এম রাজশেখর (১৭ নভেম্বর ‘১৯):- সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই মানুষ ভগবান ও ভূত সম্পর্কে দ্বিধাবিভক্ত। একদল বারংবার বলার চেষ্টা করেছেন ও করছেন, ‘সাধারণ ভৌতিক জগতের পাশাপাশি রয়েছে একটা অতীন্দ্রিয় জগত, যেখানে রয়েছে শুভশক্তি (ভগবান)-র সাথে অশুভশক্তি (ভূত)-ও’।
অপরদিকে অন্যদল সবসময়ই বলে আসছেন, ‘সাধারণ জগতের পাশাপাশি অতীন্দ্রিয় জগতের কল্পনা আকাশকুসুম চিন্তা মাত্র।’
অতীন্দ্রিয় জগতের পক্ষে গলা ফাটাবার যেমন লোকের অভাব নেই, ঠিক তেমন অতীন্দ্রিয় জগতের বিপক্ষেও চেঁচাবার লোক কম নেই।
যে বা যাঁরা অতীন্দ্রিয়বাদ-এর পক্ষে কথা বলছেন তাঁদের এককথায় ‘আস্তিক’ ও বিপক্ষের দলকে ‘নাস্তিক’ বলে চিহ্নিত করে আসাটাই সমাজের একটা দস্তুর।
তবে আজ থেকে নয়, প্রায় পুরাণের কাল থেকেই সাধারণ মানুষের পাশাপাশি একশ্রেণীর জ্ঞানী মানুষ (ঋষি, মুনি)-ও অতীন্দ্রিয় জগত বা অতীন্দ্রিয়বাদকে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন।
পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু শিক্ষিত মানুষও এই ধারণাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন।
কিন্তু বিজ্ঞাননিষ্ঠ যুক্তিবাদী সমাজ চিরকালই এই ‘অতীন্দ্রিয়বাদ বা অতীন্দ্রিয় জগত’-কে পরিহাস করে এসেছে।
সম্প্রতি ভৌতবিজ্ঞান-এর বিশেষ কিছু শাখা যেমন আলো, তাপ, শব্দ প্রভৃতি বিষয়ের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সাহায্য নিয়ে একশ্রেণীর বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তিবাদী শিক্ষিত মানুষ অতীন্দ্রিয় জগত সম্পর্কে অনুসন্ধান মূলক গবেষণায় রত হয়েছেন।
অতীন্দ্রিয় জগত নিয়ে যাঁরা বর্তমানে অনুসন্ধান মূলক গবেষণা করছেন তাঁরা ব্যবহার করছেন- ‘ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড ডিটেকটর’, এটা এমন একটা যন্ত্র (মিটার) যেটা সাধারণ অবস্থায় ০.৩ থেকে ০.৬ এর মধ্যে নিজের সূচককে নিয়ন্ত্রণ করে কিন্তু কোনো অস্বাভাবিকতা অনুভব করলে সূচকের মাণ উর্ধমুখী হয় ওঠে বা ঘনঘন ওঠানামা করে।
এই অনুসন্ধানকারীরা আরো ব্যবহার করছেন- ‘ইলেকট্রনিক ভয়েস ফেনোমেনা’, এটা এমন একটা যন্ত্র যার মাধ্যমে খুব কম কম্পাঙ্কের আওয়াজও সহজে ধরে ফেলা যায়।
কম্পিউটারে বসে শব্দ বাড়িয়ে শুনলেই এই কম কম্পাঙ্কের শব্দগুলো পরিস্কার শোনা যায়।
ব্যবহৃত হচ্ছে ‘এক্সটারন্যাল থার্মোমিটার’, উষ্ণতা মাপক এই যন্ত্রের সাহায্যে খুব সহজেই অনুসন্ধান স্থল বা উৎপীড়িত অঞ্চলের স্থানীয় তাপমাত্রা বা তার হেরফের বোঝা যায়।
এর পাশাপাশি অনুসন্ধানকারীরা রাখছেন ‘প্যারাবোলিক থার্মোমিটার’, এটা এমন এক ধরণের তাপমাণ যন্ত্র যার মাধ্যমে একই ঘরের দুটো পৃথক পৃথক দেওয়ালের পৃথক পৃথক মাণ পাওয়া সম্ভব।
সাহায্য নেওয়া হচ্ছে আধুনিক ‘লেজার গ্রেড’ যন্ত্রের। এটা এমন একটা যন্ত্র, যার আলো একবার জ্বালিয়ে ‘আত্মানুসন্ধান’ পর্ব শুরু করলে, সেই আলোর সামনে দিয়ে যদি কোনো ধোঁয়া বা ছাঁওয়া যায় তা খুব সহজেই সনাক্ত করা সম্ভব হয়।
এর সাথে সাথে অতীন্দ্রিয় জগতের অনুসন্ধানকারীরা ব্যবহার করছেন ‘মোশন সেনসর’ নামের আর এক অত্যাধুনিক যন্ত্র। এই যন্ত্র একবার চালু করলে যন্ত্রের আলো একবার জ্বলে উঠে নিভে যায়, কিন্তু যন্ত্র চলাকালীন ওই যন্ত্রের সামনে দিয়ে কিছু চলাফেরা করলে তৎক্ষনাত ওই যন্ত্রের আলো জ্বলে উঠে অনুসন্ধানকারীদের সচেতন করে দিতে সক্ষম।
অতীন্দ্রিয় জগতের অনুসন্ধানকারীরা আরো ব্যবহার করছেন ‘ইকো বক্স’, এটা এমন একটা আধুনিক যন্ত্র যা প্রতি ৩ সেকেণ্ড অন্তর রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আদানপ্রদান করতে সম্ভব। অতীন্দ্রিয় জগতের অনুসন্ধানকারীদের বক্তব্য, “শুভ বা অশুভশক্তি যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে চান, তাহলে এই যন্ত্রের মাধ্যমে খুব সহজেই তা গোচরে আসে।”
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ঈশিতা দাস সান্যাল এক বেসরকারী টিভি চ্যানেল আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক তথা বিসিসিআই-এর বর্তমান সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী-কেও এইসব যন্ত্রপাতি প্রদর্শন করে তাঁর বেশ কিছু অনুসন্ধান সম্পর্কিত কাহিনীও ব্যক্ত করেছেন।