উদার আকাশ সম্পাদকের দলিত ও সংখ্যালঘু সঙ্কট ও উত্তরণ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি

0
1949
CM Mamata Banerjee with Faruque Ahamed
CM Mamata Banerjee with Faruque Ahamed
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:27 Minute, 20 Second

দলিত ও সংখ্যালঘু সঙ্কট ও উত্তরণ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি

ফারুক আহমেদ

স্বাধীন হল দেশ কত বছর পেরিয়ে গেল তবুও পিছিয়ে রাখা হল দলিত ও সংখ্যালঘুদের মধ্যে মুসলিম সমাজকে। ভারত স্বাধীন হওয়ার ৭০ বছর পরেও পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে আর্থিক ও সামাজিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া ঘরের ছেলেমেয়েরা মূল স্রোতে উঠে আসতে পারেনি আজও। বহু সংগ্রাম করে কিছু সংখ্যক উচ্চশিক্ষা নিতে এগিয়ে আসছে এটাই এখন বড় আলোর দিশা। এ বিষয়ে কিছু মিশন স্কুলের অবদান উল্লেখযোগ্য। মুসলিমদের পরিচালিত ট্রাস্ট ও সোসাইটির নিজস্ব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় না থাকার ফলে বহু ছাত্রছাত্রী আর্থিক অনটনে উচ্চশিক্ষা অর্জনে বহু বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে সমস্যা আরও গভীর। রাজ্য সরকার এ বাধা দূর করার জন্য কোনও সরকারি প্রকল্প এখনও গ্রহণ করেনি। পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্তনিগম থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্প অনুযায়ী উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যে ঋণ দেওয়া হয়, তার বিনিময়ে সরকারি চাকুরিরত গ্রান্টার বাধ্যতামূলক করায় বিপদ বেড়েছে। সাচার কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকুরিরত মুসলমাদের সংখ্যা খুবই নগন্য, কোথাও আবার শতকরা একজনও নেই। তাহলে সরকারি চাকুরিরত গ্রান্টার পাওয়া যাবে কোথায়? একদিকে প্রচুর ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষা নিতে চাইলেও অর্থের অভাবে তা তারা নিতে পারছে না। অন্যদিকে চাকুরিরত মুসলমানের সংখ্যা জনসংখ্যার (৩০%) শতাংশের অনুপাতে খুবই কম। তাহলে এই বৈষম্য ঘুচবে কি ভাবে? মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের দাবি, তারা মুসলমানদের উন্নয়ন করতে প্রবলভাবে আন্তরিক। সভা সমাবেশ ও সমিতিতে এই দাবি জোর কদমে বলে চলেছেন শাসক দলের নেতা-নেত্রী ও মন্ত্রীরা। এই মতো পরিস্থিতিতে আমাদের দাবি— সরকারের পক্ষ থেকে এই সব দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিশেষ ফান্ডের ব্যবস্থা করুকক। অথবা পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্তনিগম থেকে গ্রান্টারমুক্ত লোন দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিক সরকার উদ্যোগ নিয়ে। আমরা অনুদান চাইছি না উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারের কাছ থেকে পিছিয়েপড়াদের জন্য শুধু মাত্র লোন চাইছি। পিছিয়েপড়াদের তুলে আনার ক্ষেত্রে সরকারের এটা নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই তাদের কল্যাণে সরকারকেই এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সংখ্যালঘুদের জন্য যদি প্রকৃত উন্নয়ন করতে চান তাহলে এই ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তিনি দৃষ্টান্ত দেখাতে পারেন। এই উদ্যেগ নিলে তিনি সহজেই পিছিয়েপড়াদের মন জয়ও করতে পারবেন। এই পথেই একটা পিছিয়েপড়া সমাজ আলোর স্পর্শ পাবে- আমার দৃঢ় বিশ্বাস। মুক্ত চেতনা ও নব চেতনার মধ্য দিয়ে সর্বোপরি সম্প্রীতির সেতুবন্ধন রচিত হবে। মুসলিম ও সংখ্যালঘু সমাজ আলোর দিশারী হবে। এটা বড় প্রয়োজন এই মুহূর্তে। তাই মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই খোলা চিঠির সূচনা করলাম।

