ধীরে ধীরে কী মাল্টি ড্রাগ রেজিসট্যান্সের পথে এগোচ্ছে কোভিড ১৯
হীরক মুখোপাধ্যায় (২২ এপ্রিল ‘২০):- তবে কী ধীরে ধীরে ‘মাল্টি ড্রাগ রেজিসট্যান্স’-এর পথেই এগোচ্ছে ‘কোভিড ১৯’, যদি তাই না হয় তাহলে চীনের উহান প্রদেশে দ্বিতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়া রোগ চট করে আর সারছেনা কেনো! বর্তমানে এই বিষয়টাই কোটি টাকার প্রশ্ন হয়ে উঠেছে বিশ্বের তাবড় বৈজ্ঞানিক মহলের কাছে।
‘নভেল কোরোনা ভাইরাস’ সম্পর্কিত রোগ ‘কোভিড ১৯’ বর্তমানে অতিমারী রূপে বিশ্বে চিহ্নিত হয়েছে। ইতিমধ্যে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২৪,৭৯,৬৯১, ঘোষিত মৃত্যুর সংখ্যা ১,৭০,৩৭০ বা তার বেশি। প্রতি মিনিটে বিশ্বের কোনো না কোনো প্রান্ত থেকে মৃত্যুর খবর এসে মৃত্যুর সংখ্যাটাকে আরো বাড়িয়ে চলেছে।
ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউ এইচ ও)-র প্রধান ডাঃ টেড্রস এডহানম তাঁর বার্তায় যেমন জানিয়েছেন, ” ‘নভেল কোরোনা ভাইরাস’ সৃষ্ট রোগ ‘কোভিড ১৯’ বারংবার নিজেকে অভিযোজিত করছে।”
তেমনই শেষ বার্তায় ডাঃ এডহানম এও বলেছেন, “বিশ্বাস করুন পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করতে চলেছে, আমরা ‘কোভিড ১৯’-এর চরম ক্ষমতা সম্পর্কে এখনো ধারণা করতে পারছিনা।”
‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’-র প্রধান-এর বক্তব্য এই মুহুর্তে সবথেকে বেশি ভাবিত করেছে বিশ্বের গবেষক মহলকে। তাঁরা ডাঃ এডনম-এর শেষ বক্তব্য নিয়ে এই মুহুর্তে চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত।
এই মুহুর্তে সমগ্র বিশ্ব জানে চীনের যে উহান প্রদেশ থেকে ‘কোভিড ১৯’ রোগটা সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল, সেই উহান প্রদেশে রোগের প্রাদুর্ভাব আবার শুরু হয়েছে। আর বিশ্বের বৈজ্ঞানিক মহল এই ঘটনাকে নিয়েই নতুন করে ভাবনা চিন্তা শুরু করেছেন।
অনেকেই মনে করতে পারেন, পশ্চিম দুনিয়ার অনেক দেশই এই সময় চীনের উপর বিরক্ত। বহির্বিশ্বের মনোভাব বুঝতে পেরে, দুনিয়ার চোখে পুনরায় ধুলো দেবার মানসিকতা নিয়ে; হয়তো চীন সরকার ইচ্ছাকৃত ভাবেই আবার ঘোষণা করেছে, ‘উহান প্রদেশে আবার ফিরে এসেছে কোভিড ১৯, যাঁরা প্রথমদিকে একবার সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন তাঁরা আবার কোরোনা-য় আক্রান্ত হচ্ছেন।’
বৈজ্ঞানিক মহলের বক্তব্য, “চীনের বক্তব্য যদি নিছক মিথ্যাচার হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে এই মুহুর্তে দাঁড়িয়ে ভাবার হয়তো তেমন কিছু নেই, কিন্তু ঘটনাটা যদি ১০০ শতাংশ সত্যি হয়ে থাকে তাহলে বলতেই হবে আগামী দিন আরো ভয়ঙ্কর হতে চলেছে বিশ্ববাসীর কাছে।”
বিশ্বের তাবড় বৈজ্ঞানিক, গবেষক ও চিকিৎসকেরা বলছেন, “রোগ প্রশমন আর রোগ নিরাময় এই দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। এই মুহুর্তে বিশ্বের কোনো দেশের কাছে ‘নভেল কোরোনা ভাইরাস’ সম্পর্কিত রোগ ‘কোভিড ১৯’-এর প্রতিষেধক না থাকার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাঁদের দেশবাসীকে বাঁচাবার লক্ষ্যে নানান ওষুধ নিয়ে শুধুমাত্র পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর সুফল পাওয়া গেলেও সর্বত্র এর সুফল দেখা যাচ্ছে না।
