বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ম মেনে কাজ করার নির্দেশ দিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়
সংবাদদাতা:
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে আমি উপাচার্য, যা চাই তাই-ই করতে হবে, আর যা চাই না তা করা যাবে ণা, এমন ভাবনা নিয়ে আপনারা চলবেন না। মনে রাখবেন, আপনারা আজকে আছেন, পাঁচ বছর বাদে নাও থাকতে পারেন। বৈঠকে বললেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী।
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কলেজ অধ্যাক্ষদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সল্টলেকে বৈঠক করলেন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কীভাবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার মানের উন্নতি ঘটানো যায়, আলোচনা করলেন তা নিয়ে। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ উপাচার্য, রেজিস্ট্রার এবং দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু কলেজের অধ্যাক্ষ।
এদিন কল্যাণী বিশ্ববিধ্যালয়ের উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ উপস্থিত ছিলেন। বির্তকৃত এবং আইন অমান্যকারী সেরা উপাচার্য হিসেবে শঙ্কর কুমার ঘোষ ইতিমধ্যেই শিক্ষা মহলে চরমভাবে আলোচিত একটি নাম।
এদিন বৈঠকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা সঙ্গে নিয়ে আসেন বেশ কয়েকজন সহ উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে। কিন্তু কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ বৈঠকে সঙ্গে নিয়ে আসেন দুর্নীতিবাজ পরীক্ষা সমূহের নিয়ামক বিমলেন্দু বিশ্বাস ও বির্তকৃত আইসি সুব্রত কুমার রায়কে।
উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ এড়িয়ে চলছেন সহ উপাচার্য গৌতম পাল ও রেজিস্ট্রার দেবাংশু রায়কে। তিনি এদেরকে সঙ্গে না নিয়ে তাঁর স্তাবক দুই অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে আসেন।
উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ নিয়মিত ইসি মিটিং, কোর্ট মিটিং ও ফ্যাক্লাটি কাউন্সিল মিটিং করছেন না। শেষ ইসি মিটিং করেছেন ২৮ মে ২০১৯ সালে। ইতিমধ্যে ৯ মাস ইসি মিটিং করেন নি উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ। তিনি উচ্চশিক্ষা দফতরের অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন বিভাগে বহু অবৈধভাবে নিয়োগ করছেন। উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ নিজের আত্মীয়দেরকে আইন অমান্য করে নিয়োগ করছেন।
সরকারি অর্থ অন্যায়ভাবে অপচয় করছেন উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ এই অভিযোগ উঠেছে এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
এদিন বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায় ধমকে দিয়েছেন উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ সহ অনান্য উপাচার্যদেরকে নিয়ম মেনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করার কথা বললেন।
তিনি আরও বললেন, বেআইনি নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। নিয়মিত ইসি মিটিং, কোর্ট মিটিং এবং ফ্যাক্লাটি কাউন্সিল মিটিং করতে হবে।
সহ উপাচার্য, আধিকারিক, শিক্ষক ও অশিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেই নিয়ম মেনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করার মূলত নির্দেশ দিলেন শিক্ষামন্ত্রী ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
এদিন নিয়োগ পরীক্ষা স্বচ্ছতা আনতে কাদেরকে নিয়োগ করছেন তাদের কাগজপত্র আগেই উচ্চশিক্ষা দফতরে পাঠিয়ে অনুমোদন নিয়ে তবেই নিয়োগ করতে হবে বলেও জানান তিনি।
আর একটাও অস্থায়ী শিক্ষক, অস্থায়ী অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ করা যাবে না। এদিন কঠোর ভাবে নির্দেশ দিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
উচ্চশিক্ষা মন্ত্রীর কথা অমান্য করে উপাচার্য শঙ্কর কুমার ইতিমধ্যে আবারও অস্থায়ী শিক্ষাক ও অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করছেন এবং করেই চলেছেন।
“ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন, যাতে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা অপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের আলোচনা শুনতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, অধ্যাপকদের জন্য ওয়ার্কশপের আয়োজন করা”। এছাড়া, উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে পড়ুয়াদের আদানপ্রদানের প্রক্রিয়াটিও আরও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ব্যাপারেও বৈঠকটিতে আলোচনা করা হয়েছে বলে জানা যায়।
