ড: পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়,কলকাতা,১০ সেপ্টেম্বর ২০২০
●●●●●●●●●●●●●●●
প্রিয় কবিতা।
অনেক সময় অপরপক্ষের অগোচরে
একতরফা ভালো লাগা থেকেও
কেউ কারো প্রিয় হয়ে যায়।
যে কারণে তুমি আমার প্রিয়।
আমি তোমার নই।
সৃষ্টির যাত্রাপথের মহাজাগতিক ভিড়ে
আমি তোমার একজন অখ্যাত সেবক।
আমার জাত নেই।কুল নেই।
আমার কবিতা নিয়ে বাচিক শিল্পীর পাঠ নেই।
আমাকে নিয়ে চর্চা নেই।
নর্দমার কোনে অবহেলায় ফুটে থাকা ফুলের মতো আমি বেঁচে থাকি আমার গরিব কাগজ কলম আর তোমাকে সঙ্গী করে।
আমার মাথার উপর আকাশ।
তাতে ভাবনার মেঘের যাওয়া আসা।
পায়ের নিচে রুক্ষ মাটি।ভিজে মাটি।
খোলা বুকে চৈত্রের হাওয়া।
মনে, ভেঙে যাওয়া ঘুমের স্বপ্নাবশেষ।
এসব নিয়ে হৃদয়- মিইয়ে যাওয়া উত্তাপে তুষের আগুনের মতো জ্বলে।
তবুও কলম কাগজের বুকে আঘাত করে।
তা দিয়ে কবিতা লেখে।
পাঠকের অগোচরে,
রসিকের উদাসীনতায়,
তার পঞ্চত্ব প্রাপ্তির পর-
আবার গা ঝাড়া দিয়ে উঠি আমি।
তোমাকে ভালোবাসি বলে।
কখনো অভিমানে রামধনুর রঙ হারানো-
ফ্যাকাসে অস্তিত্ব,
কখনো প্রবল চক্রান্তকারী মিথ্যে সাহিত্যের কুশীলবদের হাতে ভাঙা, আমার বিপন্ন ছন্দের খেয়ার মাস্তুল,
কখনো বুকের হার জিরজিরে পাঁজর ভেঙে বেরিয়ে আসা আমার কল্পনার শুকপাখি-
তোমার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে।
তোমার ব্যস্ততা,
তোমার নামীদের দিকে নজর দেওয়া
অমূল্য জীবনের নীচে চাপা পড়া
মৃত্যু পরোয়ানা কখনো ভাবে-
এই শেষ! আর নয়!
তবুও মন মানে না।
সঙ্গতিহীন ফিনিক্স পাখি হতে চাওয়া কবিসত্তার চোখ দুটো টলতে টলতে মাটি ছেড়ে আবার উঠে দাঁড়ায় আবার তবু।
গেরিলা যুদ্ধের স্বপ্ন দেখে।
এক একটা দিন কল্পনার বৈঠকখানায়
নতুন ঝড়ের আনাগোনা।
সেদিন লেখনীর শব্দমন্থনের অমৃত অবিশ্রান্ত খ্যাপা ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ে কাগজের তীরে।
আমি জেগে থাকি গোটা রাত।
কাগজের পাহাড় জমে আমার বিনিদ্র খাটের চারপাশে।
তুমি দেখ না।
আমি জেদি হই আরো।
পরের দিন টলতে টলতে চলা বিপন্ন কবিত্ব
সফল কবিদের অহং এর ঠোক্কর খেয়ে তার সভ্যতা ধ্বংসের গান শোনে।তাতে সুর দেয় কখনো বা।
তার থেকে তৈরি হয়
আরো আরো অনেক বিচ্ছিন্ন বদ্বীপের মতো নাম না জানা কবিতার দল।
ঢেউ হতে চেয়ে না পেরে
বুদ্বুদের মতো মিলিয়ে যায় তারা।
অথচ দেখ!
যারা সফল,তাদের অনেকের থেকেই অনেক বড়,অনেক উদার সৃষ্টির জানালা ছিলো আমার।
তাদের ঘুলঘুলির থেকে ছোট জানালা চিরকাল আমার এই অসহায় মহিয়সীকে বাঁকা কথা শুনিয়ে দ্রুতগামী ট্রেনের মতো তীব্র হুইশল মারতে মারতে পাশ কেটে বেরিয়ে চলে গেল!
তুমি ধৃতরাষ্ট্রের গান্ধারীর মতো
কিছু বললে না সেই প্রভাবশালীদের।
টের পেলে না আমার অপমান।
ভালোবাসার কাছে হেরে গেছি আসলে।
তাই আমার এই যন্ত্রণাপ্রাপ্তি।
ভালোবাসারা যন্ত্রণা পায়।
যারা উপেক্ষা করতে পারে তারা সুখে থাকে।
তবুও আমার ভালোবাসতে পারার গর্ব যায় না।
আত্মগ্লানি মরে মরে মৃতদেহের উইঢিবি হয়।
সে নিথর হয়ে শুয়ে থাকে অযোগ্যতার পাহাড় হয়ে ওঠা মাসিহা কবিদের ভিড়ে।
এভাবেও মৃত্যু হয়?
আমার মতো হাজার হাজার উইঢিবির মৃত্যু হয়!
তাদের নিয়ে তৈরি হয়না ধ্বংসের আত্মকথা!
তাদের পরোয়া করেনা কেউ।
প্রিয় কবিতা।
তোমার কাছে আমার কোনো প্রত্যাশা নেই।
প্রত্যাশা করেনা প্রেমিকেরা।
তবুও উপেক্ষার কাঠিন্য
কোনোদিন কোনো দুর্বল মুহূর্তে শিথিল হলে
কখনো যদি মনে হয়-
একঝলক মায়াবী দৃষ্টিপাতে তাকিও এদিকে।
শুধু সেই দিনতার কথা ভেবেই এখনো লিখে চলেছি তোমায়।