Read Time:15 Minute, 2 Second
মাধ্যমিক পরীক্ষায় চমকে দেওয়ার মতো ফল করেছে আল-আমীন মিশনের ছাত্র-ছাত্রীরা
বিশেষ প্রতিবেদন, কলকাতা:
সর্বকালের সেরা রেকর্ড করল আল-আমীন মিশনের ছাত্র-ছাত্রীরা এবার নিট পরীক্ষায় সফল হয়েছে ৪৩২ জন। দেশের মধ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা সচেতন নাগরিকদের চমকিত করল এই মিশনের ছাত্র-ছাত্রীরা। আল-আমীন মিশনের ছাত্র মহম্মদ সিনান হাম্মাম মিঞা নিট পরীক্ষায় দেশের মধ্যে টপ ২৬০ তম স্থান অধিকার করেছে।
বহু মেধাবী মডিকেলে পড়ার সুযোগ পেল। আল-আমীন মিশনের এই ছাত্র-ছাত্রীরা চমকে দিল। মেয়েরাও চমকে দিয়েছে ১০০বেশি মেয়ে ডাক্তারি পরীক্ষায় সফল হয়েছে।
আজ মাধ্যমিক পরীক্ষায় রেজাল্টেও মন ভরিয়ে দিল আল-আমীন মিশনের ছাত্র-ছাত্রীরা। মিশনের ২৫ টি শাখার ৯৩৯ জন ছাত্রের মধ্যে ৬৭০ নম্বর পেয়ে যুগ্মভাবে প্রথম স্থান অধিকার করেছে বীরভূমের পাথরচাপুড়ি শাখার দুই ছাত্র ইমন রোজ ও আল তাওফিক। রাজ্যস্তরে তাদের সম্ভাব্য র্যাঙ্ক ২০-তম। ছাত্রীদের ১২ টি শাখার মোট ৪১২ জন ছাত্রীর মধ্যে ৬৬৭ নম্বর পেয়ে পাথরচাপুড়ি শাখার তানিয়া ইসলাম প্রথম হয়েছে। মোট ১৩৫১ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ৯০% ও তার বেশি নম্বর পেয়েছে ২৭৭ জন, ৮৫% ও তার বেশি নম্বর পেয়েছে ৭০৬ জন, ৭৫% ও তার বেশি নম্বর পেয়েছে ১১৩০ জন, ৭০% ও তার বেশি নম্বর পেয়েছে ১২২৩ জন। ছাত্র-ছাত্রীদের এই সাফল্যে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মিশনের সাধারণ সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম।
আল আমীন মিশনকে নিয়ে লেখা টাইমস্ বাংলার সম্পাদক মিজানুর রহমানের একটি অসাধারণ গান তিনি বলেন, গ্রাম বাংলার সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত প্রান্তিক পরিবারের এই সব ছেলেমেয়েরা মিশনের শিক্ষা অনুশীলন ও পরিবেশে তাদের মেধার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটাচ্ছে। এর ফলেই প্রত্যেক বছর মিশন নতুন কীর্তিমান গড়ছে। মিশনের কয়েকজন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের সারাংশ নিচে দেওয়া হল।
১৩৩১ বঙ্গাব্দে কলকাতার চীনাবাজার অঞ্চলে পরপর কয়েকটি খুনের ঘটনার কিনারা করতে ‘বে-সরকারী ডিটেকটিভ’ ব্যোমকেশ বক্সীর আবির্ভাব সত্যান্বেষী গল্পে। এই চরিত্রের নির্মাতা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্যোমকেশের দারুণ ভক্ত ইমন রাজ এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬৭০ নম্বর পেয়ে মিশনের মধ্যে প্রথম স্থান দখল করেছে। বর্ধমান জেলার গলসী থানার সুন্দলপুর গ্রামের ইমন বাংলায় ৯৩, ইংরেজিতে ৯০, গণিতে ১০০, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৯, জীবন বিজ্ঞানে ৯৭, ইতিহাসে ৯১ এবং ভূগোলে ১০০ নম্বর পেয়েছে। ইমনের মা-বাবা উভয়েই পার্শ্ব শিক্ষক। টান টান সংসারেও পুত্রের পড়াশোনার প্রতি খুবই সজাগ তারা। মিশনের পাথরচাপুড়ি শাখার এই মেধাবীর ইচ্ছা ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হওয়া কারণ গণিত তার প্রিয় বিষয়। ইতিমধ্যেই সে মিশনের নয়াবাজ শাখায় একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছে।
হায়ার সেকেন্ডারি পাশ কৃষক মোমিন মণ্ডল এবং মাধ্যমিক মহারানী বেগমের কষ্টের সংসারে মইনুল হাসান মণ্ডল মাধ্যমিকে ৬৬৯ নম্বর পেয়ে জ্যোৎস্নার আলো ফুটিয়েছে। মোমিন বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৯৩, গণিতে ১০০, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৮, জীবন বিজ্ঞানে ৯৫, ইতিহাসে ৯৪ এবং ভূগোলে ৯৯ নম্বর পেয়েছে। পারিবারিক আর্থিক দিক বিবেচনা করে মিশন কতৃপক্ষ ফিজে বেশ ছাড়ে মইনুল মণ্ডলকে মিশনের উনসানি শাখায় ভর্তি করে নেয়। খবরের কাগজ পড়তে ওস্তাদ মইনুলের ইচ্ছে মেডিকেল কলেজের প্রফেসর হওয়া। সে লক্ষ্যেই সে ইতিমধ্যেই নয়াবাজ শাখায় একাদশ শ্রেণির ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও গণিতের অনুশীলন আরম্ভ করেছে।
