Read Time:9 Minute, 2 Second
আমরা কথা কম বলি, কাজ বেশী করি: মুখ্যমন্ত্রী
রাজনীতিতে মতবিরোধ থাকবে কিন্তু আলোচনার মাধ্যমে উন্নয়নের পথ উন্মুক্ত করতে হবে | আগে দেশ পরে মতবাদ , আগে দেশ পরে ব্যাক্তি| বিগত ৫-৬ বছরে অনেক প্রকল্প হয়েছে তার ভালো খারাপ বিশ্লেষণ চলতে পারে কিন্তু কাজ কে অস্বীকার করা যাবে না|
আজ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরায় পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের শিলান্যাসও করেন।
মুখ্যমন্ত্রী যে সকল প্রকল্পের উদ্বোধন করেন, তার কয়েকটি হল, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প, নতুন রাস্তা, খালের ওপর সেতু ইত্যাদি।
তিনি যে সকল প্রকল্পের শিলান্যাস করেন, তার কয়েকটি হল, ছাত্রাবাস, জল সরবরাহ প্রকল্প, সেন্ট্রাল নার্সারির সম্প্রসারন ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি কন্যাশ্রী, সবুজশ্রী, শিক্ষাশ্রী, সবুজসাথী, আনন্দধারা ইত্যাদি পরিষেবা প্রদান করেন।
তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ-
কৃষকদের রক্ষা করতে হবে, তাদের ভালবাসতে হবে। আগে বন্যায় জমির ক্ষতি হলে সরকার তাকিয়েও দেখত না। আমরা ৩০ লক্ষ কৃষক পরিবারকে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছি
কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের প্রাপ্য টাকা টুকুও দেয় না। রাজ্য থেকে যে কর কেন্দ্র আদায় করে নিয়ে যায় সেই টাকা থেকে থেকে ৬০% রাজ্যকে দেওয়ার কথা কিন্তু ওরা ৪০% দেয়। তাও ঠিক করে দেয় না। কোনরকম দয়া নয়, আমাদের টাকাই আমাদের দেওয়ার কথা। তাও বাংলা কেন বঞ্চিত হবে?
আগের সরকারের দেনা শোধ করতে হচ্ছে। এ বছরও ৪৮ হাজার কোটি টাকা দেনা শোধ করেছি। এত দেনা শোধ করে কেউ যদি এত সরকারী প্রকল্প করতে পারে তাহলে আমি মাথা নত করে নেব। বাংলায় যত প্রকল্প আছে সারা ভারতের কোথাও নেই।
একমাত্র বাংলায় কৃষকদের কৃষিজমির খাজনা মুকুব করে দেওয়া হয়েছে।কৃষিজমির মিউটেশন ফি দিতে হয় না। বাংলায় কৃষকদের রোজগার দ্বিগুন হয়েছে। বাংলা পরপর ৫ বছর ‘কৃষি কর্মন’ পুরস্কার পেয়েছে।
১০০ দিনের কাজে সারা ভারতের মধ্যে এক নম্বরে বাংলা। ও এমএসএমই তেও বাংলা এক নম্বরে।
২১ টি স্টেট ইউনিভার্সিটির মধ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ১ নম্বরে। বাংলার মুকুটে আরও একটা পালক যোগ হল।
৬ বছরে ৪৩ টি মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হসপিটাল নির্মাণ করা হয়েছে।কেন্দ্রীয় সরকার এখন স্বাস্থ্যবীমা করছে। আর বাংলায় ইতিমধ্যেই বিনামূল্যে সরকারী চিকিৎসা পাওয়া যায়। আমরা ‘স্বাস্থ্য সাথী’ প্রকল্প চালু করেছি। আইসিডিএস ও আশার কর্মী, সিভিক ভলেন্টিয়ার, হোম গার্ড, অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মী, গ্রিন পুলিশ, পঞ্চায়েত ও মিউনিসিপালিটি কর্মী দের ও এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
সাড়ে ৮ কোটি লোককে আমরা ২ টাকা কিলো চাল দিই। জঙ্গলমহলে আদিবাসীরা ৩৫ কেজি চাল পায়, চা বাগানের শ্রমিকরা ৪৭ পয়সায় এক কেজি চাল পায়।
ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট, ট্রমা কেয়ার ইউনিট, মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাব তৈরী করা হয়েছে। ৮০ টি SNCU ও ৩০০ টি SNSU তৈরি করা হয়েছে। গর্ভবতী মহিলা ও সদ্যজাত শিশুদের জন্য ‘নিশ্চয় যান’ ও ‘মাতৃযান’ এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সমগ্র বাংলায় ১০০০ মাতৃযান দেওয়া হয়েছে।
