হীরক মুখোপাধ্যায় (১৩ এপ্রিল ‘২০):- ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট-এর অন্তর্গত বীজপুর থানা কর্তৃপক্ষের বেনজির ভুলের ফলে এবার রাতারাতি এফআইআর নম্বর পাল্টাতে বাধ্য হলো বীজপুর থানা কর্তৃপক্ষ।
আজ বীজপুর থানা ক্ষেত্রের কাপা ডাকঘর-এর ধানকল অঞ্চলে বসবাসকারী জনৈকা যুবতী তিথি গুপ্ত (নাম পরিবর্তিত)-র পক্ষে তাঁর কৌসলী হিরণ্ময় দেবনাথ জানান, “দীর্ঘ ৭ দিন বিভিন্ন বাহানায় তিথি-কে বীজপুর থানা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হলেও গত ১১ এপ্রিল রাতে তিথির হাত থেকে এফআইআর-এর আবেদনপত্র গ্রহণ করে বীজপুর থানার পুলিশ।
বীজপুর থানা অভিযোগপত্র জমা নিলেও ১১ তারিখ রাতে তাকে এফআইআর-এর নম্বর জানানো হয়নি।
১২ এপ্রিল রাতে তিথির হাতে বীজপুর থানা যে চিরকুট ধরিয়ে দেয় তাতে দেখা যায় কেস (এফআইআর) নম্বর ৫৫১, তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২০। ভারতীয় দণ্ড বিধি-র ধারা ৩৫৪ সি, ৫০৬ ও ৫০৯ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
কিন্তু ওই চিরকুটে বীজপুর থানার কোনো সিল বা আধিকারিকের স্বাক্ষর ছিলনা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে তিথি আজ অর্থাৎ ১৩ এপ্রিল বীজপুর থানায় গেলে তার হাত থেকে ওই চিরকুট নিয়ে তাতে সিল স্বাক্ষর করে কেস (এফআইআর) নম্বর পাল্টে করে দেওয়া হয় ১৫১।”
রাতারাতি কেস নম্বর পাল্টে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আইনজীবী সহ জেলার বিভিন্ন মহলে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে।
কেন তিথি গুপ্ত (নাম পরিবর্তিত) বীজপুর থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিথি জানান,
“ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট-এর অন্তর্গত কাঁচড়াপাড়া অঞ্চলের জনৈক যুবক ভিকি শর্মা দূরভাষ ও হোয়াটসএপ-এর মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছেন তাঁর ইচ্ছামত না চললে আমার পোশাক পাল্টাবার ছবি সোশ্যাল মিডিয়া-য় ছড়িয়ে দেওয়া হবে।”
কিন্তু তিথি-র পোশাক পাল্টাবার ভিডিও ছবি ভিকি-র হাতে গেলো কীভাবে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিথি বলেন, “গত প্রায় ১ বছর ধরে আমি কাপা, বিশ্বাস পাড়া অঞ্চলের ‘ফেয়ারি বিউটি পার্লার’-এ কাজ করছি। কাজের প্রয়োজনে আমাকে ও অন্যান্য মহিলা কর্মচারীদের মাঝেমাঝেই পোশাক পাল্টাতে হয়। ওই ঘরে লুকনো সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে তা আমরা কেউই জানতামনা।
সম্প্রতি ভিকি আমাকে ভিডিও কল করে ভয় দেখিয়ে বলে, পার্লারের চেঞ্জ রুমে লাগানো সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ তাঁর হাতে আছে। আমাকে ওই ভিডিও কল চলাকালীন সেই ফুটেজ দেখিয়ে বলে, আমি যদি ভিকি-র ইচ্ছা মতো না চলি সেক্ষেত্রে ফল হবে ভয়াবহ।”
সমাজে ইজ্জতহানীর ভয়ে তিথি প্রথমে আত্মহননের কথা ভেবেছিলেন, পরে ওঁর পরিবার ও বন্ধুদের কথায় সাহস পেয়ে তিথি থানায় যায় ভিকি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে।
সাতদিন একনাগাড়ে তিথি-কে নাকাল করেও মন ভরেনি বীজপুর থানার পুলিশদের। শেষকালে বীজপুর থানার পুলিশ তিথি-র এফআইআর প্রসঙ্গে এমন এক ভুল করে বসল স্বাধীন ভারতে সম্ভবতঃ তা কখনোই ঘটেনি।
বীজপুর থানার পুলিশদের সামান্য একটু ভুলের জন্য একদিকে যেমন বীজপুর পুলিশ বা ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট-এর পেশাদারিত্বের অভাব প্রকাশ হয়ে পড়ল ঠিক তেমনই সভ্য সমাজের কাছেও মুখ পুড়ল বীজপুর থানার।
