হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোন জন……।।

0
1516
Ashoke Majumdar
Ashoke Majumdar
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:10 Minute, 48 Second

হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোন জন……।।

অশোক মজুমদার

বেশি তত্ত্বকথা আমার মাথায় আসে না। সহজ জিনিস সহজ কথায় বলছি। আচ্ছা, আমরা হিন্দু, মুসলমান একসঙ্গে মিলেমিশে না থাকলে বিরিয়ানি কি আমাদের শহরে সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হত? নাকি আমরা পেতাম ব্রজভাষায় আমির খুসরো-র লেখা সেই কালজয়ী কাওয়ালি গান ‘ছাপ তিলক সব ছিনি রে মো সে ন্যয়না মিলায়কে।’ এই বাংলায় তো মান্টো আর মানিকবাবু সমান জনপ্রিয় স্রেফ তাদের সাহিত্যকর্মের গুণেই। কোন স্লোগান, সেমিনার, পদযাত্রা, ফ্ল্যাগমার্চ, কারফিউ নয়, রুচি, ভালোলাগা, আর এসব মিলেমিশে গড়ে ওঠা সংস্কৃতিই আমাদের একসঙ্গে বাঁচতে শিখিয়েছে। মাঝেমাঝেই স্বার্থান্বেষীদের চক্রান্তে আমাদের মধ্যে অশান্তি হয়নি এমন নয়, কিন্তু তা কখনোই স্থায়ী হয়নি। সংস্কৃতির মধ্যে দিয়েই ওপরে বলা মানুষগুলি আমাদের শিখিয়েছিলেন মানুষই আসল, বিশ্বাসই আসল। এই শিক্ষায় শিক্ষিত হবার সুবাদে আমরা জেনে গিয়েছি আমাদের সবার রক্ত লাল। হিন্দু- মুসলমান সবার শরীরে বইছে সেই একই রক্ত। তফাৎ যেটুকু আছে তা নেহাতই ওপর ওপর। আদতে আমরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম। দেশভাগের যন্ত্রণা বাংলা সবথেকে বেশি সইলেও সাম্প্রদায়িক শক্তি এখানে খুব একটা পাত্তা পায়নি। কিন্তু বিজেপি আমাদের এই ইতিহাস ভুলিয়ে রাজ্যে ভাইয়ে ভাইয়ে দাঙ্গা লাগিয়ে দিতে চাইছে।

অভিজ্ঞতা, শিক্ষা আর মুক্ত বুদ্ধির চর্চার সুবাদেই বিদ্বজ্জনেরা মানুষের কাছাকাছি আসেন। এটাই তাদের বৈশিষ্ট্য। কোন প্রবল অহমবোধ তাদের মানুষের থেকে দূরে সরিয়ে দেয় না। মানব সমাজের যেকোন গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কটে তারা এগিয়ে আসেন, মানুষকে পথ দেখান, দাঁড়ান ন্যয়ের সপক্ষে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা এর সবচাইতে বড় উদাহরণ দেখেছি নন্দীগ্রামের ঘটনার সময়ে। চাষিদের উর্বর কৃষিজমি শিল্পের নামে জোর করে কেড়ে নেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের রাস্তায় নেমে বিরোধিতা করেছিলেন বাংলার বুদ্ধিজীবীরা। ছবি, লেখা, নাটকে, গানে, সিনেমায়, বক্তৃতায়, গবেষণায় জীবন্ত হয়ে উঠেছিল বাংলার বিদ্বজনদের এই প্রতিবাদের ভাষ্য। বদলে গিয়েছিল বাংলার রাজনীতির ছবি। শাসকদলের বিরুদ্ধে দিদির লড়াইকে সফল করে তোলার একটা সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছিলেন তারা। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাস অন্য মোড় নিয়েছিল।

আমাদের দিদিও এদের খুব ভক্ত। এদের কাজকর্মের খোঁজ রাখেন। দরকারে মতামত নেন। নানা সময়ে পাশে দাঁড়ান। এদের অনেকের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সখ্যতা রয়েছে। শিল্প সংস্কৃতি বিষয়ক নানা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব তিনি তুলে দিয়েছেন এসব গুণীজনদের হাতে। এরা যে সবাই তৃণমূল করেন তা নয় কিন্তু দিদি জানেন এরাই সমাজের বিবেক। দেশ ও জাতি গঠনে এদের একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে। বঙ্গভূষণ, বঙ্গবিভূষণ সহ নানা সন্মাননায় এদের সন্মানিত করেছেন তিনি। এদের ডাকে রাজ্যের চলচ্চিত্র উৎসব থেকে শুরু করে নাট্য উৎসব, যাত্রা উৎসব সর্বত্র তিনি ছুটে যান। আমি দেখেছি ব্যস্ত থাকলেও তিনি ঠিক সময় বার করে নেন।

বাংলার এই বিপদের দিনে বুদ্ধিজীবীদের আবার এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে পথ দেখাতে হবে তাদের। ফিরিয়ে দিতে হবে তাদের প্রতি দিদির বিশ্বাস ও আস্থা। কিন্তু আমার মনে হয় অতীতে উজ্জ্বল ভূমিকা থাকা সত্বেও এই ব্যাপারটাতে তারা খানিকটা পিছিয়ে আছেন। এখনও সেভাবে মাঠে নামেননি তারা। মনে হয় তারা ভুগছেন একটা বিশাল ইগো ক্রাইসিসে। প্রবল ইগো তাদের রাজ্যের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তা না হলে রাজ্যের নানা প্রান্তে যখন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটছে তার বিরুদ্ধে তাঁরা একযোগে পথে নামছেন না কেন? কেন সবাই মিলে জোর গলায় বলছেন না এ রাজ্যে সাম্প্রদায়িক শক্তির কোন জায়গা নেই। উল্টে তারা নিজেরা ঝগড়াঝাঁটি করছেন।