দেশে ও রাজ্যে গণতন্ত্র ফেরাতে আমরা বদ্ধপরিকর হয়েছি।

এক পরিসংখ্যানে প্রকাশ, ঋণের দায়ে গত তিন বছরে ৩৮ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। দৈনিক ৩৫ জন কৃষক আত্মহত্যা করছেন। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে আত্মহত্যার ঘটনা ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।     
মোদি সরকার কৃষকদের কল্যাণে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যদিও লাভজনক প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় এসেছে। কৃষকদের চেয়ে শিল্পপতিদের নিয়ে মোদি সরকার বেশি চিন্তিত।

গণতন্ত্রে সরকারের চাবি থাকে জনতার হাতে এবং তাদের সরকারকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শিক্ষা দেয়া উচিত বলে মনে করি।
দেশের কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। তারা ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে। কৃষকরা জমিতে সেচের জন্য সস্তা মূল্যে বিদ্যুৎ ও জল পাচ্ছে না, খালে জলও সরবরাহ হচ্ছে না।
সরকারের কাছে কৃষি কমিশন গঠন করে তাকে সাংবিধানিক মর্যাদা দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। কৃষকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গত ২৩ মার্চ থেকে দিল্লির রামলীলা ময়দান থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনও শুরু হয়েছিল।
দুর্নীতির সাম্প্রতিক ঘটনার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অন্য দলের সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’ (নিজেও ঘুষ খাব না, কাউকে খেতেও দেবো না) কিন্তু আমরা দেখছি দুর্নীতির ঘটনা একনাগাড়ে প্রকাশ্যে আসছে। এরফলে মোদীর কাজকর্মের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এখন মানুষের সচেতন হওয়ার সময়। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন সরকারকে নির্বাচিত করা উচিত যারা সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করবে।
কেন্দ্রীয় সরকার জনলোকপাল বিল দুর্বল করেছে বলেও মনে করি। 
কেন্দ্রীয় সরকার বর্তমানে মনে হচ্ছে ‘কৃষকবিরোধী সরকার’ হয়ে উঠেছে। আশা রাখি গোটা দেশের সচেতন মানুষ এই মন্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করবেন।
কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকবিরোধী, আমজনতাবিরোধী সরকারে পরিণত হয়েছে। আমরা দেখছি প্রত্যেকদিন ৩৫ জন কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন। ঋণের দায়ে গত তিন বছরে ৩৮ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে আত্মহত্যার ঘটনা ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সরকারকে তো কৃষকবিরোধী সরকার বলতেই হয়। এই সরকারের আমলে একেরপর এক ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ভারতের কেন্দ্র সরকার জনবিরোধী সরকার হয়ে গেছে জেন।

এদিকে বাংলায় নতুন সূর্য ওঠার ডাক দিলেন দলিত-সংখ্যালঘু নেতারা।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও দলিত ইস্যু নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর পদক্ষেপের ভূয়ষি প্রশংসা করলেন বাংলার সংখ্যালঘু ও দলিত সম্প্রদায়ের বহু মানুষ। 

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো এক রিপোর্টে প্রকাশ, বিগত দশ বছরে দলিত নির্যাতনের ঘটনা ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি ১৫ মিনিটে ১টি করে অপরাধমূলক ঘটনা ঘটানো হয়েছে দলিতদের বিরুদ্ধে। দেশে দলিতদের উপর নির্যাতনের ঘটনা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে দিন দিন ক্ষোভ বাড়ছে দলিতদের মনে। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার, বঞ্চনা ও বৈষম্যের ঘটনাও চরমহারে বৃদ্ধি পেয়েছে ভারতে। প্রতিদিন দলিতের ৬ জন নারী ধর্ষিতা হন। বিজেপি শাসিত রাজ্যেগুলিতে দলিত ও সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনা অনেক বেশি। “লাভ জেহাদ”, “গো রক্ষা”-র নামে অসহায় সাধারণ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। যা চোখে দেখা যায় না, এই সব দৃশ্য  আদিভারতবাসীদের চোখে জল আনছে। এবং নতুন ভাবে জেগে ওঠান ডাক দিচ্ছেন।

