Read Time:15 Minute, 11 Second
পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগমের উদ্যোগে আজ দাওয়াত-ই-ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে
বিশেষ প্রতিবেদক
পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগমের পক্ষ থেকে আজ দাওয়াত-ই-ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে সল্টলেকের পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগমের প্রধান কার্যালয়ে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় ও দক্ষ প্রশাসনিক আধিকারিক তথা পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান ডা. পি বি সালিম, আইএএস-এর উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম পার্সি, জৈন, খ্রিস্টান, মুসলিম, বৌদ্ধ ধর্মের মানুষদের নিয়ে কল্যাণমুখী নানান কাজ করছে। তাদের তৈরি বিভিন্ন পণ্যকে সকলের সামনে নিয়েও আসছে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম। এইসব পণ্য বিশ্ববাজারে উঠেও আসছে। পশ্চিমবঙ্গের বহু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারও চরম উপকৃত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের হাত ধরে। সংখ্যালঘুদের সাংস্কৃতিক উন্নয়নেও পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম গুরুত্ব দিয়েছে। প্রতিবছর পার্কসার্কাস ময়দানে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের উদ্যোগে মিলন উৎসবের আয়োজনও করা হয়। এবছরের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সকলকেই মুগ্ধ করেছিল।
বাংলার লোকসংস্কৃতি ভাওয়াইয়া, পল্লিগীতি প্রভৃতি সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে এক সুন্দর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপভোগ করেছিল সেদিন বাংলার সাংস্কৃতিক মানুষেরা।
মেলালেন তিনি মেলালেন। গানে-কবিতায়-কথায়। মাঝিমাল্লা, কৃষক, গরুর গাড়ি—গ্রাম-বাংলার মাটির ঘ্রাণ। আব্বাসউদ্দিন, কাজী নজরুল ইসলাম থেকে রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়, আবদুল আলিম। বাংলার লোকসংস্কৃতি আর আধুনিকতার মিশেলে কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ মিলে গিয়েছিল পার্ক সার্কাস ময়দানের মিলন উৎসবে। পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের পরিচালনায় সেদিন সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় সাক্ষী ছিল এক অভূতপূর্ব আনন্দঘন সঙ্গীত অনুষ্ঠানের।
ওই দিন গানের জলসায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি সুবোধ সরকার ও কবি ফারুক আহমেদ। কবি সুবোধ সরকার তাঁর বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রান্তিক মানুষদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইতিহাস তৈরি করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ ধর্ম-সম্প্রদায়ের ভেদাভেদ ভুলে দুটি কুসুমে পরিণত হয়েছে, একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আপনারাই পেরেছেন। আপনারাই পেরেছেন। আপনারাই পেরেছেন। আবেগমথিত গলায় বলে ওঠেন কবি সুবোধ সরকার।
কবিকে ফুলের স্তবক, উত্তরীয় ও মোমেন্টো দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছিল ওই দিন পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগমের পক্ষ থেকে।