এই ভাবনাটি মূলত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এক বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশোনা করা। মতের আদানপ্রদান করা। এর ফলে একের চিন্তার বিকাশ অপরের মধ্যেও প্রবাহিত হবে বলে মনে করেন তিনি।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০০-তম জন্মদিবস উপলক্ষে রাজ্য সরকারের বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। সেগুলিও নিয়েও আলোচনা হয়।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অভিযোগ উঠছে উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ নিজের ইচ্ছে মতো অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক কাউকে উচ্ছেদ করেছেন এবং নিয়োগ করছেন।
সম্প্রতি রেজিস্ট্রার দেবাংশু রায়কে ছুটিতে পাঠিয়ে তাঁর ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেন। সেই প্রসঙ্গ উঠে এবং এসব বন্ধ করার কড়া নির্দেশ দিলেন শিক্ষামন্ত্রী।
বিভিন্ন বিভাগে চাকরি দিয়েছেন উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ রোস্টার না মেনেই।
কড়াভাবে রোস্টার মারার কথাও উঠে এদিন।
কোনও উপাচার্যের বিরুদ্ধে উচ্চশিক্ষা দফতরে অভিযোগ জমা পড়লে এখন তদন্ত হবে এবং দোষ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে তদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে যথাযথ নতুন আইন মাফিক সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ একটার পর একটা অনিয়ম করে পার পাচ্ছেন কেন? সেটারও তদন্ত হওয়া জরুরি।
সহ উপাচার্য গৌতম পালকে থাকার জন্য আবাসনের কোনও ঘর দেওয়া হয়নি এখনও।
নতুন আইন অনুযায়ী তাঁকে সঠিকভাবে কাজ করতেও দেওয়া হচ্ছে না।
উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ সহ উপাচার্য গৌতম পালকে সহ্যই করতে পারছেন না।
বিভিন্ন সময়ে উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ বেজেপি, সিপিএম সংগঠনের নেতা-কর্মী ও অধ্যাপকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন মূলত তাদেরকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন।
একসময়ের উপাচার্য রতন লাল হাংলুর কাছের লোক ছিলেন ইতিহাস বিভাগের অলোক ঘোষ তাঁর পরামর্শ মতো উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছেন বলে এক শ্রেণির অধ্যাপক অভিযোগ করছেন।
উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ বেআইনি নিয়োগ করেছেন দূরশিক্ষার বিভাগের ডিরেক্টর মানস মোহন অধিকারীকে। তিনি কল্যাণীর বাসিন্দা এবং বামফ্রন্ট রাজনৈতিক দলের নেতা বলেই বেশি পরিচিত। তাঁর বর্তমান বয়স ৭০ এর বেশি। বিজ্ঞাপন ও ইন্টারভিউ ছাড়াই নিয়োগ করছেন এমন কিছু উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ তাঁর কাছের লোকজনকে। সে নিয়েও বির্তকের শেষ নেই। ইতিমধ্যে তিনি আসাম থেকে তাঁর পরিচিত কিছু গবেষককে বিভিন্ন কাজে লাগলেন এবং অনেক টাকা বেতন দিচ্ছেন। প্রজেক্টের নামে যা-তা অবস্থা সৃষ্টি করছেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ন্যাকের কাজ সঠিকভাবে দ্রুত রূপায়ণ করতে লাগাতার আলোচনাও করছেন না অধ্যাপকদের সঙ্গে।
রাজ্য সরকারের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে দূর্নীতির অভিযোগ উঠছে বেশি।
ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীরা উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষের অমানবিক ও নিষ্ঠুর কাজের জন্য অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।
দীর্ঘ দিন ধরে তিনি একটার পর একটা অনিয়ম করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্রমাগত স্রোতের বেনে নিচে নামছে। এনআরএফ মান ৪৫ থেকে তার আমলে (তিন বছরে) নেমে ৯৮ এসেছে।
যোগ্য অধ্যাপকদের সঙ্গে তার বিরোধ লেগেই আছে এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চান না। কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও ধৈর্যসহকারে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে চান না এবং দেখাই করেন না।
উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ যখন তখন বিনা কারণে কর্মচারীদের উচু পদ থেকে নিচু পদে নামিয়ে দিয়ে তাদেরকে বিভিন্ন বিভাগে বদলি করে দিচ্ছেন এবং খিয়ালখুশি মতো রিনুয়াল আটকে দিচ্ছেন। কাজ করার পরও তাদের বেতন আটকে রেখেছেন।
এমন অমানবিক নিষ্ঠুর উপাচার্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্য সরকার নিয়োগ না দিলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মঙ্গল বলে মন্তব্য করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধ্যাপক।