নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির দাম কমাতে না পারলে ২০২১-এ তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে পশ্চিমবঙ্গে সরকার গড়ার কোনো আশা নেই

0
1052
Vegetables
Vegetables
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:10 Minute, 8 Second

নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির দাম কমাতে না পারলে ২০২১-এ তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে পশ্চিমবঙ্গে সরকার গড়ার কোনো আশা নেই

হীরক মুখোপাধ্যায় (১১ নভেম্বর ‘২০):- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর নিজস্ব বুদ্ধিতে ‘তৃণমূল কংগ্রেস’ চলুক বা প্রশান্ত কিশোর-এর বুদ্ধিতে চলুক, দলের ভেতর যুবনেতা তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-কে মাথায় তোলা হোক বা সাংসদ ও জননেতা শুভেন্দু অধিকারী-কে বহিষ্কার করা হোক, আসল কথা হলো অবিলম্বে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির দাম কমাতে না পারলে ২০২১ সালে ‘তৃণমূল কংগ্রেস’ কোনো অবস্থাতেই পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে সরকার বানাতে পারবেনা।

মাত্র ১০ বছর পেছনে তাকালেই পশ্চিমবঙ্গবাসী দেখতে পাবেন নন্দীগ্রামের ঘটনা। শুধুমাত্র জমি হারিয়েছিলেন বলেই নন্দীগ্রামের আপামর মানুষ ক্ষুব্ধ হয়নি, ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন তাদের পেটে পা পড়ায়।
একথা তো মানতে হবে, নন্দীগ্রামে সেদিন যতলোক জমি দিতে নারাজ ছিলেন তার থেকে অনেক বেশি লোক জমি দিয়েছিলেন। সুতরাং বোঝাই যায় জমি না দেবার ঘটনা নিয়ে নন্দীগ্রাম আন্দোলন জমাট বাধেনি বা সফল হয়নি। আন্দোলন সফল হয়েছিল জমি কেন্দ্রীক মানুষদের ভবিষ্যত চিন্তার কারণে।
অতিমারী কেন্দ্রীক এই সময়েও পশ্চিমবঙ্গের এক বৃহত্তর অংশের মানুষ যখন না খেয়ে দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন তখন মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিসমন্ত্রীর গয়ংগচ্ছ মনোভাব দেখে আকাশে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন রাজ্যের বিদগ্ধ সমাজ।

বাম জমানায় রাজনৈতিক নেতাদের অসততা,অদক্ষতা তথা মাত্রাতিরিক্ত স্বজনপোষণের কারণে দীর্ঘ ৩৪ বছর উন্নয়নের বিপরীত দিকে তীব্র বেগে জুটেছিল পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনোদিন পশ্চিমবঙ্গের বুকে আনাজপাতির এরকম অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি দেখা যায়নি।

বাম জমানা থেকে আজ পর্যন্ত দেশে আলু উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম স্থান ধরে রাখলেও কোন জাদুবলে এই রাজ্যে এখন আলুর কেজি ৪০ টাকা তা দেশের কোনো অর্থশাস্ত্রীও বুঝতে পারছেননা।

পশ্চিমবঙ্গে প্রত্যেক মাসে যত পরিমাণ আলু প্রয়োজন হয়, বিভিন্ন হিমগরে এই মুহূর্তে তার প্রায় ৩ গুণ আলু মজুদ আছে। এই আলু বাজারে ছাড়লেই আলুর দাম কেজি পিছু ১০ টাকার নীচে চলে আসবে। অথচ শুধুমাত্র সরকারী সদিচ্ছার কারণে জনগণ কম খরচে আনাজ কিনতে পারছেননা।
এই মুহুর্তে সমগ্র বর্ধমান, মেদনিপুর থেকে আলুচাষীরা ৫ টাকা প্রতি কেজি দরে ফরেদের হাতে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন, অথচ সেই আলুই বাজার থেকে জনগণকে কিনতে হচ্ছে কমবেশি ৪০ টাকা দিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে মাঝের ৩৫ টাকা কোথায় যাচ্ছে ?

মুখ্যমন্ত্রী ক’মাস আগে হুঙ্কার ছেড়েছিলেন ২৫ টাকার মধ্যে বাজার থেকে আলু বিক্রি করতে হবে। কিন্তু কোথায় কী…!
দুর্নীতিবাজ নেতানেত্রী, পুলিস, আধিকারিকদের সাথে মিশতে মিশতে আজ সাধারণ মানুষ অনেক বেশি সমঝদার হয়ে উঠেছেন। তাঁরা মুখে কিছু না বললেও বোঝেন সবই।

প্রশাসনিক চ্যাংড়ামির একটা শেষ থাকা উচিত। প্রশাসনের বোঝা উচিত বিনা পয়সায় ছাতা পড়া, পোকা ধরা চাল গম দেওয়া হলেও ওটা খেতে অন্ততঃ একটা সবজি বানাতে হয়। এই গরীব রাজ্যের মানুষ এতদিন কিছু কিনতে না পারলেও অন্ততঃ আলু কিনে খেত। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকার মানুষের মুখ থেকে সেই খাবার ক্ষমতাটুকুও কেড়ে নিয়েছে। এরপর কালীঘাটে বসে যদি কেউ ভাবেন, সারা রাজ্যের লোক ওঁনার বা ওঁনাদের ক্রীতদাস তাহলে খুব ভুল হবে।

