অথঃ শ্রী পুলিসাসুর কথা
হীরক মুখোপাধ্যায় (১১ অক্টোবর ‘২০):- ছোটোবেলায় ‘পুলিসাসুর’ নামের বোর্ড বাঁধাই একটা গল্পের বই পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। বেশ মজাদার গল্প। পুলিসাসুর-এর প্রভাবে থানা অঞ্চলে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেতে বাধ্য হতেন। পুলিসাসুর যখন কাউকে পাকড়াও করতেন তখন তাঁর কাছ থেকে কিছু না নিয়ে ছাড়তেন না। অপরাধী হিসেবে ধরে আনা ব্যক্তি কিছু দিতে না পারলে পুলিসাসুর তাঁদের দিয়ে পিঠ চুলকে নিতেন।
তবে এখনকার এই পুলিসাসুরদের ….ভাই বলব, না অন্য কিছু বলব সেটা বুঝে পাচ্ছিনা। ‘…ভাই’ শব্দবন্ধকে কেউ আবার অশ্লীল ভাবার্থক ভেবে বসবেন না। অবশ্য ভাবলেও আমার কিছু করার নেই। আমি কোনো মতেই বুঝে পাচ্ছিনা, এরা কী সত্যি ‘দিদির ভাই’, না অন্য কিছু!
প্রকৃত ‘দিদির ভাই’ হলে কী এরা সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটে দিদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ পোড়াতে পারতেন !
পুলিসদের আজ এমনই দুরবস্থা যে মাসিক বেতনের পাশাপাশি দৈনিক ‘উৎকোচ’ নামক কামাই না থাকলে কোনো মেয়ের বাবাই এদের হাতে মেয়ে তুলে দিতেননা।
বাম জমানায় অসীম শক্তির অধিকারী এই বীরপুঙ্গবরা প্রিজন ভ্যানের ভেতরে মদ মাংস সহযোগে জনৈকা বোবা কালা মেয়েকেও ধর্ষণ করতে পিছপা হয়নি।
পুলিসের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলে রাজ্যে যখন অগ্নিগর্ভ অবস্থা তখন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-র নির্দেশ মেনে প্রথমে পুলিস তাদের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার করতে পাড়ায় পাড়ায় স্থানীয় ছেলেদের নিয়ে ফুটবল খেলার আয়োজন করেছিল।
কিন্তু এই ফুটবল খেলা পুলিসের গৌরব ফেরাতে পারছেনা দেখে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা-য় এসে এক অনুষ্ঠানে কাতর স্বরে বলেছিলেন, “এখন থেকে কোনো থানায় গিয়ে আধিকারিকদের সাহেব/স্যার বলবেন না। এরা আপনাদের ঘরের ছেলে এদের ভাই বলে সম্বোধন করবেন।”
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পুলিসদের আগেই ‘জনতার ভাই’ বানিয়ে দিয়েছিল। আমাদের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরো এক কাঠী সরেস। প্রথমবার বিধানসভা নির্বাচনে জেতার কিছু পরেই উনি যখন তাঁর পাশে অভিভাবক রূপে থাকা বিদ্বজ্জন সমাজকে দূরে সরিয়ে দিলেন, তখন তিনি বুঝেছিলেন সমাজে এর একটা বাজে প্রভাব পড়তে পারে, আর সেটা বুঝেই তিনি নিজেকে চাঁদমামা, সান্তাক্লজ-এর মতো সর্বজনীন ‘দিদি’ সাজিয়ে ফেললেন। উনি আপনার আমার বাবা মা’য়ের দিদি। আপনার, আমার এমনকি আমাদের স্ত্রী-সন্তান এমনকি ভবিষ্যত প্রজন্মেরও দিদি। স্বাভাবিক ভাবেই পুলিসেরও দিদি।
‘পুলিসের দিদি’ বা ‘দিদির ভাই’ শব্দবন্ধের জেরে যাঁদের গাত্র দেহে ফোস্কা পড়ছে, সেই ফোস্কার জ্বালা শতগুণে বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বলা যেতে পারে, কাঁধে অশোকস্তম্ভ লাগানো জনৈক পুলিস আধিকারিককে যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর হাত থেকে প্রসাদ খেয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে দেখা গেছে, তেমনই কালীপুজোর সময় মুখ্যমন্ত্রীর টালিরচালা বাড়িতে সকাল থেকে খাটাখাটনি করতেও দেখা গেছে।
আমাদের মুখ্যমন্ত্রী পুলিস অন্ত প্রাণ। বিশেষত কোলকাতা পুলিস তো তাঁর নয়নের মণি। উনি কোলকাতা পুলিসের জন্য প্রত্যেকবছর ‘জয় হে’ নামক এক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছেন। কোলকাতা পুলিসের নগরপাল রাজীবকুমারকে সিবিআই-এর যাতে ধরতে না পারে তার জন্য প্রকাশ্য রাস্তায় তিনি ধর্ণাতেও বসেছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিসের মন পাওয়ার জন্য এতকিছু করার পরেও পুলিস রাজ্য সরকারের মুখে চুনকালি দেবার জন্য ৮ অক্টোবর ভারতীয় জনতা পার্টি-র যুবমোর্চার মিছিলে ওরকম কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ করল কেনো ?
জনগণের একাংশের ধারণা, থানায় ঢুকে মুখ্যমন্ত্রীর অপরাধী ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া, থানায় ঢুকে তৃণমূলের জনৈক নেত্রীর নেতৃত্বে ভাঙচুর ও পুলিসকে নির্যাতন, ডিউটিরত অবস্থায় তৃণমূলের গুণ্ডার গুলীতে জনৈক পুলিস আধিকারিকের মৃত্যু, উর্দিপরা অবস্থায় তৃণমূল কংগ্রেস পোষিত সাকিব-এর লাথি পুলিসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও সাধারণ পুলিসকর্মীদের একাংশকে ভেতরে ভেতরে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধী বানিয়ে দিয়েছে।
আর তাই সুযোগ পেতেই, তৃণমূল কংগ্রেসের শুভাকাঙ্ক্ষী পুলিস রূপে তৃণমূল কংগ্রেস-এর চরম সর্বনাশ করতেও পিছপা হয়নি এই পুলিসেরা।
আর ঠিক সেই কারণেই, এরা সেদিন সামগ্রিকভাবে ‘পুলিসাসুর’-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল।
আমরা সবাই জানি পুরাকালে মহিষাসুর-এর সাথে ঘোরতর যুদ্ধ হয়েছিল দেবী দুর্গা-র। গত ৮ অক্টোবর রাজ্য ও কোলকাতা পুলিসের আস্ফালন দেখে মনে হচ্ছিল, বিধানসভা নির্বাচনের আগেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভেতরেই সরকার বিরোধী এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। ভবিষ্যতই বলবে কলিকালে পুলিসাসুরের সাথে কোনো দেবীর অদৃশ্য যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে কিনা !
পুলিশ তুমি যতই মারো মাইনে তোমার একশো বারো স্লোগান, আবার, শোনা যাবে কি বাংলার জনতার দরবারে ?
#PoliceTorture #BrutalTorture #KolkataPolice #KP #WestBengalPolice #WBP #YuvaMorcha #BJP_WestBengal #MamataBanerjee #CMWestBengal #Govt_Of_WB
News & Image Source : Special Bulletin