
হার্ড ইমিউনিটি ও হার্ড টক্ – করোনা কালে ভিখারী সমাজ ও সমাজের ভিখারী
ড:পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়,কলকাতা, ৮ জুলাই ২০২০:
এই তথ্যটি নিয়ে এখন চর্চার শেষ নেই।পণ্ডিতেরা এই নিয়ে গবেষণা শুরু করে দিয়েছেন কি দেননি এই আলোচনায় না গিয়ে বরং কতকগুলো ঘটনা যেগুলো আমরা সবাই চোখের সামনে ঘটতে দেখেছি, সেগুলোর দিকে একটু আলোকপাত করি:
●একজন বডি বিল্ডার যিনি রোজ লোহালক্কর নিয়ে শরীর চর্চা করেন,তার কাছে শরীরচর্চা কোনো সমস্যা নয়।কিন্তু একই ভাবে একজন প্রথমবার শরীর চর্চা করতে গেলে তাঁর শরীরে ব্যাথা এবং চোটের সম্ভাবনা প্রবল।হয়তো তার জন্য তিনি সাতদিন কোনো কাজই করতে পারলেন না।তারপর অবশ্য তিনি অভ্যাসে থাকলে ব্যাপারটাতে তিনিও অভ্যস্ত হয়ে যান।
●একজন পাহাড়ি তরতর করে উঁচু পাহাড়ে উঠে যেতে পারে কিন্তু একজন সমতলের মানুষ সেই বেগে উঠতে গেলে শ্বাসকষ্ট হয়ে জীবনের ঝুঁকিও হতে পারে।পরে হাল না ছাড়লে তিনিও পাহাড়ে উঠতে শিখে যান।
●লন্ডন থেকে আসা সাহেব কলকাতার তীব্রতম শীতে বারমুডা পরে খালি গায়ে ঘুরে বেড়ায় কিন্তু কলকাতা থেকে কোন বাঙালি লন্ডনের গ্রীষ্মে লন্ডন গেলেও তার একটা হালকা সোয়েটার অন্ততঃ লাগে।কিছুদিন পর থেকে সাহেবের সোয়েটার লাগে,বাঙালিরও বারমুডা।
●একটা পাহাড়ি কুকুরের শরীরে প্রচুর লোম থাকে,কিন্তু সমতলের একটা কুকুরের গায়ে তা থাকে না।লোম শীত থেকে কুকুরকে বাঁচায়। একই রকম ভাবে দীর্ঘদিন ধরে একজন মানুষ পাহাড়ে বসবাস করলে তাকে শীত থেকে বাঁচাবার জন্য মস্তিষ্ক তার চামড়া কুঁচকে দিয়ে অসংখ্য ভাঁজের সৃষ্টি করে যা নিজেই একটি কম্বলের মতো ব্যবহার করে।
●বড় মানুষেরা পেয়ালা থেকে গরম চা ঠোঁটে ছেঁকা না লাগিয়েই খেতে পারে কিন্তু বাচ্চারা তা পারে না।তাদের।ঠান্ডা করে খেতে হয়।তারা বড় হলে তাদেরও বড়দের অভ্যাস তৈরি হয়।
●যে মানুষটি কোনোদিন ঝাল খাননি তিনি হঠাৎ করে ঝাল খেলে তাঁর পেট ব্যাথা,বমি সবই হতে পারে।কিন্তু শেষমেশ লেগে থাকলে তিনিও ঝাল খাওয়া শিখে যান।
●চাষি রোদে পুড়ে জলে ভিজে মাঠে কাজ করে।একজন বাড়িতে থাকা আরামপ্রিয় মানুষ সেরকম করতে গেলে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা।এটাও অভ্যাস অনভ্যাসের গল্প।
আপাত দৃষ্টিতে উপরোক্ত ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা হলেও তাদের মধ্যে কিন্তু একটা নিশ্চিত যোগসূত্রও রয়েছে।এবং তা হলো শরীরে বাইরে থেকে ভিন্ন ভিন্ন উদ্দীপকের এক্সপোজার।তাতে করে স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে মস্তিষ্কে সেই খবর যাওয়া এবং শেষে মস্তিষ্ক থেকে,শরীরকে কি করতে হবে,এই নিয়ে ডিরেকশন বা সিগন্যাল দেওয়া।কিছু কিছু সিগন্যালিং সঙ্গে সঙ্গে হয়।যেমন আগুনে হাত লাগলে আগুনের কাছ থেকে হাত সরিয়ে নেওয়া।আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে একপোজার থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে শরীর মস্তিষ্কের সাহায্যে সে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করে।তাতে সময় লাগে।
ভিখারিদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে,এরকম কিছু হওয়ার সম্ভাবনাই সব থেকে বেশি ও যৌক্তিক,যে তাদের শরীর জীবাণু নামক উদ্দীপকের লাগাতার আক্রমন থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্য তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অস্ত্র বা এন্টিবডি মস্তিষ্কের নির্দেশে ইমিউন সিষ্টেমের দ্বারা তৈরি করে নিয়েছে।এও এক ধরণের অর্জিত প্রতিরোধ ক্ষমতা বা acquired immunity. বাকি পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাপারটা গবেষণাযোগ্য এবং এর উত্তর দেবে ভাবিকালের গবেষকরা।
●●●●●●●●●●●