বাংলাদেশের সোনারগাঁও বর্তমানে হিন্দুশূণ্য – বিষাদের ইতিহাস কে গর্বের পর্যটন কেন্দ্র কি বলা যায়?
হীরক মুখোপাধ্যায় (২৬ সেপ্টেম্বর ‘২০):- পানাম সিটি বাংলাদেশের সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের একটি প্রাচীন ইতিহাসের শহর। বড় নগরের তিনটি শহর (বড় শহর), খাস নগর, পানাম নগর এর মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয় শহর। বহু ইতিহাস ভিত্তিক ভবন রয়েছে যা বহু শতাব্দী আগে নির্মিত হয়েছিল এবং সেগুলি বারো-ভূঁইয়ের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত। এটি সোনারগাঁওর 20 কিমি এলাকা জুড়ে। পানাম সিটি বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
বাংলাদেশের গর্বের ঐতিহাসিক সব নিদর্শন আছে এই শহরে ।তাই সরকার পর্যটনের জন্য গর্বের সাথে একে তুলে ধরেন সারা বিশ্বের কাছে। মানুষের নান্দনিক দিক কতটা উন্নতি করেছিল তা সোনারগাঁও দেখলে বোঝা যায় ।
কিন্তু এ ইতিহাস কি শুধুই সাফল্যের কোথাও কোনো বেদনা নেই লুকিয়ে । আজ হয়তো সবাই বলছে দেখো কি সুন্দর কতদিনের পুরানো বাড়ি কেউ কি জানতে চাইছে এই বাড়ি অন্ধকারে কেন ? কেন মানুষ গুলো নেই ? কি হলো তাদের ? কেন অনেক আধুনিক বুদ্ধিজীবী বলছেন ভারত যেমন ব্রিটিশ অত্যাচারের নিদর্শন সমান সেলুলার জেল বা জালিওলানাবাগ কে পর্যটন কেন্দ্র করেছে , তেমনি সোনারগাঁও হলো তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিমা পাকিস্তানীদের নিদারুন ইসলামী আগ্রাসনের জ্বলন্ত নিদর্শন যা কিনা আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশের গর্বের পর্যটন কেন্দ্র ?
ইতিহাসে ফিরে দেখা :
১৯৬৫ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ফলশ্রুতিতে হিন্দুশূণ্য হলো পানাম নগর । বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসাবে পানাম শহরকে পর্যটন কেন্দ্র রূপে চিহ্নিত করে । এবং স্থানীয় মানুষের রোজগারের জন্য অর্থ রোজকারের পথে নেমেছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রকের অধীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ এই সাবেক বাংলার রাজধানী,দেখা যাক ।
প্রসঙ্গতঃ বলে রাখা ভালো, ২০০৬ সালে ‘ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফাণ্ড’ বিশ্বের ১০০ টা ঐতিহাসিক ধ্বংসপ্রায় শহরের মধ্যে স্থান দেয় পানাম নগর বা পানাম শহরকে।
বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানার অধীনে পরিত্যক্ত নগর রূপে অবস্থিত এই পানাম নগর।
১৪ শতকে হিন্দুরা এখানে এক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, সেই সময় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেশ বিদেশের ছাত্রছাত্রীরা অধ্যয়ণ করতে আসতেন।
ধনী হিন্দু ব্যবসায়ীদের বসতিপূর্ণ পানামা নগরেই ১৫ শতকে ঈশা খাঁ বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেন।
পরবর্তী সময়ে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর আমলে এই নগর হয়ে উঠেছিল নীল রপ্তানির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র।
মুসলিম অত্যাচারে পরিত্যক্ত পানামা নগরে ছিল ঔপনিবেশিক স্থাপত্য রীতিতে তৈরী একাধিক একতলা, দোতলা ও তিনতলা বাড়ি ও অট্টালিকা।
আজও এই নগরের উত্তর দিকে ৩১ টা এবং দক্ষিণ দিকে ২১ টা বাড়ি ও অট্টালিকা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
বারো ভুঁইয়াদের ইতিহাস বহনকারী পানামা নগর-এ জনৈক হিন্দুর এমনই এক ২০৪ কামরা বিশিষ্ট পরিত্যক্ত অট্টালিকার বর্তমান মালিক আব্দুল আওয়াল।
নিকট অতীতে লজ্জাজনক নরকীয় মুসলিম অত্যাচারের জীবন্ত সাক্ষী রূপে আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে পানাম নগর।
৫০০ বছরের এক নগর শুধুমাত্র মুসলিম অত্যাচারের ফলে রাতারাতি পরিত্যক্ত হয়ে গিয়েছিল ।
ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্ম হলেও, দুর্ভাগ্যের বিষয় স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার হিন্দুশূণ্য এই গ্রামকে পুনরায় হিন্দুদের হাতে তুলে না দিয়ে রাজকোষের শ্রীবৃদ্ধির লক্ষ্যে অর্থ রোজকারের মাধ্যম করে তুলেছে। কোথাও কি মহান মুক্তির নায়ক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা পাকিস্তানী অত্যাচারের সেই জঘন্য ইতিহাসকেই পুনঃ প্রতিষ্ঠা হতে দেখছেন নীরবে ।
বাংলাদেশের কেন এই পৃথিবীর কোথায় জাতের নামে ,ধর্মের নামে অত্যাচার হওয়া উচিত নয় । মানুষ আজ নেই গো মানুষ, কিন্তু মানবতা থাকুক আমার ভিতরে ও বাহিরে অন্তরে অন্তরে । সোনারগাঁও সত্যি গর্বের হয়ে উঠুক সকলের জন্য কারো চাপা কান্নায় মোড়া নয়।রক্তের দাগ ধোয়া যাবে না ,কিন্তু প্রকৃত অধিকারীদের ফেরত দিলে চোখের জল হয়তো মুছবে ।