বজায় রাখতে হবে।
শ্রীমতি খোসলা বলেছেন, খাবারের মধ্যে প্রোটিন জাতীয় উপাদান বেশি থাকা প্রয়োজন। তবে শাক-সবজিও থাকতে হবে যাতে খাবার যথাযথভাবে হজম হয়। জিঙ্ক, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এইসময় জরুরি হলেও বেশি বেশি খাওয়া উচিৎ নয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে তন্তুযুক্ত খাবার এবং পুষ্টিকর শাক-সবজি খাওয়া প্রয়োজন। আমাদের শরীরে যে সমস্ত উপাকারী মাইক্রোব থাকে সেগুলি যাতে ঠিকঠাকভাবে কাজ করতে পারে তার জন্য তন্তু জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন রঙের খাবার খেতে হবে যা আমাদের শরীরে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের চাহিদা মেটায়। এর জন্য হলুদ, আদা, চা ইত্যাদি খাওয়া প্রয়োজন। প্রচুর পরিমাণ জল খেতে হবে যাতে সংক্রমণের সময় এবং সুস্থ হয়ে ওঠার পর শরীরে জলের পরিমাণ যথাযথ থাকে।
এই সময় মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা অত্যন্ত জরুরি। আমারা যে খাবার খাই তা যদি শরীরের পক্ষে ভালো না হয় তাহলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন কমে যায় একইসঙ্গে মনের ওপরেও চাপ পরে। আর তাই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং মরশুমি ফলমূল, সাক-সবজি খাওয়া জরুরী।