বৈবাহিক সূত্রে অন্য জায়গায় থাকলে মিলছেনা স্বাস্থ্য সাথী কার্ড !
হীরক মুখোপাধ্যায় (৪ ডিসেম্বর ‘২০):-বৈবাহিক সূত্রে অন্য জায়গায় বসবাস করলে মিলবেনা ‘স্বাস্থ্য সাথী’ কার্ড। গতকাল এক ঘটনাক্রমে এইরকম এক অনভিপ্রেত ঘটনা সামনে এলো।
ঘটনা স্থল উত্তর ২৪ পরগনার দক্ষিণ দমদম পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ক্যাম্প।
সকালে ক্যাম্পে গিয়ে দেখা গেছে জনৈকা চল্লিশোর্ধ হাসিখুশি মান্না (নাম পরিবর্তিত) হাপুস নয়নে কাঁদছেন।
মা মাটি মানুষ-এর সরকারের উন্নয়নের জোয়ারে যখন অতিমারীর সময়েও মানুষ মাথাপিছু বিনামূল্যে ২ কেজি পোকাধরা চাল ও ৩ কেজি গম পাচ্ছেন, তখন ওঁনার এইরকম করুণ অবস্থা কেনো এবিষযে জানতে চাইলে, হাসিখুশি মান্না কাঁদতে কাঁদতে জানান, “দাদা আমি এঁদের কথামতো রেশনকার্ড, এপিক ও আধার-এর জেরক্স কপি জমা দেওয়ার পর এঁরা বলছেন, আমার আধারকার্ড যেহেতু পূর্ব মেদিনীপুরের তাই ‘স্বাস্থ্য সাথী’ বিষয়ক আমার আবেদনপত্র নাকচ করা হলো।”
সরকারী কর্মচারীদের এইরকম বেআক্কেলে কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণের বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য-র প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে তিনি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ঢঙেই বলেছেন “হয়তো মহিলার প্রমাণপত্রে কোনো জটিলতা আছে।”
প্রতিমন্ত্রীকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, আপনার এপিক ও আধার কার্ডে কোলকাতার ঠিকানা হওয়া সত্ত্বেও আপনি অন্য জায়গা থেকে নির্বাচনে দাঁড়াতে বা মন্ত্রী হতে কোনোরকম বাঁধা না এলে এঁনার কার্ড পেতে সমস্যা কোথায়, বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি আসলে কী ‘স্বাস্থ্য সাথী’ কার্ড পাওয়া যাবেনা ? যদিও এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একথা বলতে বাঁধা নেই, শাসকদলের একশ্রেণীর নির্বোধ স্বেচ্ছাসেবী ও জনপ্রতিনিধিদের দৌরাত্মে শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ছে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্প। শাসকদলের অতিবোদ্ধা মাতব্বর নেতাকর্মীদের কলকাঠিতে ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পকে অনেকেই এখন ‘যমের দুয়ারে সরকার’ বলে কটাক্ষ করছেন।
উপরের ঘটনা প্রমাণ দিচ্ছে ‘স্বাস্থ্য সাথী’ প্রকল্পর মাধ্যমে বিদায় বেলায় মানুষের মন পেতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যগ্র হলেও, তাঁরই দলের কিছু ছদ্মশত্রু এই প্রকল্পকে ব্যর্থ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
অতিমারীর সময় মানুষ যখন স্বাধীনভাবে ভয় শূন্য হয়ে ঘরের বাইরে বেরতে ভয় পাচ্ছে, ঠিক তখন মুখ্যমন্ত্রী প্রনয়ণ করলেন তাঁর অন্যতম সাধের প্রকল্প ‘স্বাস্থ্য সাথী’।
