নিজের ছায়ার সাথে লড়াই – কিছু মানুষের গোটা জীবন শুধু প্রত্যাশার আকাঙ্খা
ড:পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায় , কলকাতা, ১২ অগাস্ট ২০২০:
কিছু মানুষের গোটা জীবন শুধু প্রত্যাশার আকাঙ্খা।তারা পিটপিটে,খিটখিটে,ঘ্যানঘেনে, ছিদ্রান্বেষী।
এতে অবশ্য তাদের কোনো সমস্যা নেই।কারণ তারা বোঝেই না,আর বুঝলেও মানেনা তাদের এই স্বভাবের জন্য পাশে থাকা মানুষটা সবসময় কি পরিমান চাপে থাকে,হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।তার ধারণা জগৎ সংসারে গায়ে হওয়া লাগিয়ে বেরোনো ছাড়া তার আর কোনো কাজ নেই,অথবা সে যা করবে তা ইচ্ছে ও সখে।বাকি দায় দায়িত্ব নিয়ে বাধ্যতামূলক কর্তব্য পালনের দায় অন্যের;কারণ তার বাঁধাধরা কাজের ছক ভালো লাগেনা।
পাশের জন মা,বাবা,স্বামী,স্ত্রী,ছেলে,মেয়ে,ম্যানেজার,কাজের মাসি ,ড্রাইভার যে কেউ হতে পারে।যেটাজোটে,যাতে সুযোগ হয়।
সকালের চায়ের থেকে সমস্যার শুরু হয়।বেড টি’টা হাতের থেকে দূরে কেন? প্লেটে চা পড়ে আছে কেন?কাপের হাতল ভিজে কেন?চা অত্যধিক ঠান্ডা বা গরম কেন? চা খাওয়ার পর এতক্ষন এঁটো কাপটা পড়ে আছে কেন? এরকম হাজারটা ফিরিস্তি।ফিরিস্তি দিতে খাটতে হয়না।
ব্রেকফাস্টটা সময়ে তার হাতে পৌঁছতে হবে।রোজ একরকম আইটেম হলে চলবে না।ঠান্ডা হলে চলবে না।নূন ঝাল একটু উনিশ বিশ হলে মুশকিল।
জামাকাপড় চেঞ্জ করে সে যত্রতত্র ফেলে যাবে,ওয়ালেট এখানে ওখানে পড়ে থাকবে,সব তুলে জায়গা মতো রেখে দিতে হবে।বইপত্র, খাতা,পেন,চশমা সব যেন জায়গা মতো থাকে।কাজের মাসি না আসলেও কোনো কাজ পড়ে থাকবে না,রান্নার মাসি না আসলেও আইটেম কম হবে না।কেউ লাইট জ্বেলে বা পাখা চালিয়ে ভুল করে অন্য ঘরে চলে গেলে সেটা অফ করে তাকে দশটা কথা শোনাবে।ঘরের এক কোনে একটু মাকড়সার ঝুল বা জাল পড়ে থাকলে অন্যজন গালাগাল খাবে।
অন লাইন কোনো বস্তু অর্ডার করে সেটা না আসলে আরেক জনের দোষ।বাজার থেকে আপাত নিখুঁত আপেল,আলু ইত্যাদি আনার পর ভিতরে পচা বা পোকা হলে জিজ্ঞাসা করবে না দেখে আনা হলো কেন? মাছে গন্ধ কেন? মাছ ছোট কেন? এত বেশি দাম কেন? এত কম দাম কেন? অফ সিজন ডিসকাউন্টে এসি কেনার পর তা বিগড়ালে অন্যজনের উপর রাগ।
বাড়িতে গাছ লাগালে তার দেখভালের দায়িত্ব তার নয়।কুকুর পুষলে শুধু টমি টমি করে তিন মিনিট আদরের দায়িত্ব তার,খাওয়ানো,হাগানোর দায়িত্ব নয়। সে দশটায় ঘুমোয়,পাঁচটায় ওঠে।পাশের জন কেন তা না করে বারোটায় ঘুমিয়ে সাতটায় ওঠে? তার কানে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোন।অন্যের কানে তা হলেই গোয়েন্দাগিরি। কি কেস?তার সব বন্ধু, ভাই।অপরজনের সব প্রেমিক বা প্রেমিকা।
ঘরে বাইরে যে সব সমস্যাগুলো।নিজের কারণে তৈরি,তা সমাধানের চেষ্টা না করে কান্নাকাটি,রাগ।এরা চলবে নবাবের ঢঙে।পান থেকে চুন খসবে না।তাতে বাকি সব চুলোয় যাক।যার যে সমস্যা হয় হোক।নিজের একচুল প্রাপ্য ছাড়া চলবে না।
আসলে যা বললাম।প্রত্যাশী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী,পিটপিটে,খিটখিটে, ঘ্যানঘেনে মানুষেরা সব বিধাতার অদ্ভুত সৃষ্টি।এরা যুগপৎ অলস এবং পারফেকশনিস্ট।জ্বালাতন আর ক্রাইসিস তৈরিতে এদের জীবনের মূল সাফল্য ,সুখ।এতে ছোট জীবনে ছোট ছোট শান্তি বিঘ্নিত হয়,আনন্দ মাটি হয়, এসব তারা ভেবেদেখে না। পাত্তাও দেয় বা।নেভার সেটল ফর লেস।
আপনিও কি এরকম? তাহলে নিজেকে পাল্টানোর চেষ্টা করুন।সময় লাগবে,কিন্তু লেগে থাকলে হয়ে যাবে।পাল্টে ফেলা যায়। নিখুঁত হওয়ার থেকেও বেশি দরকার মানুষের বিরক্তির কারণ না হওয়া।নিজের হাত, পা, বোধ,বুদ্ধি, বিবেচনা আছে।সেগুলো কাজে লাগিয়ে অন্যের খুঁত ধরা ছাড়ুন,নিজের খামতি ঢাকুন।আমরা মানুষ,তাই দোষে গুনে।তা না হলে মানুষ না হয়ে স্বর্গে বাস করতাম।
●●●●●●●●●●●●●
পলাশ_বন্দ্যোপাধ্যায়
১২.০৮.২০২০