তোমার কথা হেথা কেহ তো বলে না…

0
1848
Mahatma Gandhi
Mahatma Gandhi
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:9 Minute, 51 Second

তোমার কথা হেথা কেহ তো বলে না…

অশোক মজুমদার

জন্মের সার্ধ শতবর্ষে পৌঁছে গান্ধী এখন শুধু রয়েছেন তৃতীয় শ্রেণির নেতাদের প্রথম শ্রেণির ডিজাইনার খাদিতে, মূর্তিতে, ছবিতে এবং নোটে। এটা একই সঙ্গে দুর্ভাগ্যজনক এবং সত্য। বিশ্বাস ও জীবনচর্যায় তিনি আমাদের আয়ত্তের বাইরেই রয়ে গেলেন। এদেশের গান্ধীবাদিরা গান্ধীকে বোঝেনি, মার্কসবাদীরা গান্ধীকে বোঝেনি এমনকি গান্ধীবাদিরাও গান্ধীকে বোঝেনি। আর সন্ত্রাসবাদী বা বামপন্থী রাজনীতির প্রভাব যাই বলুন না কেন গান্ধী সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা আমাদের এই বাংলায়। অথচ এমন কতগুলি মৌলিক প্রশ্ন তিনি তুলেছিলেন যেগুলো আজকের দিনেও সমান প্রাসঙ্গিক। তাঁর মৃত্যুর পর আইনস্টাইনের বলা একটা ছোট মন্তব্য মনে পড়ল আজ থেকে হাজার বছর পরে মানুষ অবাক হয়ে ভাববে যে এমন ধরণের একটা লোক একদা এই পৃথিবীর ধূলিতে বিচরণ করেছিলেন।

বোঝার অসুবিধা আছে এবং প্রয়োগ করতে সাহস লাগে বলে চিরকাল তাঁর কথার ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সুবিধাবাদী, দুর্নীতিগ্রস্থ ও কাপুরুষ রাজনৈতিক নেতারা তাঁর অহিংসা কথাটাকে নিজেদের আখের গোছানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। যে অহিংসার নামে আজকের ভারতে ধর্মান্ধ, দাঙ্গাবাজদের তোল্লাই দেওয়া, মেনে নেওয়ার রাজনীতি আজ ডান-বাম নানা দল করে চলেছেন সেই অহিংসার কথা তিনি কস্মিনকালেও বলেননি। অহিংসা কোনদিনই তাঁর কাছে কোন মসজিদের তালা খুলে দেওয়া বা মন্দিরের দরজায় পাঁচিল তুলে দেওয়ার মত কোন ব্যাপার ছিলনা। যে ধর্মান্ধ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির শিকার হয়ে তাঁকে প্রাণ দিতে হয়েছিল, জন্মের ১৫০বছরে দেশের রাজনীতিতে আজ তাদেরই দাপট। তথাকথিত গান্ধী ভক্তরা অহিংসা, সহনশীলতা ও রাজনৈতিক কৌশলের দোহাই দিয়ে গোড়ার দিকে একে বাড়তে দিয়েছেন, কোন প্রতিবাদ করেন নি। তারা ভুলে গেছেন গান্ধীজির সেই শিক্ষা, ভয়ে পালিয়ে আসার নাম কাপুরুষতা। কাপুরুষতার সাহায্যে কোন মীমাংসা বা অহিংসা আনা সম্ভব নয়।

Ashoke Majumdar
Ashoke Majumdar

কাপুরুষতাও একধরণের হিংসা, যা দূর করা খুব শক্ত। সত্যি, এটা যে কতটা শক্ত তা আমরা আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের দেখেই বুঝতে পারি। যে কোন ঘটনা ঘটলেই তারা নিজেদের স্বার্থে অহিংসার বুলি কপচে যে তোষণের রাজনীতি শুরু করেন তা তুলনাহীন। এরাজ্যে গরিব কৃষকদের জমি কেড়ে নিয়ে বাম শাসকরা যখন শিল্পের নামে বৃহৎ পুঁজিকে তোল্লাই দেওয়া শুরু করল তখন নিজেদের গান্ধীবাদি বলা কংগ্রেস নেতারা কোন প্রতিবাদ না করে বরং তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এমন ঘটনা গান্ধীজির জীবদ্দশাতেও ঘটেছিল। দেখেশুনে ক্ষেপে যাওয়া গান্ধী বলে উঠেছিলেন, কংগ্রেসের মধ্যেই ব্যক্তি চরিত্রে যে ভয়াবহ পচন দেখা দিয়েছে তা দেখতে না চাওয়া আজ আমার পক্ষে ঘোরতর অপরাধ হবে।

গোধরা হোক বা নিয়মগিরি, তুতিকোরিন হোক বা জেএনইউ, সিঙ্গুর হোক বা ইসলামপুর কোন ঘটনায় প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে সাময়িক সুবিধার আশায় নীরব থাকাটা বা প্রতিবাদ না করাটা এমনকি মেনে নেওয়াটাও ঘোরতর অন্যায়। সার্ধ শতবর্ষের সূচনায় আজ যারা দেশের নানা জায়গায় বাপুর মূর্তিতে মালা পরাবেন, তাদের অধিকাংশই প্রতিনিয়ত একাজটা করে চলেছেন। বস্তুত এটা তাদের অভ্যাস। আজকের রাজনীতি এই সুবিধাবাদ ও কাপুরুষতার এক ককটেল। গান্ধীর আদর্শ ও রাজনীতির ত্রিসীমানায় এরা নেই। ডিজাইনার খাদির বাহার দিয়েই এরা নিজেদের মানুষের কাছে গান্ধীবাদি বলে প্রমাণে ব্যস্ত। আমার মনে হয়, এই গড্ডালিকা প্রবাহে ব্যতিক্রম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সহজ সরল জীবনযাপন, সাজপোশাক, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লাগাতার লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে তিনি মহাত্মার আদর্শকে তুলে ধরেছেন। এ জিনিসটা কিন্তু বহু বিজ্ঞাপিত গান্ধীবাদিদেরও করতে দেখি না।

