ড: পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়,কলকাতা, ১৬.০৭.২০২০
মানুষ হওয়ার কোলাজ
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
আগে কোনোদিন মনে হয়নি।
কিন্তু এখন আটঘড়ার মোড়ে
কমলের দোকানটা খুব টানে।
তার সামনের
সিমেন্টের বেঞ্চটাতে বসে
রাস্তা দেখতে দেখতে আজকাল
গুড়ের চা খেতে ইচ্ছে করে।
রাস্তায় কত মানুষ!
মানুষের কতো ধরণ!
কারো হাসিতে কান্না।
কারো কান্নায় হাসি।
এখন এসবের গভীরে যেতে ইচ্ছে করে।
আগে বৃষ্টি শুরু হলে
ছুট্টে বাড়ি ঢুকে পড়তাম।
এখন ছুট্টে বেরোই না।
বাড়িতেই থাকি।
ব্যালকনি থেকে দেখি
রাস্তার উল্টোদিকের
বৃষ্টি হওয়া ছাতিম গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে
একটা বড় মেয়ে আর
তুলনায় একটা ছোট ছেলে ভিজছে।
তাদের দেখে নিরুপায় আমারও
এখন ভিজতে ইচ্ছে করে।
মনে পড়ে
যখন সব ঠিক ছিলো
তখন রোজ শংকরী মাসিকে কথা দিতাম,
আজ তো হয়ে গেছে!
কালকে ঠিক তোমার থেকে মাছ কিনবো।
কোনোদিন কথা রাখিনি।
আজ,কি আশ্চর্য!
কত না দিতে পারা কথাও রাখতে ইচ্ছে করে।
আগে মাথার উপর ছাদ ছিলো।
ছাদের উপর, আকাশ ছিলো।
এখনো আছে তারা।
আগে ছাদ ভালো লাগতো।
আকাশের তলা নয়।
এখন প্রতিটি ঝলসানো পূর্ণিমার রাতে
খোলা মাঠে চিত হয়ে শুয়ে
নিষ্পলক তাকিয়ে আকাশের তারা গুনতে ইচ্ছে করে।
আগে সভ্য ছিলাম।
মনে জঙ্গল ছিলো না।
আজ সভ্যতার কংক্রিটের জঙ্গল ছেড়ে
সবুজ খোঁজার উপায় নেই।
তাই অবুঝের মতো মাতলা নদীর পাড়ে
ম্যানগ্রোভের ঝোপে দাঁড়িয়ে
দেখতে ইচ্ছে করে
তার যৌবনবতী প্রবাহকে।
আগে দখিনা হওয়াকে
অপসংস্কৃতি মনে হতো।
অফিসের আকাম সেরে
সন্ধ্যেবেলা টলমল পায়ে বাড়ি ফিরে
বাতানুকূল যন্ত্রের নিচে বসতাম।
তার সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়ে নিতাম
নিজের কৃত্রিম সমৃদ্ধির সংস্কৃতি।
এখন দখিনা ডাকে,
বলে,ছেড়ে দে সাধের ঘর!
আমার উপায়ের জানালা বন্ধ,
দরজা বন্ধ।
আমার যেতে চেয়েও
যাওয়া হয়না তার কাছে।
আমার নীরবতাগুলো
এখন আর নীরব থাকতে চায় না।
আজন্মকাল বুকের মধ্যে জমে থাকা
পাথরের মতো কথাগুলো
আজ প্রতিবাদী হয়ে
হৃদয় ফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে চায়।
এখন নীরবতার কথা হতে ইচ্ছে করে।
এখন আর আমার কোনো অহং নেই।
জেতার বাসনা নেই।
পরাজয়ে ঘৃণা নেই।
স্বার্থের হিসেব কষা নেই।
প্রাপ্তির লালসা নেই।
মিথ্যে বলার আনন্দ নেই।
প্রতিশোধের আগুনে শত্রুকে জ্বালানোর আকাঙ্খা নেই। ক্রোধ নেই।
ভাইরাসকে পরাজিত করতে চেয়ে
নিজে ব্যর্থ হওয়া একটা লকডাউনের গল্প
অমানুষ হয়ে বাঁচার উচ্চাকাঙ্ক্ষী আমাকে
কেমন যেন মানুষ মানুষ করে দিয়ে গেল।
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
ড: পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায় একজন স্বনামধণ্য শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ । হাসিখুশি শিশুদের নিয়ে কাজ করার জন্যই বোধহয়, তিনি নিজেও একজন জীবনীশক্তিতে ভরপুর অথচ মার্জিত,রুচিশীল ও দায়িত্ববান হাসিখুশি মানুষ । ডাক্তারি ছাড়াও তাঁর আর একটা পরিচয় সুলেখক ও কবি । তীক্ষ্ণ ক্ষুরধার লেখা যেমন সমাজের আয়না, তেমনি হাস্যরসের আড়ালে জীবনবোধের স্যাটায়ার তাঁর কলম থেকে বেরিয়ে আসে সহজেই ।
সম্পাদকের দায়িত্ব জগৎ খুঁজে মণিমুক্তো পাঠকের সামনে নিয়ে আসা , তাই আমিও সেই কাজটাই করার চেষ্টায় প্রতিদিন ড: পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায় এর প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে চুরি করে চলেছি তাঁর ভান্ডার থেকে । ড: পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায় আমার বড় ভাইয়ের মতো নয় বড় ভাই ই , আর তাই বাৎসল্য স্নেহে আমার সেই অপরাধ ক্ষমা করে চলেছেন । ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা তিনি ও তাঁর সকল নিকট জন সুস্থ থাকুন ।
~ সুমন মুন্সী মুখ্য সম্পাদক IBG NEWS ~
