৪০,৫৪১ টাকার একটেমরা ইঞ্জেকশন কোলকাতায় বিকোচ্ছে ১ লাখে
এম রাজশেখর (১২ জুলাই ‘২০):- পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিসের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট-এর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে কোরোনা আবহে কোলকাতার একশ্রেণীর ওষুধ ব্যবসায়ী চুটিয়ে কালোবাজারি করে চলেছে।
কালোবাজারিদের কেরামতিতে সিপলা কোম্পানীর ৪০,৫৪১ টাকার ‘একটেমরা’ ইঞ্জেকশন বিকোচ্ছে মাত্র ১ লাখ টাকায়।
গতকাল রাতে ‘একটেমরা’ (Actemra) ইঞ্জেকশন-এর খোঁজে সারারাত ধরে কোলকাতার নামজাদা ওষুধের দোকানগুলো চষে বেরালেও কোথাও এই ওষুধ প্রকৃত দামে পাওয়া যায়নি।
একটা ওষুধের দোকানদার তো প্রেসক্রিপশন দেখার সাথেসাথেই বলে দিলেন, “আছে, কিন্তু আপনাকে কেনো দেবো ? আপনি যদি সংবাদমাধ্যমকে জানান !”
আবার এসএসকেএম বা পিজি হাসপাতালের কাছে অবস্থিত একটা ওষুধের দোকান এই ওষুধ বিক্রি করতে চাইলেও একটা ৪০০ মিগ্রা বা ২০ মিলিলিটার ভায়াল-এর দাম হেঁকেছে ১ লাখ টাকা।
কী কাজে লাগে এই ‘একটেমরা’ ইঞ্জেকশন, এই বিষয়ে জানতে চাইলে জনৈক চিকিৎসক জানান, “রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস-এর অন্তিম পর্যায়ে রোগীর যন্ত্রণা উপশমের জন্য অনেক সময় রোগীকে দিনে দুটো ‘একটেমরা’ ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়।”
কিন্তু কোরোনা রোগীকে সুস্থ করার লক্ষ্যে বর্তমানে কোলকাতার বাজারে দেদার বিকোচ্ছে এই ইঞ্জেকশন।
এই ওষুধের সর্বাধিক খুচরা মূল্য ৪০,৫৪০.৯৫ টাকা হলেও যে দোকানদার যেমন পারছে তেমন দর হাঁকছে। শুধু তাই নয় ওষুধের পাইকারি ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে এই ইঞ্জেকশন চলে যাচ্ছে কোলকাতার বুকে অবস্থিত এক বেসরকারী হাসপাতালের লাগোয়া ওষুধের দোকানে, সেখান থেকেই বিত্তবান রোগীরা ইঞ্জেকশন কিনে আক্ষরিক অর্থেই নিঃস্ব হচ্ছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হলো ভারত সরকারের চিকিৎসা নিয়ামক সংস্থা বা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চিকিৎসা নিয়ামক বিভাগ কেউই কোরোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে ‘একটেমরা’ ব্যাবহারের বিধান দেয়নি। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা আইসিএমআর কেউই কোরোনা চিকিৎসায় এই ওষুধকে মান্যতা দেয়নি। তাহলে কেনো কোরোনা রোগীদের এই ওষুধ কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে?
উত্তরটা সম্ভবতঃ খুবই জটিল, তাই এর সঠিক উত্তর কেউই দিতে পারেননি। যদিও নিন্দুকদের দাবী, চিকিৎসকের পরামর্শে একটা ওষুধ বা ইঞ্জেকশন বিক্রি করলে ওষুধ নির্মাতা সংস্থা কত টাকা চিকিৎসককে দেন তা সবাই জানে, সুতরাং আচমকা এই ওষুধের কালোবাজারি হওয়ার রহস্য বুঝতে অযথা মুখ্যমন্ত্রীকে বিরক্ত করার কী আছে !
না শুধু ‘একটেমরা’ ইঞ্জেকশন নয়, তথ্যাভিজ্ঞ মহলের বক্তব্য কিছুদিন আগে যেমন ‘ইনসুলিন’-এর ইচ্ছাকৃত আকাল তৈরী করে এক শ্রেণীর ওষুধ ব্যবসায়ী অবৈধভাবে যথেষ্ট মাত্রায় মুনাফা অর্জনে যত্নবান হয়েছিলেন, ঠিক সেভাবেই এই মুহুর্তে অনেক ওষুধই অধিক দামে বিক্রি করে মুনাফা লুটছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে এটা বাস্তব ঘটনা এই ব্যবসায়ীরা একটা ২০ মিলিলিটারের ইঞ্জেকশন থেকে অবৈধভাবে দ্বিগুণেরও বেশি মুনাফা অর্জন করলেও ক্রেতাকে কিন্তু কোনো পাকা রসিদ দিচ্ছেননা, আর ক্ষেত্রবিশেষে যদিওবা দিচ্ছেন সেখানে কিন্তু ‘একটিমেরা’-র দাম লিখছেন ৪০,৫৪০.৯৫ টাকা।
ঘটনার গতিপ্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে, একশ্রেণীর বেসরকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং ওষুধ নির্মাতা সংস্থার কাছে কোরোনা রোগীরা যেন সাক্ষাৎ ‘কল্পতরু’। ইচ্ছে মাত্র চেয়ে নাও, নিরাশ হওয়ার কিছু নেই।