সুমন তোমাকে চাই – সুব্রতা ঘোষ রায়ের কলমে “সত্তরে সুমন”

0
1852
Kabir Suman - Seventy Not out
Kabir Suman - Seventy Not out
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:8 Minute, 44 Second

সুব্রতা ঘোষ রায়ের কলমে “সত্তরে সুমন”

হঠাত প্রবীর এনেছিল ক্যাসেটটা ‘তোমাকে চাই’- কালো কভারে এক দাড়িওলা যুবকের ছবি – লেখা ‘সুমনের গান’ । প্রথম গানেই ম্যাজিক, তারপর পরপর যে গান,- সে যেন সজনে গাছের নতুন ঝিরঝিরে পাতায় মিষ্টি রোদ পড়ার পর হাওয়ার দোলায় যে নাড়া…তাই । নড়ছি…আবার ভালও লাগছে, শিরা উপশিরায় যেন এক জেগে ওঠার আনন্দ, শিরশিরানি, এ কী রে বাবা ! শুনতে শুনতে দ্বিতীয় পিঠের শেষ গান ‘গড়িয়াহাটার মোড়’ তার শেষ প্যারা ‘আমাদের জন্যে মিষ্টি সকাল, নীলের গভীরে হাসে একা মহাকাল…’ ক্যাসেটটা শুনেই যাচ্ছি । প্রবীর বিকেলে নিজের বাড়ি ফিরে যাবে, তখন আমাদের বিয়ে হয় নি, ক্যাসেটটা আমি নির্লজ্জের মতো এতবার শুনেছি যে ও রেখে গেল আমার কাছে । হেসে বলল – থাক এটা, আমি অন্য একটা নিয়ে নেব । প্রথম দুদিন এত শুনেছি যে প্রায় সব গান মুখস্থ । রাস্তায় বের হলে, যখন গানগুলো শুনতে পারছি না, গান গুলো যেন পিছু নিচ্ছে । গড়িয়াহাট মোড়ের শেষ প্যারা তাড়া করছে সারা শরীরে, মাথায়…মনে হচ্ছে জোরে জোরে গেয়ে ফেলি, কিন্তু এ তো রাস্তা, গাইব ? লোকে তো পাগল বলবে সদ্য কলেজ পাশ করা মেয়ে পাগল ! অগত্যা সংযম – অপেক্ষা বাড়ি ফেরার, আবার শোনার ।

এরপর সুমনের যে যাত্রা, – তাতে একক অনুষ্ঠান, পরপর ক্যাসেট প্রকাশ, গোল্ড ডিস্ক, প্ল্যাটিনাম ডিস্ক…বই প্রকাশ…
মনে পড়ে সেই ৬ ডিসেম্বর রবীন্দ্রসদনের অনুষ্ঠান…প্রথম দিকটায় পুরষ্কার, স্মারক প্রদানের ব্যাপার ছিল, অনুষ্ঠান দেখে ফিরে এসেছি আর সেই রাতেই বাবারি মসজিদ ভাঙা হল, সারা দেশে গন্ডোগোল, ৬ ডিসেম্বর কুখ্যাত হয়ে গেল । কিন্তু আমার প্রতিবার এই দিনটিতে মনে হয়- আমারা এই দিন সুমনের গান শুনেছিলাম । এই ভাবে সুমনের গান, উপস্থাপন যেন আস্তে আস্তে ভেতরে চলে যেতে থাকল । সব ক্যাসেট সংগ্রহ করছি, প্রায় সব অনুষ্ঠান দেখছি । দোকা, আমি আর প্রবীর । এরমধ্যে আমার প্রথম লেখা, পাঁচালী আঙ্গিকে লেখা দীর্ঘ কবিতা প্রকাশ পেয়েছে, ২০০৫ সালে । সুধীর চক্রবর্তী সম্পাদিত ‘ধ্রুবপদ’ নারীবিশ্ব সংখ্যায়, প্রবন্ধের সংকলনে ব্যতিক্রমী লেখা হিসেবে । কিছু খবরের কাগজ ও পত্রিকায় মাঝে মাঝে নিবন্ধ লিখছি । আর সুমনের গান ভালবাসে আমার লেখার কিছু পাঠক ও সম্পাদক, প্রবীরের পরিচিত ওঁর কলেজের কিছু সতীর্থ, আত্মীয়, স্বজন সবাই যেন আমরা এই সূত্র ধরে আস্তে আস্তে সুমন-তুতো হয়ে উঠছি । ওঃ, এরমধ্যে আমার আর প্রবীরের ভাব-ভালবাসা বিবাহিত হয়েছে, টিনটিন এসেছে । টিনটিন হাঁটতে শেখার পর ওকে একটা এক হাত মতো লম্বা খেলনা গিটার দেওয়া হয়েছিল । আর তখন সুমনের “ছুটি” ক্যাসেটটি প্রকাশ পেয়েছে । ছুটি ক্যাসেটের কিছু গানের ভিডিও ক্লিপ দেখানো হত প্রায়ই একটি চ্যানেলে । টিনটিন জানত ওটা সুমন জ্যেঠু গাইছে । সুমনের সাথে তখন বা এখন আমাদের কোন ব্যক্তিগত পরিচয় নেই, কিন্তু ছোট্ট টিনটিনের কাছে সুমন সেই “ছুটি” র কবিতা ও গানের দৌলতে মস্তিষ্কে সুমনজ্যেঠু হয়ে পৌঁছে গেছে । আর ওই গানগুলি টিনটিনের আধো আধো বোলে তোলা হয়ে গেছে । যে কারণে এই গল্প করা – যতদূর মনে পড়ে “ ধস্তাধস্তি করে মাউসটা হাতে ধরে ইন্টারনেটে ” দিয়ে শেষ হত ক্লিপটা । শেষটায় দেখা যেত সুমন গিটার নিয়ে চলে যাচ্ছেন, আর যেতে যেতে শেষটায় একবার পেছন ফিরে তাকালেন …টিনটিনও অবিকল গানটা ওইভাবে তুলে নিয়েছিল, আর শেষটায় টিনটিনও ওই ছোট গীটার নিয়ে অন্য ঘরে হাঁটা দিত আর চোখে মুখে একটা সুমন জ্যেঠু মার্কা লুক দিত পেছন ফিরে, আমাদের বেশ মজা লাগত । আমার মনে হয় এই ধরনের ঘটনা আমার মতো অনেকের জীবনেই ঘটেছে ।