সম্প্রতি কলকাতার প্রেসক্লাবে একটা সাংবাদিক সন্মেলনে তাদের নিজেদের মধ্যে বিভেদ সামনে এল। দেখা গেল এমন একটা বড় বিপদেও ‘বিগ পিকচারটা’ দেখতে ব্যর্থ হয়ে তারা নিজেদের মধ্যেই ঝগড়াঝাঁটি শুরু করলেন। আমরা দেখছি মৌলবাদের বিরুদ্ধে মোটামুটিভাবে সমমনস্ক লোকেদের এক হয়ে চলার ব্যাপারে এখনও অনেক ঘাটতি আছে। সাংবাদিক সন্মেলনে মূল আওয়াজ ছিল ‘এসো সম্প্রীতি, যাও বিভাজন।’ অথচ এমন একটা মহৎ আওয়াজকে পিছনে রেখেই সেখানে সামান্য একটি ব্যাপারকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে ব্যাপক তরজা জুড়ে দিলেন বাংলার দুই অগ্রণী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, কবীর সুমন ও আবুল বাশার।

আমার মতে এটা তারা না করতেই পারতেন। এখন তো তাদের আরও এক হয়ে চলার সময়। বুদ্ধিজীবীদের নিজেদের লেখা, ছবি, গান, সিনেমা, গবেষণা দিয়ে আমাদের পথ দেখানোর সময়। এই সময় তো নিজস্ব ইগো ভুলে তাদের আরও এক হতে হবে। নইলে পরে তাদের ইগো দেখানোর মত আর কোন জায়গাই থাকবে না। সব ইগোকে ঢেকে দেবে হিন্দুত্ববাদী ফতোয়া। মানুষের স্বার্থে এবং নিজেদের কাজের স্বাধীনতার জন্যই দলমত নির্বিশেষে তাদের সবার এক হওয়ার দরকার। ও এলে আমি থাকবো না কিংবা ও এলে আমি যাবো না গোছের বায়নার কোন জায়গাই এখানে নেই। মানুষের কল্যাণেই বিদ্বজনেরা কাজ করেন, সেই মনুষ্যত্বই যখন বিপদে তখন তারা এক হবেন না কেন? আমি বুঝতে পারছিনা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের এক হয়ে কাজ করতে অসুবিধাটা কোথায়? কেন তারা বিভেদপন্থীদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন।

প্রেসক্লাবে ওই সাংবাদিক বৈঠকে বলা হয়েছে ৮ তারিখে কলকাতার বিদ্বজ্জনেদের একাংশ যে মিছিল করবেন তাতে তারা অংশ নেবেন না। কারণ ওই মিছিলে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের লোকজন থাকবেন। আমার প্রশ্ন তা থাকতেই পারেন, কিন্তু ইস্যুটা তো সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। এর উদ্দেশ্য তো সম্প্রীতির একটা বাতাবরণ তৈরি করা। তাহলে তাতে যোগ দিতে বাধা কোথায়? আর কেনই বা এই মিছিলটা একসঙ্গে করার উদ্যোগ নেওয়া গেল না? সঙ্কীর্ণ রাজনীতির স্বার্থেই রাজ্য সিপিএমের কিছু নেতা যৌথ মিছিলকে আমরা ওরা তে বন্দী করতে চাইছেন। ওরা সেই ফাঁদে পড়বেন কেন? আর রাজনীতিকেই বা বাদ দেওয়া যাবে কী করে? দল না করলেও আমাদের সবারই তো একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্বাস রয়েছে?

আমার একটা ছোট প্রার্থনা আছে, বাংলার সামনে আজ বড় বিপদ। সাম্প্রদায়িকতা এর আগে আমাদের বহু বছর পিছিয়ে দিয়েছে। দেশের অনান্য রাজ্যের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ক্ষতিপূরণ ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পুনর্বাসন বাংলা পায়নি। তাই আপনারা সবাই বিজেপি নামক বিভেদকামী শক্তিটির বিরুদ্ধে এক হয়ে দাঁড়ান। আপনারা যা পারেন, আমরা তা পারিনা। পৃথিবীর সব দেশে সবকালে মনুষ্যত্বের অবমাননার বিরুদ্ধে, ধর্মান্ধদের গোঁড়ামির বিরুদ্ধে, ফ্যাসিস্টদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আপনাদের মত বিদ্বজনেরাই পথ দেখিয়েছেন। এই সময়ে আপনাদের নিজেদের মধ্যে বিভেদ এই লড়াইকে দুর্বল করবে। মনে রাখবেন এই বিভেদপন্থার বিরুদ্ধেই গর্জে উঠেছিলেন নজরুল। মনে পড়ছে তার সেই বিখ্যাত লাইন ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোন জন।’ বড় দুঃখে, ক্ষোভে কথাগুলো লিখে ফেললাম, ভুল হলে নিজ গুনে ক্ষমা করে দেবেন।

অশোক মজুমদার

News source Faruque Ahamed

*** Opinion expressed here is author’s personal view IBG NEWS neither agree nor disagree with the same ***

About Post Author

Editor Desk

Antara Tripathy M.Sc., B.Ed. by qualification and bring 15 years of media reporting experience.. Coverred many illustarted events like, G20, ICC,MCCI,British High Commission, Bangladesh etc. She took over from the founder Editor of IBG NEWS Suman Munshi (15/Mar/2012- 09/Aug/2018 and October 2020 to 13 June 2023).
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD





LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here