পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্কুল শিক্ষার অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখোমুখি
শাক্য ঘোষ ,কলকাতা : সালটা ১৯৯৪।রাজ্যে তখন হাতে গোনা মুষ্টিমেয় ইংরাজি মাধ্যম স্কুল থাকা সত্ত্বেও শিক্ষিত অভিভাবকরাও তাদের সন্তানকে ভর্তি করার জন্য মুখিয়ে থাকতেন সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে। সরকারি স্কুলে প্রবেশপথের একমাত্র চাবি কাঠি ছিল মেধা।ভর্তির পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি হতো।তখনও লটারি ব্যাবস্থা চালু হয়নি।সত্যজিৎ রায় থেকে মৃনাল সেন,শক্তি চট্টোপাধ্যায় থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সকলেই ছিলেন বাংলা মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়া।
সালটা ২০১৯।বাংলা মাধ্যম স্কুল গুলোর কোথাও পড়ুয়ার সংখ্যা ২ কোথাও বা ৫।২৫ বছরের মধ্যে এই বৈপরীত্য মূলক চিত্রের কারণ অনুসন্ধানে অসংখ্য সরকারী সিদ্ধান্ত এবং সামাজিক দৃষ্টি ভঙ্গি বদলের ছবি ধরা পড়লো ।
অনেক শিক্ষাবিদ বাংলা মাধ্যম স্কুলের দুরাবস্থার জন্য ভর্তির ক্ষেত্রে বিগত সরকারের পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তে লটারি কেই দায়ী করেন। ১৯৯৫ সাল থেকে প্রথম শ্রেণী থেকে লটারি চালু হলেও ২০১০ সালে তৃতীয় শ্রেণীতেও লটারি চালুর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। ফল স্বরূপ ভাল ছাত্র ছাত্রী দের একটা বড় অংশ ব্রাত্যই রয়ে গেলো সরকারী স্কুলের আঙিনা থেকে।
সেই সঙ্গে ইংরাজি তুলে দেওয়ার সুদূর প্রসারী প্রভাব এবং বিগত ১০ বছরে অসংখ্য ইংরাজি মাধ্যম স্কুল তৈরি হওয়াই বিকল্প হিসেবে ভর্তির সুযোগ বাংলা মাধ্যমে ছাত্র ভর্তিতে হ্রাস টেনেছে এবং মেধার নিরিখে প্রতিটি নামকরা সরকারি বিদ্যালয়ে ছাত্রের গুনগত মান আগের থেকে অনেকটাই নিম্নমুখী হয়েছে।
এছাড়াও বাজারের চাহিদার সাথে মাথাই রেখে এবং বহির্বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্মার্ট ক্লাস রুম ,উন্নত কম্পিউটার শিক্ষার সুযোগ ,অত্যাধুনিক পাঠ্যসূচি অভিভাবকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। তাই বর্তমানে নিখরচার সরকারি শিক্ষার থেকে যথেষ্ট খরচের বেসরকারি স্কুল তাই অভিভাবকদের চোখে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে।এ প্রসঙ্গে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের এক শিক্ষকের মতে বিগত সরকারের ইংরাজি তুলে দেওয়া আসলে মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়ার সমান ছিল।যার ই ফলশ্রুতি আজকের বাংলা মাধ্যমে ছাত্র ভর্তিতে অনীহা।
বর্তমান সরকার অবশ্য এই সমস্যা থেকে বাঁচতে ১০০০ টি সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল কে বাংলার পাশাপাশি ইংরাজি মাধ্যমে পড়াশোনা শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছে।যার মধ্যে বেশ কয়েকটিতে পঠনপাঠন ও চালু হয়েছে।
এখন অপেক্ষার শুরু- বাংলা মাধ্যম স্কুল গুলি কবে তার পুরনো স্বমহিমাই ও স্বসন্মানে ফিরে যায় যেখান থেকে বহু মনীষী ও উজ্জ্বল কৃতি র হাতে খড়ি হয়েছে।