এসসি-এসটি আইন পরিবর্তন ও দলিত-সংখ্যালঘু নিপীড়নের প্রতিকার করতে কলকাতার রাজপথে মহামিছিল ও প্রতিবাদসভার ডাক দিয়েছিল দলিত ওও সংখ্যালঘুরা। গত ২৮ এপ্রিল বিভিন্ন দলিত, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সংগঠন নেতৃত্ব দিল এই মহামিছিল ও প্রতিবাদসভার।

সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন চালিয়ে নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নিতে পরামর্শ দিলেন দলিত ও সংখ্যালঘু নেতারা। 
ভারতে আদিভারতীয়দের মধ্যে দলিত ও সংখ্যালঘুদের মধ্যে মুসলমানরাই সর্বদিকে সর্বাধিকভাবে বঞ্চনার স্বীকার হচ্ছেন। এই বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতা অর্জন করতে তারা মহাজোট বাঁধছে। দলিত ও মুসলমানদের যৌথ্য প্রয়াস সফল হতে চলল বাংলায়।
এবার একটু তুলে ধরছি মাদ্রাসা শিক্ষার বেহাল দশা নিয়ে কিছু প্রসঙ্গ।
রাজ্যে মাদ্রাসা শিক্ষার বেহাল দশা কাটাতে অভিলম্বে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে রাজ্য সরকারকে। মাদ্রাসায় পড়ে এখন‌ও পর্যন্ত যা দেখেছি তাতে দলিত ও সংখ্যালঘদের মধ্যে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাই অধিক। সে জন্য‌ই কি রাজ্য সরকার এতো অবহেলা করছে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি? শিক্ষক নিয়োগে এতো অনীহা কেন? জোরালো প্রশ্ন উঠছে চারিদিকে। রাজ্য সরকার অনুমোদিত ৬১৪ টি মাদ্রাসায় ৭০ শতাংশ শিক্ষক পদ এখনো শুন্য হয়েই আছে। মাদ্রাসা শিক্ষা আজ ভেঙে পড়েছে, সরকার তবুও কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন উঠছে প্রশ্ন। বিশ বাঁও জলে তলিয়ে যাচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা, কোর্টে কেস চলার অজুহাতে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্য সরকার চরম অবহেলা করছে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রসারের প্রতি, তার ফল ভুগতে হবে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে।
রাজ্যে নামেই সাতজন মুসলিম মন্ত্রী আছেন কিন্তু মুসলিমদের কাজের বেলায় একজনও নেই বললেও চলে। রাজ্যে গণতন্ত্র ফেরাতে এই সরকার পুরোটাই ব্যর্থ হয়েছে।
নির্বাচনের সময় রাজ্যে গণতন্ত্র প্রহসনের রূপ নিল।

ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি উন্নয়নের জন্য আজ পর্যন্ত এই সরকার “ওয়াক্‌ফ উন্নয়ন করপোরেশন” তৈরি করল না। ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি দিনের পর দিন বেহাত হয়ে যাচ্ছে। বেদখল সম্পত্তি ফিরিয়ে আনতে এবং বর্তমানে যে সব সম্পত্তি আছে তা রক্ষা করতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ওয়াক্‌ফ বোর্ডের কাজ দেখলে মনে হবে গভীর সঙ্কটে আছে। এই সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর একটাও হাই মাদ্রাসা নতুন করে অনুমোদন দেয়নি। সবই দশ হাজারের ভাওতা বললে ভুল হবে না। সংখ্যালঘু মুসলিম আধিকারিকদের পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসনে নীতিনির্ধারণের কোনও জায়গায় রাখা হচ্ছে না।
“সংবিধান বাঁচাও সমিতি”র ডাকে ২৮ এপ্রিল মহামিছিল ও সমাবেশে এসব প্রশ্নকে সামনে রেখে দলিত ও সংখ্যালঘুদের মহাজোট করে এর প্রতিকার করতে এগিয়ে আসার আহ্বান করেছিলাম। রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করার জন্য সংগঠের মাধ্যমে জায়গা তৈরি করার কথাও তুলে ধরেছিলাম। সংখ্যালঘু উন্নয়নের ক্ষেত্রে কিছু ভাতা, ‘শ্রী’ যুক্ত প্রকল্প ছাড়া এই সরকার কিছুই করেনি। অথচ এই সরকার ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল তারা ক্ষমতায় এলে সাচার কমিটির সুপারিশ এই রাজ্যে রূপায়িত করতে বদ্ধপরিকর থাকবে। ক্ষমতায় এসে রাজেন্দ্র সাচারকে রাজ্যে আনা হয়েছিল কিন্তু তাঁর সুপারিশ মানা হয়নি। বাস্তবিক গুরুত্বপূর্ণ রাজেন্দ্র সাচারের সুপারিশকৃত পরামর্শ আজও প্রয়োগ করতে এই সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সুপারিশ ছিল “সমসুযোগ কমিশন” গঠন করার নির্দেশ। জনসংখ্যার অনুপাতে ব্যাঙ্ক থেকে বেশি বেশি সংখ্যালঘুদের ঋণ দেওয়ার কথা বলেছিলেন রাজেন্দ্র সাচার। রাজ্যস্তরে সংখ্যালঘুরা উপকৃত হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য রাজ্যস্তরে তথ্যপঞ্জী ব্যাঙ্ক গঠন করতেও পরামর্শ দিয়েছিলেন। যাতে অন্যান্য অংশের মানুষের উন্নয়নের সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়নকে তুলনামূলক ভাবে বিচার করা যায়। রাজ্য সরকারের প্রশাসনে সংখ্যালঘু মুসলমিদের প্রতিনিধিত্ব বাড়েনি। সাংসদ প্রতিনিধি বিশেষ করে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে সংখ্যা বাড়লেও সংখ্যালঘু প্রতিনিধির সংখ্যা বাড়েনি, তা উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। পৌরসভা ও পঞ্চায়েত এলাকাতে ওবিসি ক্যাটাগরি “এ” এবং “বি” করে সংখ্যালঘু মুসলিম প্রতিনিধিত্ব কমিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত হয়েছে এবং বিষয়টি গুলিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা হয়েছে। ১২ টি এমন বিধানসভা কেন্দ্র আছে যেখানে সংখ্যালঘুরা ৫০ শতাংশের অধিক অথচ নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে সংরক্ষিত আসন করে দেওয়া হয়েছে। কোন যুক্তিতে? এ ব্যাপারে রাজ্যসরকার আজ পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এসসি-এসটি-ওবিসি সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য এই সরকার অনলাইন ব্যবস্থা চালু করেছে। একেই গরিব পিছিয়ে পড়া, তার উপর অনলাইন? এই সিদ্ধান্তের জন্য সবাইকে টাকা নিয়ে শহরে ছুটতে হচ্ছে অনলাইন ফর্ম ফিলাপ করতে। আবার সবাই সার্টিফিকেটও পাচ্ছে না, যার ফলে চাকরি, ভর্তি সর্বক্ষেত্রে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। ওবিসি সংরক্ষণের নামে বঞ্চনা চলছেই। ওবিসি সার্টিফিকেট আছে এমন চাকরিপ্রার্থীর আবেদনকারীদের আর সাধারণ ক্যাটাগরিতে চাকরিই দেওয়া হচ্ছে না। এখন ওবিসি সার্টিফিকেট আছে তেমন চাকরি প্রার্থীদের মধ্যেই লড়াই করে দু’একটা কোথায়ও চাকরি হচ্ছে। এবছর মুর্শিদাবাদ জেলায় সামান্য প্রাইমারি চাকরি পরীক্ষায় বহু যোগ্য সংখ্যালঘুদের সুপরিকল্পিত ছকে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বহু টেট পাশরা আজও চাকরি পায়নি। ডি গ্রুপের চাকরি থেকেও বঞ্চিত হতে হচ্ছে সংখ্যালঘুদের। রাজ্যসরকারের চাকরিতে বিশেষ করে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সহ বিভিন্ন বিভাগে সংখ্যালঘুদের বঞ্চিত করা হয়েছে, যার ফলে এই সব জায়গায় মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব বাড়েনি। জনসংখ্যার অনুপাতে বহু বেশি পরিমাণে মুসলিমরা শুধুমাত্র কারাগারে রয়েছে। কাউকে আবার বিনা দোষে মিথ্যা মামলায় জেলে ভরে রাখা হয়েছে। ভাবুন পরিবর্তনের জন্য আমরা অধিক সংখ্যায় সংখ্যালঘুরা এই সরকারকে একচেটিয়া ভোট দিয়েছিলাম। বাম সরকারের পতন সুনিশ্চিত করেছিলাম। বাস্তবিক আমাদের কল্যাণে এই সরকার কিছুই করছে না কিন্তু মুখে বলছেন মুখ্যমন্ত্রী ৯৯ শতাংশ কাজ করে দিলাম। রাজ্যের যে-কোনও রাজনৈতিক দলের দিকে চোখ রাখলে দেখত পাই শহীদের তালিকায় মুসলমান ও দলিতরাই আছেন বেশি। বাস্তবিক সব রাজনৈতিক দল সুপরিকল্পিতভাবে দলিত ও মুসলমানদের লড়িয়ে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলেন। ফলে মারে ও মরে এই উভয় সম্প্রদায়ের দলিত ও মুসলিম। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুলিশ ও রাজ্য সরকারের ৮২ টির মতো স্বশাসিত সংস্থার চেয়ারপার্সন বা কর্ণধার ও কমান্ডিং পদে কোনও দলিত ও মুসলমানদেরকে বসানো হয় নি। ব্যতিক্রম হয়েছিল পিএসসিতে তবে তাঁকে দিয়ে অন্যায় কাজ করিয়ে নিতে না পারায় তাঁর চাকরির মেয়াদ শেষ না হতেই তিনি নিজের সম্মান বাঁচাতে চেয়ারম্যান (শেখ নুরুল হক, আইএএস) পদ থেকে পদত্যাগ করলেন। চাকরিরত অবস্থায় চাকরি ছেড়ে দিলেন। এটা অনেকেই জানেন। এখনও পর্যন্ত কোনও মুসলমান আধিকারিক আর পিএসসিতে সামান্য সদস্যও হতে পারিনি, সরকার সদস্য করেন নি বলেই হতে পারিনি। যা ভারতের অন্য রাজ্যে ভাবাই যায় না। এখনও পর্যন্ত দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গে কোনও মুসলিম পুলিশ আধিকারিককে ডিজি করা হয়নি। আমরা দেখেছি সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলি পরিচালনার ক্ষেত্রে মুসলমান এবং দলিত নেতাদের নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনও ভূমিকাই থাকে না। ৬৪ সালের দাঙ্গার পর রাজ্যবাসী খুব একটা বড় ধরনের দাঙ্গার মুখোমুখি হয়নি। এখন আমাদের দেখতে হচ্ছে হালিশহর, বাদুড়িয়া, বসিরহাট, আসানসোল প্রভৃতি এলাকার দাঙ্গার ভয়াবহতাকে। ধর্মের নামে অস্ত্রের ঝনঝনানি আজ বাড়বাড়ন্ত, যেন রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা চলছে। সংখ্যালঘু মুসলিমদের জন্য এ রাজ্য যে সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা ছিল তাও আজ সঙ্কটের মুখে। এই পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা রোধে ও দাঙ্গা-পীড়িতদের ন্যায়বিচার এবং ক্ষতিপূরণের স্বার্থে কংগ্রেসের ইউপিএ সরকার যে আইন তৈরি করেছিল তা আজও বিজেপি সরকার আইনে পরিণত করেনি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে রক্ষা করতে আইন তৈরি করছে না কেন? উন্নয়নের নামে সব জায়গায় দলিত ও মুসলমানদের জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে কিন্তু উন্নয়নের অংশে তাদেরকে ব্রাত্য করে রাখা হচ্ছে। রাজ্যে মুসলমান ও দলিতদের জমি নিয়ে বসবাসের জন্য যত উপনগরী তৈরি হয়েছে সেখানে মুসলমানদের ঠাঁই হয়নি। অল্প জায়গায় ঘেটোবাসী হয়ে বসবাস করাটাই তাদের এখন ভবিতব্য হয়ে উঠেছে।
তাই কোনোরূপ অজুহাত রাজ্যের মানুষ আর শুনতে চায় না। বিশ্ববিদ্যালয় সহ সমস্ত চাকরির পরীক্ষাগুলিতে সঠিকভাবে ১০০ শতাংশ রোস্টার মানা হোক। এই চরম বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে এসসি-এসটি-ওবিসি-“এ” এবং ওবিসি-“বি” চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি সুনিশ্চিত করতে ১০০ শতাংশ রোস্টার মেনে চাকরি দিতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। নইলে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। রাজ্যে যোগ্য সংখ্যালঘু ও দলিত আধিকারিকদের গ্যারেজ পোস্টিং দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে, এই বৈষম্য দূর করতে হবে অবিলম্বে। ২৩টি জেলায় চোখ রাখলে কোনও ডিএম ও এসপি বা কমান্ডিং পোস্টে যোগ্য ও সৎ দলিত ও মুসলিম আধিকারিক কাউকে দেখছি না। কেন? ব্যতিক্রম একজন আয়শা রানি ঝাড়গ্রামের ডিএম পদে আসীন হলেন সম্প্রতি। চাকরিরত যোগ্য সংখ্যালঘু ও দলিতদেরকে কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে? এই বঞ্চনার অবসান ঘটাতেই হবে। তার জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পথে নামতে হবে, আন্দোলন করতে হবে প্রাপ্য অধিকার অর্জন করতে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজ ও শিক্ষাকেন্দ্র থেকে ইসলামি থিয়োলজী বিভাগ তুলে দেওয়ার চক্রান্ত রুখতে হবে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষা করতে হবে। সংখ্যালঘুদের কল্যাণে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোগ নিক আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিন মেডিকেল কলেজ গড়ে তুলতে এবং সর্ব বিষয়ে অর্নাস ও এমএ, এমএসসি এবং পিএইচডি চালু করতে। সম্প্রতি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও অধ্যাপক ড. মহম্মদ আলি। ড. আলি আশা রাখি মানব কল্যাণে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাক্তন উপাচার্য ড. আবু তালেব খানের উত্তসুরি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের টনক নড়াতে দলিত ও সংখ্যালঘুরা বদ্ধপরিকর হচ্ছেন এটাই এখন আশার আলো। 
এরপরও যদি সরকারের সুমতি না ফেরে তাহলে বাংলায় নতুন সূর্য উঠবে কি ভাবে তা ভাবতে হবে। নতুনভাবে দলিত ও সংখ্যালঘু জোটবদ্ধ হয়ে বাংলার কল্যাণে সবার জন্য গণতন্ত্র ফেরাতে তৈরি হবেন। বিপন্ন বাংলা ও দেশের মানুষের বাঁচার মুক্তি হল সুস্থ গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখা। 
তাই সংবিধান বাঁচাতে আমরা বদ্ধপরিকর হয়েছি মানুষের কল্যাণে। ধর্মীয় বিভাজনের ফাঁদে আমরা যাব না এই অগ্নিশপথ নিয়েই দলিত ও মুসলিম সহ সকল শ্রেণি মানুষের কল্যাণ আওয়াজ তুলব সুস্থ সমাজ গড়তে।
মন্ত্রীত্বে এবং বিচার ব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে বঞ্চিত দলিত ও মুসলিমরা কেন? সংখ্যানুপাতে এসসি, এসটি আর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় জনসংখ্যার হিসেবে ৬০ শতাংশেরও বেশি আছে পশ্চিমবঙ্গে তবু গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর এদের কারো হাতে নেই কেন? এবং ওবিসি আছে ৩৪ শতাংশ। এই বঞ্চনার অবসান ঘটাতে দলিত ও সংখ্যলঘুদের প্রাপ্য মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগ নেবেন আমারা আশা রাখি।

ইতি
বিনীত

ফারুক আহমেদ
সম্পাদক ও প্রকাশক : উদার আকাশ
ঘটকপুকুর, ডাক ভাঙড় গোবিন্দপুর, জেলা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পিন ৭৪৩৫০২
কথ: ৯৭৩৩৯৭৪৪৯৮
        ৭০০৩৮২১২৯৮
[email protected]

*** লেখকের নিজস্ব মতামত , IBG NEWS এর সাথে সহমত বা বিরোধিতা করেনা এবং কোনো ভাবে লেখার জন্য দায়বদ্ধ নয়***

About Post Author

Editor Desk

Antara Tripathy M.Sc., B.Ed. by qualification and bring 15 years of media reporting experience.. Coverred many illustarted events like, G20, ICC,MCCI,British High Commission, Bangladesh etc. She took over from the founder Editor of IBG NEWS Suman Munshi (15/Mar/2012- 09/Aug/2018 and October 2020 to 13 June 2023).
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD





LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here