তবে ওই মিলন উৎসবের অবশ্যই সবচেয়ে বড় উপহার ছিলেন সকলের প্রিয় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের পুত্রবধূ কল্যাণী কাজী। ৮৩ বছর বয়সেও হারমোনিয়াম বাজিয়ে তিনি গাইলেন, তৌহিদেরই মুর্শিদ আমার…। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় কীভাবে ‘এক বৃন্তে দুটি কুসুম’ বিভিন্ন ভাষায় তরজমা করে গেয়ে বেড়াতেন, সেসব স্মৃতিচারণও করেছিলেন। সেই স্মৃতিচারণের পর হয়েছিল নবীন ও প্রবীণের মিলনে বিশেষ সঙ্গীত অনুষ্ঠান। জাতীয় স্তরে সংগীত প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া তরুণ গায়ক মীর আরেফিন রানাকে উপহার তুলে দিয়েছিলেন কল্যাণী কাজী। আরেফিনও মাতিয়ে দিয়েছিলেন ফোক আর মডার্নের মিশেলে বিশেষ সঙ্গীত পরিবেশন করে সকলকে মুগ্ধ করেছিল।
কবি ফারুক আহমেদ সেদিন তাঁর রচিত দুটি কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন। কবি তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেছিলেন এবং কুর্নিশ জানিয়ে বলেছিলেন, “মহতি মহা-মিলন উৎসবকে সার্থক করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগমেরের চেয়ারম্যান ড. পি বি সালিম সাহেব সার্থক প্রয়াস নিয়ে বাংলার সংখ্যালঘুদের সমৃদ্ধ করছেন। তার জন্য দুজনকেই অফুরন্ত ধন্যবাদ।”
ফারুক আহমেদ-এর কবিতাপাঠে মুগ্ধ হয়েছিলেন ৮ থেকে ৮০ আগত সকল দর্শকমণ্ডলী।
পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগমের পক্ষ থেকে কবি ফারুক আহমেদকে বিশেষ ভাবে সেদিন সম্মানিতও করা হয়েছিল ফুলের স্তবক, উত্তরীয় ও মোমেন্টো দিয়ে।
সকলের প্রিয় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের পুত্রবধূ কল্যাণী কাজী ফারুক আহমেদের হাতে ফুলের স্তবক ও মোমেন্টো তুলে দিয়েছিলেন আর কলম পত্রিকার সম্পাদক ও সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান উত্তরীয় পরিয়ে দিয়েছিলেন। সবমিলে সেদিনের আয়োজন ছিল চোখে দেখার মতো। পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগমের পক্ষ থেকে পার্ক সার্কাসের এবছর মিলন উৎসব মহা মিলনোৎসবে সার্থকতা পেয়েছিল।
সঙ্গীত সন্ধ্যায় অসাধরণ সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন নূপুর কাজী, নাজমুল হক ও পলাশ চৌধুরী। আর গজল গেয়ে মাতিয়ে দিয়েছিলেন এস কে হাবিব ও শাকিল আনসারী। আর পরিচালনার পাশাপাশি কথার কারুকার্যে যোগ্য সঙ্গত করেছিলেন শাকিল আনসারী।
মিলন সন্ধ্যায় উপস্থিত ছিলেন, সাংসদ নাদিমুল হক, কবি ও লেখক সুব্রতা ঘোষ রায়, প্রবীর ঘোষ রায়, কুমারেশ চক্রবর্তী, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গৌতম পাল, সমাজসেবী এস এস আলম, আব্দুল মুজিদ, মো: আবেদ আলি, ওয়ায়েজুল হক, মহ. কামরুজ্জামান, ফিরোজ হোসেন, ডা: কবীর হোসেন, মসিহুর রহমান-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
পার্ক সার্কাসের স্কুল থেকে আসা ইউনিফর্ম পরা মেয়েরা দর্শক আসনে, দর্শক আসনে উর্দুভাষী হিজাবি, আশেপাশের মানুষ আর বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বাঙালি। সব মিলে গিয়েছিল একসঙ্গে। ভাষার ব্যবধান ঘুচে গিয়েছিল। তাই সভা যখন শেষ হচ্ছিল, ব্যাকগ্রাউন্ডে যখন নূপুর কাজীর কণ্ঠে বাজছিল বিদায়ের সুর ‘ছেড়ে দে নৌকা আমি যাব মদিনা’, তখন পার্ক সার্কাসের স্থানীয় বাসিন্দা বলে উঠছিলেন, ‘বাঙাল লোগ হামেশা কামাল করতে হ্যায়।’ তরুণ প্রজন্ম গুগলে সার্চ দিচ্ছে একটু আগে গাওয়া বাংলা গানগুলি। মিলে যাচ্ছে ঐতিহ্য আর তারুণ্য। পলাশ চৌধুরীর গান দিয়ে সঙ্গীত অনুষ্ঠান শেষ হয়েছিল। সকল সঙ্গীত শিল্পীদের পাশাপাশি মহা সঞ্চালক ও পরিচালক শাকিল আনসারীকেও সেদিন সম্মানিত করা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের পক্ষ থেকে।
সেদিন পার্ক সার্কাস ময়দানে বৈচিত্রের মাঝে মহামিলনের উৎসবে গানের ভুবনে হারিয়ে যাওয়ার দিন ছিল।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর অনুপ্রেরণায় পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম এর উদ্যোগে ১০ ফ্রেব্রুয়ারি থেকে ১৯ ফ্রেব্রুয়ারি, ২০১৮ পর্যন্ত পার্ক সার্কাস ময়দানে আয়োজিত হয়েছিল এই “মিলন উৎসব ২০১৮”। পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিজস্ব কুটির শিল্প, খাবারদাবার এবং সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটেছিল এই মিলন উৎসবে। এছাড়াও এই উৎসবে ছিল কেরিয়ার কাউন্সেলিং ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির। প্রতিদিন চলেছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মিলন উৎসব সার্থক করতে সকলকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ড. পি. বি. সালিম, আই.এ.এস., সচিব, সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং চেয়ারম্যান, পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগম। মৃগাঙ্ক বিশ্বাস, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগম।
পার্ক সার্কাস ময়দানে বৈচিত্রের মাঝে মহামিলনের উৎসবের শুভ সূচনা করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
বিশেষ অতিথি হয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান ও গিয়াস উদ্দিন মোল্লা।
পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম আয়োজিত মিলন উৎসবে চাকরি এবং শিক্ষা কাউন্সিলিং-এ আগ্রহী চাকরি প্রার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। ভিড় হয়েছিল বিদেশে পড়তে যাওয়ার খোজ নিতে। বিশেষ করে মেডিক্যাল শিক্ষার কোথায় কি সুযোগ সুবিধা আছে তা জানার আগ্রহ ছিল খুব।
বিদেশে চাকরি পেতে কোথায় কী করতে হবে তা জানার আগ্রহে বহু ছাত্র-ছাত্রী মিলন উৎসবে হাজির হয়েছিল।
সারা মেলা জুড়ে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের সুবিধাভোগীদের তৈরি নানা ধরনের অলঙ্কার, পোশাক প্রদর্শন ও বিক্রি হয়েছিল বিভিন্ন স্টলে। মিলন উৎসব জমে উঠেছিল এবং মানুষের উৎসহ দিন দিন চোখে পড়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান ডা. পি বি সালিম সাহেব বলেছিলেন, “নিগমের কাছ থেকে ক্ষুদ্র ও মেয়াদি ঋণ নিয়ে যারা ব্যবসা করে স্বনির্ভর হয়েছেন, তারা এখানে পণ্য সম্ভার সাজিয়েছেন। তাদের পণ্য কিনতে মানুষ স্টলগুলিতে হাজির হচ্ছেন। বিক্রিবাটা ভাল হচ্ছে। নিগমের মেলা করার মূল লক্ষ্য মানুষের কাছে এই সব প্রান্তিক মানুষের সৃষ্টিকর্ম তুলে ধরা এবং তার বিপণনের ব্যবস্থা করা। জনসমাগম এবং ক্রেতা আমাদের উৎসাহিত করছে।”
মিলন উৎসবেকে সার্বিক সফল করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন ডা. পি. বি. সালিম, আই.এ.এস., সচিব, সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং চেয়ারম্যান, পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগম। মৃগাঙ্ক বিশ্বাস, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, জিএম তথা জেনারেল ম্যানেজার শামসুর রহমান এবং মোঃ নকি, পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগম। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগমের অন্যান্য আধিকারিক ও কর্মচারীবৃন্দ।
মিলন উৎসবে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিল ফ্রি কেরিয়ার কাউন্সেলিং এবং
চাকরি পাওয়ার পরামর্শ।
মিলন উৎসব উদ্বোধনের পর স্বাগত ভাষণ হয়েছিল এবং তারপর স্কলারশিপ, ঋণ, প্রভৃতি প্রদান করাও হয়েছিল।
মিলন উৎসবে আল আমীন মিশনের স্টল ছিল। ৯২ নম্বর স্টলটি ছিল আল আমীন মিশনের। এখানে আল আমীন মিশনের পত্র-পত্রিকার সঙ্গে “উদার আকাশ” পত্রিকার বইমেলা বিশেষ সংখ্যা ২০১৮ পাওয়া গিয়েছিল।
Advertisements