এমনকি প্রথমদিকে যখন অনেকেই বলছিলেন চীনের হাতে নিশ্চিত রূপেই এই রোগের প্রতিষেধক আছে, সেই চীনেও এই রোগ আবার প্রভাব বিস্তার করছে। চীনের এই ঘটনা এই মুহুর্তে বিশ্বের মাথা ব্যথার সব চেয়ে বড়ো কারণ।”
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মতো ভারতেও নানান ওষুধ নিয়ে ‘কোভিড ১৯’-এর উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
এই পর্যায়ে ‘হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন’, ‘এজিথ্রোমাইসিন’ সহ বিভিন্ন ওষুধের প্রয়োগ বিধি শুরু হয়েছে। একথা ঠিকই যে বহির্বিশ্বের তুলনায় এই মুহুর্তে ভারতে ‘কোভিড ১৯’-এ মৃত্যুর সংখ্যা নেহাতই কম। কিন্তু এক্ষেত্রেও সেই একই কথা প্রযোজ্য, রোগ প্রশমন আর রোগ নিরাময় এই দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’-র প্রধান ডাঃ এডনম-এর বার্তা প্রকাশিত হওয়ার আগেই যদিও আমেরিকা জানিয়ে দিয়েছে, “বৈজ্ঞানিক, গবেষক ও বরিষ্ঠ চিকিৎসকদের এক প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে চীনে।”
‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’-র প্রধান ও ‘আমেরিকা’-র জারি করা পৃথক দুটো ঘোষণার অন্তর্নিহিত মানে উদ্ধার করতে চাইছে বিশ্বের তাবড় বৈজ্ঞানিক, গবেষকগণ।
গবেষকদের এক অংশের দৃঢ় ধারণা “বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নানান পরিবেশ ও ওষুধের স্পর্ষে এসে ‘নভেল কোরোনা ভাইরাস’ বহুবার নিজেকে অভিযোজিত করতে করতে সম্ভবতঃ নিজের ভেতরে ‘মাল্টি ড্রাগ রেজিসট্যান্স’ (এম ডি আর) ক্ষমতা বহুগুণ বাড়িয়ে নিয়েছে। যার ফলে উহানে দ্বিতীয় পর্যায়ে যে সংক্রমণ ঘটছে তা প্রথমবারের মতো স্বল্পায়াসে সারছেনা।”
আর সত্যি যদি ইতিমধ্যে ‘কোভিড ১৯’ মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স’ ক্ষমতা বাড়িয়ে থাকে তবে সমগ্র বিশ্বের কাছেই এ এক অশনি সঙ্কেত।
নিকট অতীতে টিউবারকুলোসিস বা টিবি রোগের ক্ষেত্রেও অনেক সময় দেখা গেছে রোগী যদি প্রথমবার টিবি রোগ ধরা পড়ার পর চিকিৎসকের কথা মতো নির্ধারিত মাত্রার ওষুধ না নেয়, সেক্ষেত্রে রোগীর শরীরে দ্বিতীয়বার সংক্রমণের সময় এই রোগ প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে।
এখন প্রশ্ন, রোগী নির্ধারিত মাত্রায় নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন না করলে রোগীর শরীরে এমডিআর এফেক্ট-এর কারণে রোগ উৎকট রূপ ধারণ করলেও ভাইরাস-এর ক্ষেত্রে এই উদাহরণ কতটা খাটবে বা আদৌ খাটবে কিনা ?
বিশ্বের প্রথিতযশা বৈজ্ঞানিকরা এই বিষয়ে আলোকপাত করে জানিয়েছেন, “সবকিছু ঠিক না থাকলে ‘কোভিড ১৯’-এর ক্ষেত্রেও ‘মাল্টি ড্রাগ রেজিসট্যান্স’-এর ঘটনা ঘটতেই পারে। আর সত্যি যদি এমন ঘটনা ঘটে যায় বা ইতিমধ্যে ঘটে গিয়ে থাকে, তাহলে এই রোগ আগামী দিনে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে মানব সমাজের কাছে। “
Multi_Drug_Registance #MDR #Anxiety #World_Health_Organisation #America #Novel_Corona_Virus #Covid19 #Corona_Pandemic