যারা কন্সট্রাকশানের কাজ করেন, গৃহস্থালিরর কাজ করেন, অটো চালক সহ অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক দের জন্য ‘সামাজিক সুরক্ষা’ প্রকল্প চালু করা হয়েছে (১৮ বছর বয়সে একটি কার্ড করতে হয়। শ্রমিকরা দেয় ২৫ টাকা আর সরকার দেয় ৩০ টাকা) ৬০ বছর বয়সের পর সরকার তাদের ২ লক্ষ টাকা দেবে এবং সাথে তারা পেনশনও পাবেন।
‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের আওতায় মেয়েদের পড়াশোনার জন্য ২৫০০০ টাকা দেওয়া হয়। আগামী এপ্রিল থেকে একটি নতুন প্রকল্প চালু হবে যার নাম
‘রূপশ্রী’। যে সব পরিবারের বার্ষিক ইনকাম দেড় লক্ষ টাকার কম তাদের মেয়েদের বিবাহের জন্য (১৮ বছর বয়সের পর) সরকার ২৫০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা দেবে। মা বোনেরা সমাজের সম্পদ। তারা আমাদের গর্ব।
‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের ভাতা ৭৫০ টাকা থেকে বারিয়ে ১০০০ টাকা করা হয়েছে। কন্যাশ্রী-১ ও কন্যাশ্রী-২ এর পর কন্যাশ্রী-৩ চালু করা হয়েছে এর মাধ্যমে মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাবে। ‘শিক্ষাশ্রী’ প্রকল্পের আওতায় উচ্চ শিক্ষার জন্য স্কলারশিপ দিচ্ছে সরকার।
১.৭১ কোটি সংখ্যালঘু ছেলেমেয়ে, ৫৭ লক্ষ তপসিলি জাতি ও উপজাতি ছেলেমেয়ে ও ৪৫ লক্ষ মেয়েকে স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রতিবন্ধীদের জন্যও প্রকল্প চালু করেছি।
কৃষক ভাতা ৭৫০ টাকা থেকে বারিয়ে ১০০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। ১ লক্ষ ৯৪ হাজার শিল্পীকে ‘লোকপ্রসার’ প্রকল্পের আওতায় মাসে ১০০০ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়, পাশাপাশি সরকারী বিজ্ঞাপন ও অনুষ্ঠানেও কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয় তাদের।
আইসিডিএস-এর ৯০% টাকা দিল্লী সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা কষ্ট করে এই স্কিম চালিয়ে যাচ্ছি।
ক্যাসুয়াল ও কন্ট্রাকচুয়াল ওয়ার্কারদের চাকরির মেয়াদ ৬০ বছর পর্যন্ত করে দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস ৯-এ উঠলেই সবুজ সাথীর সাইকেল পাচ্ছে, এর আগে ক্লাস ১০, ১১, ১২-এ দিয়েছি। এছাড়া বিনা পয়সায় পড়াশোনা, স্কুল ড্রেস, মাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীদের বিনা পয়সায় টেস্ট পেপারও দেওয়া হয়। পরীক্ষার্থীদের জন্য আমার অনেক অভিনন্দন রইল।
সবাই সুন্দর করে রামনবমী পালন করুন। অন্নপূর্ণা উৎসব পালন করুন। বাসন্তী পুজো পালন করুন। গুড ফ্রাইডে, মহাবীর জয়ন্তীও ভালো করে পালন করুন। রাজনীতির নাম করে ধর্মীয় উন্মাদনা নিয়ে কোনও মানুষ যেন কাউকে আঘাত না করতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
আমরা মানুষের সাথে ছিলাম, আছি, থাকবো। মা মাটি মানুষ আমাদের বড় শক্তি।
মেদিনীপুর জেলা স্বাধীনতা সংগ্রামের জেলা, বীর সিংহের জেলা, মাতঙ্গিনী হাজরার জেলা, সতীশ সামন্তর জেলা। আপনারা বাংলাকে পথ দেখান।
আমরা কথা কম বলি, কাজ বেশী করি। অনেকে কাজ করে না, মন্দির মসজিদ নিয়ে গণ্ডগোল লাগায়, হিন্দু-মুসলিম, শিখ-খৃষ্টানের মধ্যে ঝগড়া লাগিয়ে দেয়।
Advertisements