গান্ধী নিয়ে আমি বিরাট কিছু জানিনা। বরং ছাত্র জীবনে অতি বাম রাজনীতিতে ঢুকে পড়ার কারণে আমি তাঁর মতাদর্শের বিরোধীই ছিলাম। দেশভাগের জন্য গান্ধীই দায়ী বলে একটা প্রচার আমাদের ছাত্রজীবনে বেশ চালু ছিল। আমিও সেকথা বিশ্বাস করতাম। পরবর্তীকালে জেনেছি এই ব্যাপারে তাঁর ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়। এটা ঘটনা গান্ধীবাদি নেতাদের কাজকারবার দেখে লোকের তাঁর সম্পর্কে একটা বিরূপ ধারণা তৈরি হয়। সাংবাদিকতার সূত্রে দেশে বিদেশে নানা জায়গায় ঘোরার সময় দেখেছি কোন প্রচার, বিজ্ঞাপন, অনুগত দলীয় কর্মীদের স্তুতি ছাড়াও এই একটি লোকের নাম দেশ বিদেশের সবাই জানেন, তাঁকে শ্রদ্ধাও করেন। ‘জাতির জনক’ আখ্যা পাওয়ার বহু আগেই গ্রাম ভারতে মানুষের মুখে মুখে তিনি হয়ে গেছেন ‘গাঁধিবাবা’। দেশের কোন রাজনীতিবিদদের এই সৌভাগ্য হয়নি। অ্যাটেনবরোর ছবিটার পর গান্ধী সম্পর্কে সারা পৃথিবীতেই মানুষের একটা আগ্রহ তৈরি হয়। একদা তারা যাকে ‘নগ্ন ফকির’ বলেছিলেন তারাই তাঁর অহিংসা, অসহযোগ, গ্রাম ভাবনা, পরিবেশ ভাবনা, সমবায়,সর্বোদয়, হস্তশিল্প ইত্যাদি ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে শুরু করলেন। কারণ আজকের পৃথিবীতে এসব বিষয় খুব প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। সাহেবদের একটা ব্যাপার আছে, তারা যখন কিছু ধরেন তখন তা নিয়ে লেগে পড়ে থেকে জানার চেষ্টা করেন। অথচ বদলে যাওয়া সময়ে তাঁকে নতুন করে জানা বা বোঝার আগ্রহটা তৈরি হল না তাঁর নিজের দেশেই। রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, অ্যাকাডেমিক মহল কেউই একাজে খুব একটা এগিয়ে আসেননি। জাতির জনক আখ্যায় ভূষিত এই মানুষটিকে ভালো ভাবে জানার কোন ব্যবস্থা করেননি তারা। নতুন প্রজন্মের কাছে গান্ধী এক দূরের তারা হয়েই থেকে গেছেন।�

গান্ধীজির ১৫০বছর পূর্তিতে স্তুতি ও পুজোর আবরণ থেকে সরিয়ে তাঁকে জানা, চেনা, বোঝার একটা প্রয়াস শুরু করার দায়িত্ব কিন্তু আমাদের সবার। বদলে যাওয়া সময়ে নানা সমস্যা সমাধানে গান্ধী কিন্তু আমাদের সঙ্গী হতে পারেন, দিশা দিতে পারেন আমাদের। মুশকিল হল, সৎ নিবেদিত প্রাণ গান্ধীবাদিরাও একটা ধর্মীয় গোষ্ঠীর মত নিজেদের একটা ছোট জায়গায় আবদ্ধ করে রেখেছেন। এবার তাদের সেই ভাবনা বদলাতে হবে। গান্ধী যেন আমাদের জীবনে হয়ে আছেন রবীন্দ্রনাথের সেই গান – তোমার কথা হেথা কেহ তো বলে না, করে শুধু মিছে কোলাহল।/ সুধাসাগরের তীরেতে বসিয়া পান করে শুধু হলাহল। রাজনীতির হলাহল দূরে সরিয়ে রেখে আজ দেশের রাজনৈতিক দলগুলিকে গান্ধীকে নিয়ে নতুন ভাবে ভাবতে হবে। নীরবতার বাতাবরণ কাটিয়ে তাঁর জন্মের ১৫০বছর পূর্তিতে গান্ধী আমাদের জীবনে নতুনভাবে ফিরে আসুন|

collected by : Faruque Ahamed

About Post Author

Antara Tripathy

Chief Editor & CEO of IBG NEWS (09/Aug/2018-Present), Secretary of All Indian Reporter's Association,West Bengal State Committee. Earlier Vice President of IBG NEWS (01/Jan/ 2013-08/Aug/2018). She took over the charge from the Founder Editor of the Channel.
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD





LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here