এরমধ্যে গড়িয়েছে অনেক দিন, বছর । নিজের গানের সাথে সুমন গেয়েছেন রবীন্দ্রনাথের গান, হিমাংশু দত্তের গান, নিজের ইংরেজীতে লেখা গান, সুর দিয়েছেন ছায়াছবিতে । জাতীয় পুরষ্কার পেয়েছেন । নিজের লেখা খেয়াল গাইছেন । এই সময়ের মধ‍্যেই রাজনীতির চেয়ারে অনেক অদলবদল হয়ে গেছেন । প্রতিবাদী সুমন এম পি হয়েছিলেন । দলের উর্ধে উঠে কাজ করতে চেয়েছিলেন, সেই পথ প্রশস্ত হয়েছে কি হয় নি তা পরের প্রশ্ন কিন্তু তিনি দলের উর্ধে উঠে যে কাজ করতে চেয়েছিলেন, তা কিন্তু প্রমাণিত । জীবনের প্রেম, প্রীতি, ভালবাসা, সুখ, দুঃখ, রাগ, মান, অভিমান, বিশ্লেষণ, সচেতনতা গান হয়ে উঠেছে যাদুতে । এই যাদু হয়ে উঠছে ইতিহাস, আর আমরাও এই এই ইতিহাসের গতিময় ছবির মধ্য দিয়ে কবিতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছি তাঁর হাত ধরে ।

দুই হাতের তিনটে তিনটে আঙুলের টিপে সাড় নেই, গিটার আর তেমন বাজান না, কিন্তু তাই নিয়েও ‘সত্তরে সুমন’ কলকাতা টিভির উদ্যোগে যে অনুষ্ঠান ১৬ মার্চ ২০১৮ নজরুল মঞ্চে হল, আমরা যেন ফিরে পেলাম সেই সুমনকে । যেন তরতাজা হয়ে গেলাম অনেকটাই …
গল্পের ছলে আচার্য সত্যকিংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজের কথার সাথে একটি খেয়াল আর সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে লেখা ‘পদাতিক তিনি, ফুল না ফুটলেও বসন্ত চান’ খেয়াল দিয়ে সুচনা করে ক্রমশ গড়িয়াহাটার মোড়, কতটা পেরোলে তবে, তোমাকে অভিবাদন, যদিও আকাশ, পথ চেয়ে রব (শচীন দেব বর্মন), খোদার কসম জান, মোমবাতিটা কোথায় গেল, ডি এল রায়ের কুঞ্জবন, যদি দিয়েছ দিয়েছ পরাণ বঁধুয়া, আমি যাঁকে ভালবাসি, পেটকাটি চাঁদিয়াল, রাই জাগো রাই জাগো, কটা ঘরে আগুন লাগালে, বাঁশুরিয়া, বয়স আমার মুখের রেখায়, দরিয়ার জল, রাতের দেউলে (হিমাংশু দত্ত), তেরি দুনিয়ামে (হেমন্ত মুখোপাধ্যায়)এবং তোমাকে চাই…গেয়ে চললেন সুমন … মাঝে ‘নীল নীল আকাশের কাছে আজ যাওয়া চাই…’ গান আমারাও গাইলাম তাঁর সাথে … এ এক কিছু সময়ের জন্য বিরতিহীন অবগাহন, সুরের ধারা স্নান …সত্তর নিয়ে এসেছে যেন অনেক পরিণতি, যাতে কোন শত্রুতা নেই, আছে প্রশান্তি, পরিতৃপ্তি, ফড়িঙের ডানাতেও জীবনের জয়গানের মতো ……

লেখা – সুব্রতা

সংবাদ সুত্র : ফারুক আহমেদ ,কল্যানী 

About Post Author

Editor Desk

Antara Tripathy M.Sc., B.Ed. by qualification and bring 15 years of media reporting experience.. Coverred many illustarted events like, G20, ICC,MCCI,British High Commission, Bangladesh etc. She took over from the founder Editor of IBG NEWS Suman Munshi (15/Mar/2012- 09/Aug/2018 and October 2020 to 13 June 2023).
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD





LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here