করোনা স্পেশাল নির্বোধের অহংকার – জীবনের জন্য জীবিকা, না , জীবিকার জন্য জীবন
ড: পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায় ,কলকাতা, ১২ নভেম্বর ২০২০
লোকাল ট্রেন চালু হয়ে গেল।এই নিয়ে যুযুধান দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ‘দিন আনি দিন খাই’ মানুষের স্বার্থ যাঁরা দেখছিলেন,আপাতদৃষ্টিতে তাদের জয় হলো মনে হলেও যদি নিরপেক্ষ ভাবে এবং গভীরে গিয়ে বিচার করেন তাহলে দেখবেন এতে সমস্যা বাড়লো বই কমলো না।কেন এমন বলা? তার পিছনে সহজবোধ্য কারণটি হলো ট্রেন চালু হলে অফিস টাইমে জনস্রোতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ট্রেনে চড়া সোনার পাথর বাটি।
পৃথিবীর কোনো দেশ আইন প্রণয়ন করেও তা পারেনি।আর মাস্ক তো আমরা সিংহ ভাগ মানুষই পরি না।সুতরাং সে প্রসঙ্গে গেলাম না।সরকার এই নির্বোধ ভুলভাল আন্দোলনকে বেশি ঝেলবেন না বলেই ‘তোরা মরগে যা অথবা মর্গে যা’ বলে সব কিছু মেনে নিয়ে আন্দোলন থামিয়ে দিলেন।কথা প্রসঙ্গে দু চারটি প্রশ্ন আসে।সেগুলো তুলে ধরি।
●প্রথম প্রশ্ন,ট্রেন চালানো কি তাহলে একেবারেই সম্ভব নয়? উত্তর হলো নিশ্চয় সম্ভব।কিন্তু কতকগুলো ব্যাপার নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।প্রথমত, ট্রেন যে সংখ্যায় চলে,সংখ্যা করতে হবে প্রয়োজন অনুসারে তার দ্বিগুন,তিন গুন,চার গুন।
দ্বিতীয়ত, ট্রেনের যা আসন সংখ্যা তার অর্ধেক যাত্রী ট্রেনে উঠতে পারবেন।তৃতীয়ত, প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ন স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়বে।শুধু গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন গুলিতে থামবে।থামবে কেবল মানুষ নামার জন্য,ওঠার জন্য নয়। চতুর্থত, সব গুরুত্বপূর্ন স্টেশন থেকেই ট্রেন চালাতে হবে। পঞ্চমত,ট্রেনে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে।অন্যথায় ট্রেনে ওঠা যাবে না।এই প্রতিটি ব্যাপার দেখার জন্য প্রতিটি কামরায় রেল পুলিশ অথবা রেল কর্মী থাকবে।(এই ব্যাপারগুলিতে যাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও লাগবে।নতুবা এ কর্মযজ্ঞ সম্ভব নয়।)আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারগুলো দুরূহ এবং অসম্ভব মনে হলেও, রেল মন্ত্রক চাইলে এটা করে দেখাতে পারেন।তাঁরা ভাবুন।
●দ্বিতীয় প্রশ্ন:সরকারকে এই ‘ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত ‘ নিতে বাধ্য করার আন্দোলন উল্টে খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষেই আত্মঘাতী হলো না কি? উত্তর,হ্যাঁ হলো।তার কারণ,শীত কাল আসছে।এমনিতেই রোগের প্রকোপ বাড়বে।কিছু মানুষ যাত্রীদের মধ্যে থাকবেনই যাঁরা উপসর্গহীন রোগ বাহক।তাঁরা ভিড়ের মধ্যে থেকে দ্রুত অন্যের মধ্যে রোগ ছড়াবেন।তুষের আগুন থেকে দাবানল জ্বলা হবে শুধু সময়ের অপেক্ষা।গরীব মানুষ পাঁচ দিনের খাদ্য সংস্থান করতে গিয়ে চেন চক্রবৃদ্ধির গতিতে রোগ ছড়ানোর জন্য পাঁচ মাস আবার বাড়িতে বসে যাবেন।যে সমস্যা আগামী তিন মাসে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল তা কমতে আরো এক বছর লেগে গিয়ে কেঁচে গণ্ডুষ হবে।
●তৃতীয় প্রশ্ন:তাহলে উপায়?উত্তর,উপায় তো হাতের কাছেই।যারা গরীব মানুষের জন্য সরকারকে ট্রেন চালাতে বললেন,তারা আর একটু সাহসী হয়ে গলা তুলুন।সরকারকে বলুন যতদিন না সমস্যার সমাধান হয়, ততদিন দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলোর ভরণপোষণের দায়িত্ব আপনাদের।এই কারণেই আপনারা সরকারে।তাঁরা ভিড় ট্রেনে চড়ে অন্য সংস্থান করতে যেতে পারবেন না।দেখুন এখন যাঁরা আপনাদের বিরোধিতা করছেন তাঁদের সিংহভাগ সাধারণ নাগরিককেও আপনাদের পাশে পেয়ে যাবেন।নয়তো আপনাদের বিভ্রান্তির কারণে গরীব মানুষগুলোর ভুল পথে চলার বিভ্রান্তিই জুটবে,অন্য কিছু নয়।ভিয়েতনাম করে দেখিয়েছে রেশনিং কাকে বলে।আমাদের সরকারও জনমুখী হলে তা পারে।অন্যথায় সামগ্রিক জনস্বার্থে কোর্টকেই আবার না ট্রেন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হয়!●●●●●●●●●●●●
#পলাশ_বন্দ্যোপাধ্যায়১২.১১.২০২০