যেকোনো স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থাযর যেমন একটা প্রত্যক্ষ সুফল থাকে তেমনই একটা কুফলও থাকে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে এই কুফলগুলোই বেশি মাত্রায় পরিলক্ষিত হচ্ছে।

৫ বছর আগে বিপুল জনাদেশ নিয়ে ‘তৃণমূল কংগ্রেস’ সরকার গড়ার পর থেকেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর অদূরদর্শিতা প্রকাশ হয়ে পড়ছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে কোলকাতার বুকে বিভিন্ন দলকে নিয়ে গঠবন্ধন তৈরির প্রচেষ্টা হোক বা কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য বীমা চালু না করার অপচেষ্টাই হোক সর্বত্রই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের খামখেয়ালিপনার উদাহরণ দেখিয়ে আসছেন।

বাম জমানার মাঝামাঝি সময়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু-কে একবার সাংবাদিকরা কর্মসংস্কৃতির বিষয়ে তীর্যক প্রশ্ন করতে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “আমি কী চেয়ার টেবিলকে কাজ করতে বলব !”

বর্তমানে তৃণমূল জমানায় পরিস্থিতি এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কথা সরকারী আধিকারিকরাও শুনছেননা। শুনলে মুখ্যমন্ত্রী বলা মাত্রই পুলিসের ‘এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট’-এর কর্মীরা রাতারাতি হিমঘর খুলে ব্যবসায়ীদের স্বল্পমূল্যে আলু বাজারে বিক্রি করতে বাধ্য করতেই পারত। কিন্তু দুর্ভাগ্য সেটাও হয়নি।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্য থেকে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে পারেনি, যুবসমাজকে রোজগার দিতে পারেনি, চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের চাকরি দিতে গিয়ে সরকার নিজেই ল্যাজে গোবরে হচ্ছে, সেকেণ্ড এএনএম-দের মতো হাজার হাজার অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ী করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি, আজও রাজ্যের বিভিন্ন আদালতে ডাঁই হয়ে পড়ে থাকে মামলার কাগজ, কোনো সরকারী কার্যালয়েই একদিনে কয়েকঘণ্টার মধ্যে কোনো কাজ নিষ্পত্তি হয়না, যাঁদের পুরনো রেশনকার্ড ছিল এমন অনেক প্রকৃত রেশনকার্ডের হকদার মানুষকে নতুন ডিজিটাল রেশনকার্ড দিতে আজও ব্যর্থ ‘তৃণমূল কংগ্রেস’, এর পরেও তো আছে রেশন দুর্নীতি, আমফানের টাকা নিয়ে দুর্নীতি, উন্নয়নের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ। এর পরেও কী মানুষ আর চাইবে এই সরকারকে ?

তৃণমূল কংগ্রেস মুখে না বললেও রাজ্যের মানুষ জানেন, তৃণমূল কংগ্রেস সরকার গড়ার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবল থেকে বেঁচেছে, গ্রামের ভেতর তস্য গলিও আজ ঢালাই হয়ে গেছে, বাতিস্তম্ভে বাতিও জ্বলে, বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা সাইকেল পেয়েছে, বিয়ের বয়সের অনেক মেয়ে বিয়ে করার জন্য টাকাও পেয়েছে , কপর্দকশূন্য পরিবারের কেউ মারা গেলে কবর বা দাহসংস্কারের টাকাও হয়তো অনেকেই পেয়েছেন।
কিন্তু এটাও তো সত্য, ‘তৃণমূল কংগ্রেস’-এর সাংসদ, বিধায়ক থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে সব মন্ত্রী, আমলা, পুলিস বা আমজনতা সবাইকেই বাজার থেকে আনাজ কিনে খেতে হয়।
সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রী, সরকারী আধিকারিক বা সরকারী কর্মচারীদের নয় মাস মাইনে অনেক, কিন্তু রাজ্যের মানুষের হাতে এখন টাকা কোথায়, কটা মানুষ এখন রোজগার করতে পারছে ! এই অবস্থায় বাজারের প্রত্যেকটা আনাজ অগ্নিমূল্য হলে কজন মানুষ কিনতে পারবে ?

রাজ্যবাসীর পেট যদি ফাঁকা থাকে, তাহলে হাতে ফুল চন্দন নিয়ে কে আর তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমোর ১,৫০০ কেজির বাচ্চার আষাঢ়ে গল্প বা যৌনধর্মের বিষ্ণুমাতার উপাখ্যান শুনবে ?

About Post Author

Editor Desk

Antara Tripathy M.Sc., B.Ed. by qualification and bring 15 years of media reporting experience.. Coverred many illustarted events like, G20, ICC,MCCI,British High Commission, Bangladesh etc. She took over from the founder Editor of IBG NEWS Suman Munshi (15/Mar/2012- 09/Aug/2018 and October 2020 to 13 June 2023).
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD