তব মন্দির, মসজিদে হায়… – সত্যমেব জযতে

0
2084
Ashoke Majumdar
Ashoke Majumdar
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:9 Minute, 50 Second

তব মন্দির, মসজিদে হায়…

অশোক মজুমদার

বড় দুঃখে নজরুল লিখেছিলেন তব মন্দির, মসজিদে হায় নাই মানুষের দাবী, মোল্লা, পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী। কবির এই আক্ষেপ অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হয়ে ওঠে যখন দেখি এক শ্রেণীর ধর্মান্ধ মানুষ, এ মন্দিরে ঢুকবে আর ও ঢুকবে না জাতীয় নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মানুষের মন্দিরে ঢোকার পথ আটকে দাঁড়ান। অথচ কোন ধর্মেই এ জাতীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। পৃথিবীর সব মানুষকেই ঈশ্বর, আল্লা, গড ভক্তদের তাদের উপাসনা গৃহে আসার অনুমতি দিয়েছেন। আমার মত একজন মূর্খ মানুষও এ কথা জানে। কিন্তু আমাদের শাস্ত্রজ্ঞ ধর্মবিশারদরা একথা জানেন না তা মানতে খুব অসুবিধা হয়!

এই যখন অবস্থা, তখন সুপ্রিম কোর্টের একটি সাম্প্রতিক নির্দেশ সত্যিই এক সুবাতাস বয়ে নিয়ে এলো। যার মোদ্দা কথা হল পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সব ধর্মের মানুষদেরই ভক্তি নিবেদনের সুযোগ দেওয়া হোক। মাননীয় বিচারপতিদের মতে, পোশাক পরিচ্ছদ, নিয়মকানুন ইত্যাদির ব্যাপারে কোন নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা থাকতেই পারে কিন্তু দর্শনার্থীদের পথ আটকানো উচিৎ নয়। মনে রাখতে হবে কলকাতার কালীঘাটের মন্দির, দক্ষিণেশ্বরের মন্দির, আসামের কামাখ্যা মন্দিরসহ নানা ধর্মস্থানের দরজা ভিন্ন ধর্মের মানুষদের জন্য বরাবরই খোলা। এই বোধ থেকেই নজরুল শ্যামা সঙ্গীত লিখেছেন, রবীন্দ্রনাথ যিশুকে নিয়ে লিখেছেন কবিতা।

আমার মনে হয়, এর সঙ্গে সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ঐতিহ্যবাহী দেবস্থানগুলির সংরক্ষণ ও সংস্কারেরও একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কারণ, নানা বৈষয়িক স্বার্থ সংক্রান্ত কারণেই পবিত্রতা রক্ষার দোহাই দিয়ে সেগুলির উপযুক্ত সংরক্ষণ, সংস্কার, আর্থিক দুর্নীতি দূর করার কাজে বাধা দেন কিছু মানুষ। এর ফলে দেশের বহু দেবস্থানের অবস্থা উপযুক্ত সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। দেবস্থানে ভক্তরা ঢোকার পথ আটকালেও দুর্নীতির পথ উন্মুক্ত হয়েছে।

ধর্মের গোঁড়ামি নিয়ে মাথাব্যাথা আমার কোনকালেই নেই। বাড়িতেও বাবা, মা আমায় এনিয়ে কিছু বলে নি। অন্য ধর্ম ও জাতির বহু বন্ধুবান্ধবই আমাদের বাড়িতে আসতো, থাকতো, খেত, প্রয়োজনে রাত কাটিয়েও যেত। কারোরই জাত, ধর্ম কোনটাই যায় নি। বহু ধর্মগুরু বলেন, ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের ডাইরেক্ট কন্ট্যাক্ট। তাদের তিনি কি বলেছেন জানি না, তবে আমাকে কোনদিন কিছু বলেল নি। বলার কোন যে কারণ নেই এটাও ছোট থেকেই জানি। বাবা, মা বলতো নামে আলাদা হলেও ভগবান এক। তিনি সবাইকে সমান চোখে দেখেন। দেখিস না তোর বন্ধু আবদুল জলকে বলে পানি, আবার জন বলে ওয়াটার আর তুই বলিস জল। সবই তো এক। এই সত্যি কথাটা সহজভাবে ছোটবেলায় বুঝে গিয়েছি বলেই আমার কাছে মন্দির, মসজিদ, গির্জায় আলাদা আলাদা ঈশ্বর থাকেন বলে কখনোই মনে হয় নি।

অথচ নিষেধ থাকার ধুয়ো তুলে পুরীর মন্দিরে রবীন্দ্রনাথকে ঢুকতে দেওয়া হয় নি, এমনকি আটকে দেওয়া হয়েছিল দেশের প্রধানমন্ত্রী দোর্দণ্ডপ্রতাপ ইন্দিরা গান্ধীকেও। পুরী, তিরুপতিসহ দেশের আরও বেশ কিছু বড় মন্দিরে এখনও হিন্দু ছাড়া আর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। কিন্তু মসজিদে বা গির্জায় এমন কোন নিয়ম নেই। এখন তো বহু মসজিদে মেয়েদেরও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। মসজিদ বা গুরদোয়ারায় মাথায় একটা কাপড় দিয়েও ঢোকা যায়। গির্জায় প্রার্থনা করার সময় সবাই বসতে পারে, সেখানে পুরীর মত কিছু মন্দিরে এমন নিয়ম থাকবে কেন? জগন্নাথদেব পুরীর মন্দিরের পরিচালকমণ্ডলীকে এমন কোন আদেশ দিয়ে গেছেন কিনা তাও আমি জানি না। আমার মতে এটা অশিক্ষিত গোঁড়ামি ছাড়া আর কিছুই না। প্রশ্ন হচ্ছে, একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আমরা এসব গোঁড়ামি মেনে নেবো কেন? বাংলায় ভক্তিবাদের প্লাবন যিনি এনেছিলেন সেই চৈতন্যদেব কিন্তু কখনোই এ গোঁড়ামিকে মেনে নেন নি। তার প্রেম ধর্মে ব্রাহ্মণ, চন্ডাল, যবন সবারই জায়গা ছিল। গোঁড়াদের বিরোধিতা তাকে আজীবন সইতে হলেও নিজের বিশ্বাস থেকে তিনি সরে আসেন নি। আজকের চৈতন্য গবেষকদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী হিন্দু ধর্মান্ধদের হাতেই মহাপ্রভুকে খুন হতে হয়েছিল।

এসব নিয়ে কথা বলার সবচেয়ে উপযুক্ত পন্ডিত মানুষ অধ্যাপক নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ির সঙ্গে কথা বললাম। তিনি জানালেন, জানো অশোক, পুরীর মন্দির তৈরির সময় কিন্তু এই গোঁড়ামি ছিল না। তুমি দেখবে মন্দিরে ঢোকার মুখে বৌদ্ধদের একটা চক্র রয়েছে। তার থেকে বোঝা যায় মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় সেখানে অন্য ধর্মের প্রতি এই গোঁড়ামি ছিল না। নামটা ঠিক মনে করতে না পারলেও তিনি বললেন, সারা দেশের নানা জগন্নাথদেবের মন্দিরসহ দেশের আরও বিভিন্ন মন্দির নিয়ে কাজ করেছেন এমন একজন মুসলমান গবেষকের কথা। পুরীর মন্দিরের কর্তাব্যক্তিদের সবাই তাকে চেনে। ওড়িশা সরকারও তাকে পুরস্কৃত করেছে। ধর্ম কিন্তু তার গবেষণার বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি। অন্য ধর্মের একজন গবেষক ও উদার প্রকৃতির মানুষ ড. শেখ মকবুল ইসলাম পুরীর মন্দিরের ঐতিহ্যকেই তুলে ধরেছেন অথচ মন্দিরের পান্ডা বা কমিটির লোকজন হিন্দু ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেবেন না, এমন ধনুকভাঙা পণ করে বসে আছেন।

হিন্দু ধর্ম কবে, কীভাবে, কি জন্য সনাতন হল তা জানি না। তবে এই ধর্মের গোঁড়ামির জন্যই আমাদের দেশের মুসলিম, জৈন, বৌদ্ধ ধর্ম হয়েছিল এটা বারবার নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই বুঝেছি। এটা মানতেই হবে সনাতন ব্রাহ্মণদের দ্বারা পরিচালিত হিন্দু ধর্ম দেশে বিভেদ তৈরি করেছে। কিছু মানুষ তাদের নিজেদের স্বার্থেই এসব করেছেন। এই শতাব্দীতে আমাদের ভাবতেই হবে প্রতিটি মানুষের নিজের নিজের বিশ্বাস অনুযায়ী ধর্মাচরণের স্বাধীনতার কথা। যারা ধর্ম মানেন না তাদের বিশ্বাসকেও আঘাত করা চলবে না। যে যার নিজের নিজের ভক্তি, বিশ্বাস, সংস্কার নিয়ে থাকুন কিন্তু ধর্মের নামে অন্যের ওপর নিজের বিশ্বাস চাপিয়ে দেবেন না। মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গুরদোয়ারায় যাতে সব সম্প্রদায়ের মানুষ ঢুকতে পারে সেটাই নিয়ম হওয়া উচিৎ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বহুদিন ধরে চলে আসা একটি ভ্রান্তির বিরুদ্ধে আমাদের সরব হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। আসুন, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, চলচ্চিত্রকার, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ এ ব্যাপারে সর্বস্তরে প্রচার চালিয়ে ধর্মের নামে এই বিভেদপন্থার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলি। যত বড় ধর্ম বিশেষজ্ঞই হোন না কেন দেবস্থানে মানুষকে না ঢুকতে দেওয়ার অধিকার স্বাধীন দেশে কারোর নেই।

Author: Ashok Majumder

Collected by Faruque Ahamed

About Post Author

Editor Desk

Antara Tripathy M.Sc., B.Ed. by qualification and bring 15 years of media reporting experience.. Coverred many illustarted events like, G20, ICC,MCCI,British High Commission, Bangladesh etc. She took over from the founder Editor of IBG NEWS Suman Munshi (15/Mar/2012- 09/Aug/2018 and October 2020 to 13 June 2023).
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD





LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here