মুখ্যমন্ত্রী এই প্রকল্প ঘোষণা করা মাত্র রাজ্যের সমস্ত মানুষ একেবারে মাগনায় এই প্রকল্প উপভোগ করার স্বপ্নে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিলেন। যদিও পরে অনেকেরই সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরচুর হয়ে যাচ্ছে।
‘দুয়ারে সরকার’ ঘোষণা শুনে অনেকই ভেবেছিলেন, এবার সরকারী কর্মী ও আধিকারিকগণ সত্যি হয়তো বাড়ির দরজায় দরজায় এসে জনগনণা করার মতো ‘স্বাস্থ্য সাথী’ বা অন্য বিষয়ে সবার নাম নথিভুক্ত করে নিয়ে যাবে। কিন্তু দেখা গেলো, অন্য সব বিষয়ের মতো এটাও মুখ্যমন্ত্রীর অপপ্রচার বা ছেলে ভুলানো স্তোকবাক্য ছিল। কোনো সরকারী কর্মচারী বা আধিকারিকগণ দরজায় দরজায় তো আসছেই না, উল্টে জনগণকে ওয়ার্ড বা গ্রামের একজায়গায় পৌঁছে সবকাজ ফেলে লাইন দিয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে।
এই পর্যন্ত হলেও নয় মেনে নেওয়া যেত, কিন্তু ক্যাম্পে গিয়ে আমজনতা অনেক ক্ষেত্রে সরকারী কর্মীদের তো দেখতেই পাচ্ছেন না, উল্টে দেখছেন শাসকদলের একশ্রেণীর মাথামোটা স্বেচ্ছাসেবীদের। এই মাতব্বররাই আবেদকের কাছ থেকে সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে তার বিনিময়ে কোনো স্মারক চিহ্ন না দিয়েই আবেদকদের বাড়ি চলে যেতে বাধ্য করছেন। সঙ্গতভাবেই রাজ্যের শিক্ষিতমহল প্রশ্ন তুলছেন, “ভবিষ্যতে সরকার যদি বলে- আপনি যে আবেদন করেছিলেন তার প্রমাণ দেখান, তাহলে এই লোকেরা কী দেখাবেন ?”
প্রসঙ্গক্রমে জেনে রাখা ভালো, এক সমীক্ষায় জানা গেছে, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের ৪৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো কোম্পানীর স্বাস্থ্য বীমার সাথে যুক্ত। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের আনুমানিক জনসংখ্যা ১০ কোটি হলে, সরকারী ঘোষণা অনুযায়ী, এমনিতেই ৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষের নাম এই প্রকল্প থেকে আগে বাদ যাবে। এর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারী ও সরকার পোষিত সংস্থার কর্মী এমনকি বৃহৎ বাণিজ্যিক সংস্থার কর্মী যাঁরা সংস্থা থেকে পৃথক ভাবে স্বাস্থ্য সুবিধা পান, কলকারখানায় কর্মরত শ্রমিকগণ যাঁরা ইএসআই-এর আওতাধীন, যে সকল সাংবাদিক মাভৈ প্রকল্পের আওতাভুক্ত তাঁরা ‘স্বাস্থ্য সাথী’-র সুবিধা পাবেননা। অর্থাৎ এমনিতেই চোখ বন্ধ করে বলা যায় এই প্রকল্প সমস্ত রাজ্যবাসীর জন্য উন্মুক্ত হলেও, এর সুবিধা রাজ্যের বেশিরভাগ জনগণই পাবেননা।
বৈবাহিক সূত্রে অন্য জায়গায় থাকলে মিলছেনা স্বাস্থ্য সাথী কার্ড আবেদনের অনুমতি !
মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ পরিবারের কর্তার অনুমতি অনুসারে যে সকল সদস্য কাজের জন্য অন্য্ স্থানে আছে তাদের ও অন্তর্ভুক্ত করা হোক । বৈধ প্রমান থাকলেই সে উপযুক্ত বলে বিবেচনা করা হোক । না হলে সর্বজন হিতের এই প্রকল্প গুণমানে ভোঁতা হয়ে যাবে ।
Photo Credit : https://swasthyasathi.gov.in/