একদিকে নাট্যকার শেক্সপীয়র ও অন্যদিকে বিজ্ঞানী আইজাক নিউটন বীরভূমের নলহাটী গ্রামের ইমতিয়াজ হোসেনের প্রিয় সাহিত্যিক ও বিজ্ঞানী। মিশনের সুগড় একাডেমি থেকে মাধ্যমিকে ৬৫৯ নম্বর পেয়ে সফল হয়েছে সে। সামান্য চাষি সামিরুদ্দিন মণ্ডল ও গৃহবধূ সৈয়দা বিবির পুত্র ইমতিয়াজের ইচ্ছা ভালো কার্ডিয়ো লজিস্ট হয়ে গ্রামের মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবার বন্দোবস্ত করা। ফুটবল ভক্ত ইমতিয়াজ ভালো মানুষ হয়ে সৎপথে জীবনযাপনে আগ্রহী। মিশনের আর্থিক সহায়তা, শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং হস্টেলে বন্ধু বান্ধবদের সহযোগিতায় এই সাফল্য বলে মন্তব্য করে ইমতিয়াজ।
গল্প লেখা ও খো খো খেলায় তুখোড় এবং সংখ্যালঘু সমাজে শিক্ষার প্রসারে আগ্রহী বিলকিশ সুলতানা নবম শ্রেণি থেকেই মিশনের মেদিনীপুর শাখার ছাত্রী। ডেবরা থানার নোওয়াপাড়া গ্রামের এই তরুণী এবছরের মাধ্যমিকে ৬৫৬ নম্বর পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে। বাবা সেক জাকির হোসেন অসুস্থতার কারণে অবসর নিয়েছেন এবং মা সুলতানা বেগম স্বাস্থ্য সেবিকা। বাংলায় ৮৭, ইংরেজিতে ৯৪, গণিতে ৯৯, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৫, জীবন বিজ্ঞানে ৯৫, ইতিহাসে ৯১ এবং ভূগোলে ৯৫ নম্বর পেয়েছে।
মিশনের উলুবেড়িয়া শাখার বিজ্ঞান বিভাগে ডাক্তার হওয়ার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই ভর্তি হয়েছে বিলকিশ।
বারাসাত কাজিপাড়ার স্নাতক জাহানারা বেগমের একক লড়াইয়ের কাহিনী রুপকথার চেয়েও ভয়ংকর। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় একা হাতেই দুই ছেলে ও এক মেয়েকে যথাযোগ্য শিক্ষায় শিক্ষিত করতে দিনরাত পরিশ্রম চালাচ্ছেন তিনি। টিউশন ও অন্যান্য ছোটখাটো কাজ করে কোনওমতেই চলে তার সংসার। কিন্তু এতো কষ্টের মাঝেও সন্তানদের শিক্ষার প্রশ্নে তিনি ক্লান্তিহীন। বড় মেয়ে বারাসাতের কলজে বি এ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ছোট ছেলে সোহাহিল মোল্লা মিশনের কেলেজোড়া শাখায় হস্টেলে থেকে অষ্টম শ্রেণিতে পাঠরত। বড় ছেলে মহম্মদ সাহিদ মোল্লা জীবনপুর শাখা থেকে ৬৫৭ নম্বর পেয়ে তার মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। আনন্দের এই মুহূর্তে জাহানারা বেগম মিশন কতৃপক্ষকে কৃতজ্ঞতা দিতে ভুলেন নি, কারণ মিশনের বদান্যতাতেই তার ছেলে আজ সাফল্য পেয়েছে।
বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবী মোস্তাক হোসেনের প্রতিষ্ঠিত জিডি স্টাডি সার্কেলের আর্থিক সহযোগিতায় পরিচালিত ৩৫টি সংখ্যালঘু মিশনগুলির পড়ুয়ারা এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় দারুণ ফল করেছে। মোস্তাক হোসেন পরিচালিত সবকটি মিশন মাধ্যমিকে দারুণ ফলাফল করেছে।
কয়েটি উল্লেখিত উত্তর ২৪ পরগনা জেলার রহমতে আলম মিশন এবছর উল্লেখযোগ্য ফল করেছে। রহমতে আলম মিশন থেকে এবছর ১৪৮ জন মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল সকলেই প্রথম বিভাগে পাস করেছে এদের মধ্যে স্টার পেয়েছে ১০৫ জন ৮০% নম্বর পেয়েছে ৮৪ জন ৯০% নম্বর পেয়েছে ৩৪ জন সর্বোচ্চ নাম্বার ৬৬০।
হাওড়া জেলার বাগনান থানার হাল্যানের বিখ্যাত আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাওলানা আজাদ একাডেমী এবারও উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করেছে এই আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ৮৮ জন পরীক্ষা দিয়েছিল এর মধ্যে ৯০% নাম্বার পেয়েছে ৬ জন, ৮৫% নম্বর পেয়েছে ২৭ জন, ৮০% নম্বর পেয়েছে ৪২জন, ৭৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছে ৬৮ জন, ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে ৮৮ জন। এই আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়েছে মুস্তাফিজুর রহমান, তার প্রাপ্ত নাম্বার ৬৬৩ সব বিষয়ে লেটার মার্কস। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিও মোস্তাক হোসেন-এর জিডি স্টাডি সার্কেলের সাহায্য পেয়ে থাকে।
নাবাবিয়া মিশনঃ হুগলী জেলার খানাকুল থানার মাইনান গ্রামে অবস্থিত নাবাবিয়া মিশনটিও মোস্তাক হোসেন এর বিশেষ সাহায্য পেয়ে থাকে এই প্রতিষ্ঠানে একটা চা দোকানীর ছেলে ৬৬০ নম্বর পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান শেখ রহমতউল্লাহ বাড়ি নদিয়া জেলার পলাশীতে। তার বাবা সেখ আদর আলীর একটি চা দোকান রয়েছে। অত্যন্ত নিম্নবিত্ত পরিবারের এই ছেলেটি মোস্তাক হোসেন এর বিশেষ সাহায্যে পড়াশোনা করে মাধ্যমিকে ৯৪ শতাংশেরও বেশি নাম্বার পেয়ে রাজ্যবাসীর নজরে উঠে এলো। এই মিশন থেকে এবছর মোট ৬২ জন পরীক্ষা দিয়েছিল, স্টার মার্কস পেয়েছে ৩০ জন এবং প্রথম বিভাগে পাশ করেছে ৩২ জন।
পশ্চিমবাংলার শিক্ষা জগতে মোস্তাক হোসেন-এর অবদান অফুরন্ত। তিনি হিন্দু-মুসলিম সমাজের গরীব পরিবারের সন্তানদের শিক্ষা প্রসারে অফুরন্ত দান করে চলেছেন বলেই বাংলার পিছিয়েপড়া ঘরের ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষা নিয়ে সমাজে সুনাগরিক হচ্ছে।
এবছর ভয়েস ও জিডি স্টাডি সার্কেলে পাঠরত মধ্যমেধার ছাত্রছাত্রীরা অভাবনীয় রেজাল্ট করল নিট পরীক্ষায়। সর্বভারতীয় মেডিকেল এন্ট্রান্স পরীক্ষায় “ভয়েস” কোচিং সেন্টারের ছেলেমেয়েরা ৩০০০ হাজারের মধ্যে ১৭ জন র্যাঙ্ক করেছে। ৫০০০০ হাজারের মধ্যে ৪১ জন র্যাঙ্ক করেছে আর ৮০০০০ হাজারের মধ্যে ৬১ জন সফল হয়ে তাক লাগিয়ে ডাক্তারি পড়তে চলেছে এই সব ছাত্রছাত্রীরা। জিডি অ্যাকাডেমি ও জিডি স্টাডি সার্কেলের বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী নিট দিয়ে ডাক্তারি পড়তে সফল হয়েছে। সমাজকল্যাণে অনন্য পথিকৃৎ মোস্তাক হোসেন এই সব মিশন স্কুল ও কোচিং সেন্টারের সাফল্যে খুশি হয়েছেন। তিনিই রাজ্যের বহু মিশিন স্কুল গড়ে তুলতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো দাঁড় করিয়েছেন।
পতাকা শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার মোস্তাক হোসেন দুহাতে দান করে মিশন স্কুল ও স্কুল ও কলেজ হোস্টেল গড়ে তুলেছিললেন বলেই এই সাফল্য এসেছে। আগামী দিনে আইপিএস, আইএএস ও সফল আধিকারিক উপহার দিতে তিনি এগিয়ে আসছেন। এটাই তো সমাজে আশার আলো। মানুষের কল্যাণে তিনি সর্বদা নিবেদিত প্রাণ হয়েই কাজ করে চলেছেন। বাংলা ও ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তিনিই পশ্চিমবঙ্গে সবথেকে বড় দানবারি হয়ে মানুষের মনে দাগ কাটলেন। তাঁর দেখানো পথেই এগিয়ে এলেন সাজাহান বিশ্বাস, জাকির হোসেন, মহম্মদ খলিল, সেখ নরুল হক, এম নরুল ইসলাম, আলমগির ফকির সহ অনেকেই। মোস্তাক হোসেন বাংলার ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো জালছেন বলেই মুসলিম সমাজ এগিয়ে আসছে আলোর পথযাত্রী হয়ে। অন্ধকার দূর করতে তিনি এগিয়ে এলেন বলেই আজ বহু মানুষ বাঁচার মতো বাঁচতে পারছেন মাথা তুলে।
Advertisements