হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব – মূল্যবোধহীন অকাল বার্ধক্য বাসা বাঁধছে কিশোর জীবনে
ড:পলাশ বন্দোপাধ্যায়, কলকাতা , ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০
শিশুরা আগামী পৃথিবীর প্রতিনিধি।তার প্রত্যক্ষ অভিভাবক বাবা এবং মায়েরা জন্মলগ্ন থেকে তাদের মানুষ করে গড়ে তোলার কারিগর।মানুষ করা,কথাটা শুনতে খুব সহজ মনে হলেও আদপে তা কিন্তু ভয়ানক কঠিন।মানুষ গড়ার আসল মানে কিন্তু তাকে আগামীতে দৈর্ঘ্যে প্রস্থে বড় ,পেশীবহুল করে মস্তিষ্কহীন হৃদয়হীন পালোয়ান বানানো নয়, তাতে,হৃদয়বৃত্তি ও সঙ্গে দায়িত্ব,কর্তব্যবোধ,সংবেদনশীলতা,ভালোবাসা ইত্যাদি মানবিক গুনগুলিও জাগিয়ে তোলা।যাতে ভবিষ্যৎ পৃথিবী আরো বেশি স্বার্থপর,হিংসাশ্রয়ী এবং অন্যের ব্যাপারে উদাসীন না হয়ে উঠতে পারে।দুঃখজনক হলেও সত্যি,নব্য অভিভাবকদের কাছে শিশু মানুষ করার সংজ্ঞা পাল্টে গেছে।তাঁদের কাছে শিশু মানুষ করার মানে হলো ছোটবেলা থেকে দামি দামি কৌটার দুধ,অপ্রয়োজনীয় পরিমানে ভিটামিন,ক্ষতিকর পরিমানে ফলের রস,এবং অকারণে হেল্থড্রিংক্স খাওয়ানো যাতে সে সফল সুচারু ও নিখুঁত ভাবে সোডিয়াম,পটাশিয়াম,ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন,কপার এবং জিঙ্ক সহযোগে এক ধাতুবিদ্যার চ্যাপ্টার তৈরি হয়ে উঠতে পারে।ওটস,কাজু, কিসমিস,প্রোটিন পাউডার,মাছ,মাংস ডিম, ছানা,মাখনে সমৃদ্ধ করা,যাতে সে প্রোটিন ফ্যাট কার্বোহাইড্রেট ও ভিটামিনের গুদাম হয়ে উঠতে পারে।
শিশু দিন রাত এসি তে থাকে,গাড়ি করে স্কুল যায়,প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়না,ধুলোবালি কাকে বলে জানে না,গায়ে রোদ লাগায় না।মাঠে খেলে না।সে ছোটবেলা থেকে পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়ার নোটস গেলে গৃহশিক্ষকের কাছে (নয়তো গৃহশিক্ষকের ছুটি)।গান গায়, নাচে,সাঁতার শেখে,ছবি আঁকে,রিয়েলিটি শো তে যায়।
এইভাবে তার শৈশবের বারোটা বাজিয়ে, ‘খারাপ দিকে নজর না দিয়ে, খারাপ কিছু গায়ে না মেখে তারা মানুষ তৈরি হওয়ার বদলে হৃদয়হীন রোবট তৈরি হয়।আত্মবিশ্বাসহীন,ব্যক্তিত্বহীন,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন,ক্ষমতাহীন এবং জড়ভরত নাগরিকের বোঝায় পৃথিবী ভরতে থাকে।
শিক্ষিত নাগরিক, বোধে,ব্যক্তিত্বে, এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতায় পৃথিবীর পক্ষে মঙ্গলজনক এক একজন সম্পূর্ণ মানুষ।শুধু নিজের টুকুর কথা চিন্তা করে স্বার্থপর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরি করা না স্বশিক্ষিত সুস্থ নাগরিক সমাজ তৈরি করা, কোনটা বেশি দরকার এটা কিন্তু ভেবে দেখার সময় এসে গেছে।আজকের শিশুকে কিন্তু ভবিষ্যতের সব রাস্তা পারাপার নিজেকেই করতে হবে।রিলে রেসের ভবিষ্যৎ ব্যাটন তাদেরই হাতে।
●●●●●●●●●●●●
পলাশ_বন্দ্যোপাধ্যায়
২৮.০৯.২০২০